বেশি বন্ধু-বান্ধব রাখা ঠিক হবে না। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য আসবে। বিবাহ যোগ আছে। কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন ... বিশদ
সোভিয়েতও একই ভুল করে। আন্তঃদলীয় অভ্যুত্থানের পর তারা আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠিয়েছিল। সোভিয়েতরা হাফিজুল্লাহ আমিনকে নিয়ে চিন্তায় ছিল। তিনি ১৯৭৮ সালের নূর মহম্মদ তারাকিকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে লিউনিদ ব্রেজনেভ আফগানিস্তানে সেনা মোতায়েন করেন। সোভিয়েতরা আরেকটি অভ্যুত্থান করেছিল। তারা আমিনকে হত্যা করে বাবরাক কারমালকে স্থলাভিষিক্ত করেছিল। মস্কোর বশংবদ কারমাল হন প্রেসিডেন্ট।
ভিয়েতনাম যুদ্ধে পরাজয় ও ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর ইরান হারানোর পর আমেরিকানরা আফগানিস্তানে সোভিয়েত হস্তক্ষেপকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে। তারা মুজাহিদিনদের সমর্থন করতে শুরু করে। মুসলিমবিশ্বে সমাজতন্ত্রের বিস্তার নিয়ে উদ্বিগ্ন পাকিস্তান ও সৌদি আরবের সাহায্য নিয়ে তারা কমিউনিস্ট সরকার ও তাদের সোভিয়েত সমর্থক উভয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকে। এক দশক পর সোভিয়েত বুঝতে পারে, দখলদারিত্ব টিকবে না। তারা নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়।
আমেরিকা ২০০১ সালে আফগানিস্তানে তালিবান শাসকদের উপর হামলা চালানোর সময় প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেছিলেন, বিশ্বের প্রতিটি সন্ত্রাসী গ্রুপকে বের করে তাদের থামানো ও পরাজিত না করা পর্যন্ত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ বন্ধ হবে না। তালিকাটি দীর্ঘ। মার্কিন সেনারা সহজেই তালিবানকে পরাজিত করে। তারপর হামিদ কারজাইকে প্রেসিডেন্ট করার মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করে। ১৭ বছরের যুদ্ধের পর যুদ্ধ এখনও থামেনি। ২০০৯ সাল থেকে আমেরিকা যুদ্ধে ব্যয় করেছে প্রায় ৮৭৭ বিলিয়ন ডলার। তারা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে তাদের অন্তত দুই হাজার সেনাকে হারিয়েছে। আফগানিস্তানে অভিযান চালিয়ে কী পেয়েছে আমেরিকা? ২০০১ সালে তালিবান পক্ষ পিছু হটে গিয়েছিল। তারা এখন ফিরে এসেছে। হিসেব বলছে, তালিবান এখন আফগানিস্তানের অর্ধেক এলাকার নিয়ন্ত্রণ করছে। পার্বত্য এলাকার বেশির ভাগই তাদের হাতে। আর পূর্ব দিকে ইসলামিক স্টেট তাদের অবস্থান জোরদার করছে। আর সরকার ভয়াবহ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি আমেরিকান সেনাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে চান। অবশ্য তারপরও তিনি তালিবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জোরদার করতে ২০১৭ সালে আফগানিস্তানে সেনা বাড়িয়েছিলেন। এর পর থেকে আফগানিস্তানে আমেরিকা বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু তালিবানের অগ্রযাত্রা রুখতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তালিবান তাদের আধিপত্য বাড়িয়েই চলেছে।
প্রশ্ন হল, এরপর কী হবে? আমেরিকা বলছে, তারা তালিবানের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছে যে গ্রুপটি আফগানিস্তানে জঙ্গি গ্রুপকে নিরাপদ আশ্রয় দেবে না। যুদ্ধবিরতি ও আন্তঃআফগান আলোচনার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু বাস্তবতা হল, তালিবানের কাছে ইতিমধ্যেই অনেক কিছু ছেড়ে দিয়েছে আমেরিকা। তালিবান বলেছে, তারা আফগান প্রশাসনের সাথে কথা বলবে না, তারা আফগান সরকারকে বৈধ মনে করে না। আমেরিকানরা তা মেনে নিয়ে তালিবানের সাথে সরাসরি আলোচনা করেছে। তালিবান শক্তিশালী অবস্থানে থেকে আলোচনা চালাচ্ছে। তালিবানের ভবিষ্যৎ ভূমিকা সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনও সমঝোতা না করেই আমেরিকা সৈন্য প্রত্যাহারে রাজি হয়েছে। এতেই স্পষ্ট, আমেরিকা যুদ্ধে হেরে গিয়েছে এবং তারা এখন আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। যেকোনও মূল্যে।
এখন সবাই ধরেই নিয়েছে, আমেরিকার দিন শেষ। তালিবানের কাবুলের মসনদে বসা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
ছবি নাকি কথা বলে। যদি তাই হয়, তবে ব্রিটিশদের আফগান যুদ্ধে পরাজয়ের কাহিনীর একটি ছবি না বলা অনেক কথাই বলে দেয়। ছবিটি এঁকেছিলেন এলিজাবেথ বাটলার। তাতে প্রথম ইঙ্গো-আফগান যুদ্ধের (১৮৩৯-১৮৪২) একটি খণ্ডচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ১৮৪২ সালে ঘোড়ার পিঠে করে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল অফিসার উইলিয়াম ব্রাইডনের কাবুল থেকে জালালাবাদ পৌঁছানোর কথা এখানে তুলে ধরা হয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ব্রাইডন আহত হয়েছেন, তার ঘোড়াটির দম ফুরিয়ে আসছে। ১৬ হাজার সেনার মধ্যে শুধু তিনিই বেঁচেছিলেন। এর ১৩০ বছর পর সোভিয়েত ইউনিয়ন তার অনুগত দেশ আফগানিস্তানে হামলা চালায়। একটি দশক শেষ হওয়ার আগেই সোভিয়েত ইউনিয়নকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করতে হয়। তারপর ২০০১ সালে সোভিয়েত-পরবর্তী বিশ্বের একমাত্র শক্তি আমেরিকা তার ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শুরু করতে আফগানিস্তানে সেনা পাঠায়। এখন ১৭ বছরের যুদ্ধের পর আমেরিকা ও তালিবান নীতিগতভাবে শান্তির অবস্থানে পৌঁছেছে। এতে আমেরিকানরা তাদের মুখ রক্ষা করতে পারবে বটে, কিন্তু ইতিহাসের কথাই অনুরণিত হচ্ছে তাতে।