বেশি বন্ধু-বান্ধব রাখা ঠিক হবে না। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য আসবে। বিবাহ যোগ আছে। কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন ... বিশদ
বাড়ির সামনের মাঠে একটি মঞ্চ তৈরি করে সেখানে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ওই মাঠের চারপাশে ‘পাড়ার ছেলে’ শহিদ বাবলুকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন হাজার হাজার মানুষ। ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী, বিধায়ক ও পুলিসের পদস্থ কর্তারা। বাবলু সাঁতরার কফিনবন্দি দেহ দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী মিতা সাঁতরা, মা বনলতা সাঁতরা ও সাত বছরের মেয়ে পিয়াল। জেলা পুলিসের পক্ষ থেকে গান স্যালুট দিয়ে এই বীর যোদ্ধাকে সম্মান জানানো হয়। এদিনই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
যেভাবে এলাকার মানুষ এই শহিদ জওয়ানের জন্য সারাদিন অপেক্ষা করলেন তাতেই স্পষ্ট, এলাকায় কতটা জনপ্রিয় ছিলেন আধা সামরিক বাহিনীর এই জওয়ান। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাবলুবাবুর মৃত্যুর খবর পান তাঁর স্ত্রী মিতা সাঁতরা। তারপর থেকেই মেয়েকে নিয়ে ঘরবন্দি হয়েছিলেন তিনি। কারও সঙ্গে কথা বলেননি। এদিন অবশ্য সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলেছেন তিনি। তিনি বলেন, আমি যা শুনেছি, তাতে কনভয়ের নিরাপত্তা ঠিক ছিল না। তার জন্যই এই হামলা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে যা করা দরকার ছিল, তা করা হয়নি বলেই আমি শুনেছি। তবে কাশ্মীরে শান্তি ফেরাতে যুদ্ধ যে কোনও রাস্তা নয়, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, এখন এপারের মায়েদের কোল খালি হচ্ছে, যুদ্ধ হলে দু’পারেই আরও তরতাজা প্রাণ চলে যাবে। আমি মনে করি, যুদ্ধ কোনও রাস্তা নয়। দরকার, এলাকায় শান্তি ফেরানো।
বৃহস্পতিবার রাতে পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার খবর পাওয়ার পর থেকেই হাওড়ার বাউড়িয়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। শুক্রবার দিনভর এলাকার লোকজন খবর নিয়েছেন, কখন বাবলু সাঁতরার কফিনবন্দি দেহ গ্রামে পৌঁছবে। জেলা প্রশাসনকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানানো হয়, শুক্রবার সকাল ৯টায় বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে শহিদের কফিনবন্দি দেহ কলকাতায় আসবে। কিন্তু, সেই দেহ এসে পৌঁছয় বিকেলে। তারপর সড়কপথে তা নিয়ে যাওয়া হয় বাউড়িয়ার চককাশি গ্রামে। সকাল থেকেই এলাকার মানুষ এখানে অপেক্ষা করছিলেন। বিকেল থেকেই সেখানে অপেক্ষা করছিলেন মা বনলতাদেবী, স্ত্রী মিতা দেবী ও মেয়ে পিয়াল। আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকেও হাজার হাজার মানুষ এখানে এসে ভিড় জমিয়েছিলেন। বাড়ির ছাদ ও বারান্দাগুলি ছিল ভিড়ে ঠাসা। শহিদকে শেষবারের মতো দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা।
অবশেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ বাবলুবাবুর কফিনবন্দি দেহ গ্রামে পৌঁছয়। তখন চারদিকে শুধুই কান্নার রোল। স্ত্রী মিতা দেবী স্বামীর কফিনের উপরই খুলে দেন তাঁর হাতের শাঁখা। মা বনলতাদেবী কফিনের উপর উপুর হয়ে কাঁদছিলেন। পাশে দাঁড়িয়ে হাপুস নয়নে কেঁদে চলেছে ছোট্ট পিয়াল। উপস্থিত হাজারো মানুষের চোখ বেয়েও নেমে আসে লোনা জনের ধারা। বীর শহিদকে শ্রদ্ধা জানানোর পালা শেষ হলে খোলা আকাশে গর্জে ওঠে পুলিসের বন্দুক। গান স্যালুটের মধ্যে দিয়েই শেষ বিদায় জানানো হয় শহিদ বাবলু সাঁতরাকে। সেই সময় উপস্থিত মানুষের গলায় শোনা যায় একটাই স্লোগান, ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ।’