বেশি বন্ধু-বান্ধব রাখা ঠিক হবে না। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য আসবে। বিবাহ যোগ আছে। কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন ... বিশদ
শুধু তাই নয়, গত ডিসেম্বরে বাড়িতে এসে প্রতিবেশীদের সঙ্গে গল্প প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, আগামী বছরই তিনি অবসর নেবেন। তারপর গ্রামের বাড়িতেই থাকবেন। ছোট থেকেই ভালো ভলিবল খেলতেন বাবলু। পাড়ার ক্লাবে ভলিবল প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথাও তিনি বন্ধুদের জানিয়েছিলেন। কিন্তু, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কাশ্মীর থেকে যখন জঙ্গিদের হাতে তাঁর শহিদ হওয়ার খবর গ্রামে পৌঁছল, তখন সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল। এদিন প্রিয় বন্ধুর বাড়িতে এসে কিছুতেই কান্না ধরে রাখতে পারছিলেন না চিন্ময়বাবু। তিনি বলেন, বুধবার রাতেও শেষ কথা হয়েছিল। তখনও ভাবতে পারিনি, ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে।
পশ্চিম বাউড়িয়ার চককাশী গ্রামে চার বোন ও দুই ভাই নিয়ে সংসার বাবলুর। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন। মা খুব কষ্ট করে তাঁদের বড় করেন। ছোটবেলায় মাছ বিক্রি করে সংসার চালানোর কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯৯৯ সালে প্রথমবার সিআরপিএফে যোগ দেওয়ার জন্য পরীক্ষা দেন। কিন্তু, বয়স মাত্র ১ দিন কম থাকায় সেবার তিনি আধা সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে পারেননি। ফের ২০০১ সালে তিনি সিআরপিএফে যোগ দেওয়ার পরীক্ষা দেন। সেবছরই চাকরি পান।
চককাশী গ্রামে পাকা রাস্তা থেকে কিছুটা মাটির রাস্তা দিয়ে নেমে গেলেই দেখা যাবে একটি টালির চালার ছোট্ট বাড়ি। সেটিই তাঁদের পুরনো বাড়ি। পাশেই দোতলা পাকা বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। সবে প্লাস্টার হয়েছে, তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আগামী ৩ মার্চ ফিরে এসে ওই বাড়িই রং করানোর কথা ছিল তাঁর। কিন্তু, কাশ্মীরে জঙ্গি হানায় সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল গোটা পরিবারের। স্ত্রী ও সাত বছরের একটি মেয়ে আছে তাঁর। বৃহস্পতিবার রাতে কাশ্মীরে তাঁর এক সহকর্মীর কাছ থেকে বাবলুবাবুর মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই ওই ঘরেই ঢুকে গিয়েছেন স্ত্রী মিতা সাঁতরা ও সাত বছরের মেয়ে পিয়াল। কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। পাশের মাটির বাড়িতে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছেন তাঁর মা বনলতা সাঁতরা। মাঝে মধ্যে সংজ্ঞাও হারিয়ে ফেলছেন।
শুধুই কেঁদে কেঁদে বলে যাচ্ছেন, আর কত প্রাণ যাবে? কবে সরকার এই জঙ্গিদের মোকাবিলা করবে? নাকি শুধুই আমাদের মতো মায়ের কোল খালি হবে, আর সরকার হাত গুটিয়ে থাকবে?
৬ মাস আগেই বাবলু শ্রীনগর বিমানবন্দরে পোস্টিং পান। তারপর প্রশিক্ষণের জন্য হিমাচল প্রদেশ গিয়েছিলেন। এরই মধ্যে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে শ্রীনগর ঘুরিয়েও এনেছিলেন। বলেছিলেন, অবসরের পর দেশের অন্য প্রান্তও ঘুরিয়ে নিয়ে আসবেন। কিন্তু, সাত বছরের এই ছোট্ট পিয়াল শুক্রবার ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে রয়েছে। কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলেও কোনও উত্তর দিচ্ছে না। স্ত্রীও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। প্রতিবেশীরা স্ত্রীকে কথা বলানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
এদিন সকাল থেকেই এলাকার লোকজন ভিড় জমান বাবলুবাবুর বাড়ির সামনে। সামনের ক্লাবেও টাঙিয়ে দেওয়া হয় কালো পতাকা। বাবলুবাবুর নতুন তৈরি বাড়ি একাধিক জাতীয় পতাকা দিয়ে কার্যত মুড়িয়ে দেওয়া হয়। বাড়ির উঠোনে উর্দি পরা বাবলুর একটি ছবি রাখা হয়েছিল। গ্রামের লোকজনের বক্তব্য, যতক্ষণ না পাকিস্তানে ঢুকে ভারত পালটা হামলা করে জঙ্গি নিকেশ করবে, ততক্ষণ বাবলু সহ বাকি শহিদদের আত্মার শান্তি হবে না।