সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি, ১২ জুলাই: রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেস এবং আঞ্চলিক দলের অন্দরে বিজেপির হানায় রীতিমতো ত্রাহি ত্রাহি পরিস্থিতি। একা রাহুল গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী নয়, প্রায় প্রতিটি আঞ্চলিক দলের নেতানেত্রীরাই আতঙ্কে রয়েছেন। কারণ নিয়ম করে প্রতিদিন বিজেপি দল ভাঙাচ্ছে। সবথেকে বড় আশঙ্কায় রয়েছেন চন্দ্রবাবু নাইডু। তাঁর দল থেকে গত মাসেই ৪ জন রাজ্যসভার এমপি তেলুগু দেশম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। এবার শুরু হয়েছে বিধায়ক ও নেতাদের যোগদান। গত ৪৮ ঘন্টায় কখনও বিধায়ক,কখনও প্রাক্তন বিধায়ক, কখনও দলের মুখপাত্ররা একে একে চন্দ্রবাবুকে ছেড়ে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। তাই চন্দ্রবাবু নাইডুর এখন দল ধরে রাখাই বড় সমস্যা হয়েছে। আজ তাঁর দলের প্রভাবশালী দুই নেতা বলেছেন, আগামীদিনে তেলুগু দেশম বিজেপিতে মিশে যাবে। সেটাই সঠিক পদক্ষেপ হবে। কারণ নরেন্দ্র মোদি কেন্দ্রে এবং রাজ্যে বিজেপির নেতা যদি হন চন্দ্রবাবু, তাহলে এই জুটিকে কেউ হারাতে পারবে না। বস্তুত লোকসভায় এবার চন্দ্রবাবু নাইডুর আসন সংখ্যা মাত্র ৩। রাজ্যসভায় ৪ জন এমপি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর রয়েছেন মাত্র একজন। কর্ণাটক থেকে গোয়া। দলে দলে কংগ্রেস বিধায়করা যোগ দিয়ে চলেছেন বিজেপিতে।
বিজেপির আগামী টার্গেট রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশ। কারণ ওই দুই রাজ্যেও কংগ্রেসের সরকার কার্যত সুতোয় ঝুলছে। সামান্য কয়েকজন বিধায়কের দলবদ঩ল হলেই ওই দুই সরকারও দখল করে নেবে বিজেপি। বস্তুত শুধুই রাজ্যে রাজ্যে সরকার দখল নয়। বিজেপির মূল রণকৌশল হল রাজ্যসভার সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যবস্থা আগাম পাকা করে নেওয়া। কারণ রাজ্যসভায় গরিষ্ঠতা অর্জনই নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের এখন প্রধান টার্গেট। সরকারিভাবে বিজেপি এককভাবে ২০২১ সালে সম্ভবত গরিষ্ঠ হয়ে যাবে। কিন্তু তার আগেই এনডিএ জোট হিসাবেও যাতে গরিষ্ঠতা চলে আসে সেই লক্ষ্যেই বিজেপি মরিয়া হয়েছে। রাজ্যসভায় বিজেপি ও সহযোগী দল মিলিয়ে এখন ১১৬ জন এমপি রয়েছেন। গরিষ্ঠতার জন্য দরকার ১২৪। বিজেপি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ওড়িশায় রাজ্যসভা ভোটে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিজু জনতা দলের সঙ্গে বিজেপির আলোচনা চলছে। বিজু জনতা দল সম্ভবত বিজেপি প্রার্থীকেই সমর্থন করবে। ২০২১ সালের আগেই রাজ্যে রাজ্যে আরও বেশি সংখ্যক বিধায়কের সমর্থন তৈরি রাখতেই এই আগ্রাসী উদ্যোগ। সেই কারণেই প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই দেখা যাচ্ছে বিজেপিতে অন্য দল ছেড়ে যোগ দেওয়ার জন্য লাইন পড়েছে।
শুধুই ঩তেলুগু দেশম নয়, বিজেপি হাত বাড়িয়েছে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির দিকেও। সেখান থেকেও দুজন বিধায়ক বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তিন তালাক বিল, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের মতো যে বিলে কোনওভাবেই বিরোধীদের সমর্থন পাওয়া যাবে না এবং বিলগুলি পাশ হচ্ছেই না, সেই বিল পাশ করানোর জন্য রাজ্যসভায় গরিষ্ঠতা চাই। আর এখন বিজু জনতা দল, জগন্মোহন রেড্ডি, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতিকে পাশে বিজেপি পাবেই ধরে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অমিত শাহের আসল লক্ষ্য একক গরিষ্ঠতা। গোয়া কংগ্রেসের সভাপতি নিজেই আজ বলেছেন, কংগ্রেস নেতৃত্ব সঙ্কটে ভুগছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসা মোটেই সহজ নয়।