ঢাকা: সরকারি চাকরিতে ‘কোটা ব্যবস্থা’ বন্ধ করার দাবিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একযোগে আন্দোলনে নেমেছিল বাংলাদেশের স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা। যার জেরে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন হাসিনা। তারপর পদ্মা নদী দিয়ে বাংলাদেশে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। এখন মহম্মদ ইউনুসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আর ‘বৈষম্যহীন’ বাংলাদেশে এবার সরাসরি সংঘর্ষে জড়াল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সাতটি কলেজের পড়ুয়ারা। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে ছয় মাসের মধ্যেই পট পরিবর্তন হয়ে গেল বাংলাদেশে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর দুর্ব্যবহার করেছেন, এই অভিযোগে মিছিল শুরু করেন সাতটি কলেজের পড়ুয়ারা। পাল্টা রাস্তায় নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও। রবিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষের জেরে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকার নীলক্ষেত রোড, নিউ মার্কেট, সায়েন্স ল্যাব মোড়ের মতো এলাকা। কলেজ ছাত্রীদেরও মিছিল করতে দেখা যায়।
পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে সাউন্ড গ্রেনেড ফাটায় পুলিস। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাসের শেলও। রাতের দিকে মোতায়েন করা হয় বিজিবি জওয়ানদেরও। সরকারিভাবে আহতের সংখ্যা পাঁচ বলা হলেও সূত্রে খবর, সংঘর্ষে প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যেই পড়ুয়াদের দু’পক্ষকে শান্ত করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর অনত্যম নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ। তাঁকে ঘিরে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে ফিরে যান হাসনাত।
চাপের মুখে সোমবারই ঘোষণা করা হয়েছে, ওই সাতটি কলেজ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকছে না। চলতি বছর থেকেই এই নিয়ম কার্যকর হচ্ছে। কলেজগুলির পরিচালনা নিয়ে অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এদিকে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষাগুলি স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রাজধানী ঢাকার সাতটি বড় সরকারি কলেজ আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। বছর আটেক আগে সেগুলিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিয়ে আসা হয়। তারপর থেকেই একের পর এক সমস্যা শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বদলে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছে সাতটি কলেজের পড়ুয়ারা। রবিবার বিকেলে ভর্তির পরীক্ষায় কোটা বাতিল সহ পাঁচ দফা দাবি কবে পূরণ হবে, তা জানতে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) মামুদ আহমেদের সঙ্গে কথা বলতে যান সাতটি কলেজের পড়ুয়ারা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলার সময় মেজাজ হারিয়ে ফেলেন মামুন। এরপরই মমেুনকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি তুলে রাস্তা অবরোধ করেন কলেজের পড়ুয়ারা। রাতে মামুনের বাসভবন ঘেরাওয়ের জন্য এগতে থাকে তারা। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। তারপরই শুরু হয় সংঘর্ষ।