বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: রাজ্য তথা গোটা দেশে আয়কর বাবদ যে রাজস্ব আদায় হয়, তার সিংহভাগ আসে কর্পোরেট ট্যাক্স থেকে। অর্থাৎ শিল্পক্ষেত্র বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলি যে আয় করে, তার উপর ভিত্তি করে আদায় হওয়া আয়করই রাজস্বের মূল ভিত্তি। গত আর্থিক বছরে এ রাজ্যে যে আয়কর আদায় হয়েছে, তা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে শিল্পক্ষেত্রগুলি থেকে যে আয়কর আদায় হয়েছে, তার ২০ শতাংশের বেশি এসেছে একটি মাত্র সংস্থা থেকে। সেই সংস্থার নাম আইটিসি লিমিটেড। অর্থাৎ মোট কর্পোরেট কর আদায়ের পাঁচ ভাগের একভাগেরও বেশি রাজস্ব এ রাজ্য থেকে তুলে দিয়েছে একা আইটিসি। এই সংস্থাটির আর্থিক অবস্থা বরাবরই ভালো। তা থেকে আয়কর আদায়ও হয় ভালোই। কিন্তু এবার যে সাফল্য সামনে এসেছে, তাকে তারিফ না করে পারছেন না আয়কর কর্তারাও।
ইনকাম ট্যাক্স বিভাগের অন্দরের হিসেব বলছে, গত আর্থিক বছরে দেশে মোট আয়কর আদায় হয় ১০ লক্ষ ৯৪ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে কর্পোরেট ট্যাক্স বাবদ আদায় হয় প্রায় ৬ লক্ষ ৫০ হাজার ১৭ কোটি টাকা। সাধারণ মানুষের থেকে ব্যক্তিগত আয়কর আদায় হয় প্রায় ৪ লক্ষ ৩১ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। এ তো গেল সর্বভারতীয় হিসেব। কতটা আদায় হল পশ্চিমবঙ্গে? গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত কলকাতা সার্কেল থেকে মোট আয়কর আদায় হয়েছে ৪৩ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। তার মধ্যে কর্পোরেট ট্যাক্স প্রায় ২৭ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা এবং আমজনতার ব্যক্তিগত ইনকাম ট্যাক্স প্রায় ১৫ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা কর্পোরেট ট্যাক্সের মধ্যে আইটিসি লিমিটেড অগ্রিম কর বাবদ জমা দিয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা। আয়কর দপ্তরের সূত্র বলছে, গত আর্থিক বছরের শেষ তিন মাসে, অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে আইটিসি’র তরফে আয়কর বাবদ রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। আইটিসি’র পরে জায়গা করে নিয়েছে গ্রাফাইট ইন্ডিয়া, বন্ধন ব্যাঙ্ক, ব্রিটানিয়া, রুংটা মাইনসের মতো সংস্থা।
আয়কর আদায়ের নিরিখে দেশে এবার ন’নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। আয়করের খাতায় দেশে যে ১৯টি সার্কেল আছে, তার মধ্যে কলকাতা সার্কেল অন্যতম। এই সার্কেলের আওতায় আছে পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি সিকিম এবং আন্দামান ও নিকোবর। সার্বিকভাবে ওই সার্কেলে যে আয়কর আদায় হয়েছে, আগের বছরের তুলনায় তার বৃদ্ধির হার ৮.২ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গ বা কলকাতা সার্কেলের আগে জায়গা করে নিয়েছে যথাক্রমে মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দরাবাদ, পুণে, আমেদাবাদ ও চণ্ডীগড়। কলকাতার পরে আছে যথাক্রমে কানপুর, ভোপাল, জয়পুর, কোচি, লখনউ, ভুবনেশ্বর, পাটনা, গুয়াহাটি, নাগপুর ও মিরাট। দেশে যে আয়কর আদায় হয়েছে, ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষের তুলনায় সেই বৃদ্ধির হার ১৬.৯ শতাংশ।
আয়কর দপ্তরের কর্তারা বলছেন, শিল্পের নিরিখে কর্পোরেট ট্যাক্স আদায়ে কেন্দ্রীয় সরকার সবার আগে তাকায় মহারাষ্ট্র বা দিল্লির দিকে। কারণ বড় সংস্থাগুলির প্রধান কার্যালয়ের বেশিরভাগই ওখানে। পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ এগিয়ে থাকে ঠিকই। কিন্তু কর্পোরেট ট্যাক্স আদায়ে তার সঙ্গে তুলনা চলে না অন্যান্য শিল্পবহুল রাজ্যগুলির। সেখানে দাঁড়িয়ে একা একটি সংস্থা যেভাবে ব্যবসার বহর বাড়াচ্ছে, তাতে খুশি আয়কর কর্তারা। তাঁদের কথায়, সেরা দশে কোন সংস্থা থাকবে, তা হলফ করে বলা যায়নি বিগত কয়েক বছরে। ব্যবসার রকমফেরে বারবার বদলে গিয়েছে সেই তালিকা। তবে সাম্প্রতিককালে প্রথম স্থান থেকে আইটিসি’কে সরাতে পারেনি কেউই। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষের সেরা ১০টি সংস্থা গতবার তাদের স্থান অটুট রাখতে পারেনি। ব্যতিক্রম সেই আইটিসি।



আয়করে সেরা ১০ (টাকায়)

আইটিসি টিমিটেড ৫৮৪৫ কোটি
গ্রাফাইট ইন্ডিয়া ১৫০০ কোটি
বন্ধন ব্যাঙ্ক ১০৭৪ কোটি
ব্রিটানিয়া ৫৮৯ কোটি
রুংটা মাইনস ৪২৪ কোটি
রেকিট বেঙ্গিসার ৪১৭ কোটি
এক্সাইড ইন্ডাস্ট্রিজ ৩৬৩ কোটি
ইস্টার্ন কোল্ডফিল্ডস ৩১৫ কোটি
রুংটা সনস ৩১৫
বার্জার পেইন্টস ২৪৮ কোটি