নয়াদিল্লি, ১৬ ফেব্রুয়ারি: উপত্যকার স্থানীয় যুবকদের আত্মঘাতী জঙ্গি হিসেবে ব্যবহার ও বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে হামলার ছক, এই দুই বিষয় বড় মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়াল নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে। বিশেষ করে পুলওয়ামা হামলার পর জঙ্গি সংগঠনগুলির কৌশল বদলের বিষয়টি এখন জলের মতো পরিষ্কার। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিসের এক প্রাক্তন ডিজির বক্তব্য, স্থানীয় ধর্মীয় চিন্তাভাবনার জায়গা থেকেই কাশ্মীরের মানুষ সাধারণত আত্মঘাতী হামলা থেকে দূরে থাকে। অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের থেকে তাদের ধর্মীয় মতাদর্শে ফারাক রয়েছে। ইসলামে দু’টি ভাবধারা রয়েছে। প্রথম ভাবধারা অনুযায়ী, আত্মহত্যা ‘হারাম’। কাশ্মীরের মানুষ সর্বদা এই মতাদর্শই মেনে চলে। আর দ্বিতীয় ভাবধারার উৎপত্তি পশ্চিম এশিয়ায়। সেই মত অনুযায়ী, জেহাদের জন্য আত্মহত্যা ‘হারাম’ নয়। কারণ আত্মঘাতী হামলাকারী ইসলামের যোদ্ধা। এই মতাদর্শই পরে সিরিয়া, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাক্তন এই পুলিসকর্তার মতে, দ্বিতীয় এই মতাদর্শ যদি কাশ্মীরের মাটিতেও গোড়া শক্ত করতে শুরু করে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই তা বড় উদ্বেগের বিষয়। এর অর্থ, পুলওয়ামার হামলাকারীকে যে বা যারা অনুপ্রাণিত করেছিল, তারা উপত্যকার অন্য যুবকদেরও একইভাবে মগজ ধোলাই দিতে সক্ষম হবে।
পুলওয়ামা হামলার প্রেক্ষিতে কাশ্মীরের অতীত বিভিন্ন হামলার প্রসঙ্গ টেনে আনেন প্রাক্তন ডিজি। এই প্রাক্তন আইপিএস অফিসার বলেন, ২০০০ সালে বাদামিবাগ ক্যান্টনমেন্ট হামলায় যুক্ত ছিল ১৭ বছরের এক স্থানীয় কাশ্মীরি কিশোর। প্রায় একইভাবে বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে হামলা চালিয়েছিল সে। কিন্তু আত্মঘাতী হামলা যাকে বলে, ওই ঘটনা বাস্তবে তা ছিল না। স্থানীয় ওই কিশোরের প্রাথমিক কাজ ছিল বিস্ফোরক বোঝাই গাড়িটি সেখানে পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু গেটে যখন গাড়িটিতে তল্লাশি শুরু হয়, তখন ওই কিশোর ভয় পেয়ে পালানোর চেষ্টা করে। সেই সময় দূরে দাঁড়িয়ে থাকা তার হ্যান্ডেলার গাড়ি বোমার রিমোট চালিত ট্রিগার টিপে দিয়েছিল। জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিন এইভাবে আইইডি বিস্ফোরণ থেকে দূরে থাকে। কারণ এর ফলে সাধারণ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কাও থেকে যায়। আত্মঘাতী হামলার এই পদ্ধতিকে গুরুত্ব দেয় জয়েশ-ই-মহম্মদ। কারণ মাসুদ আজহারের সংগঠনের নজর সব সময় বড় ক্ষয়ক্ষতি চালানোর দিকে থাকে। তবে কাশ্মীরিরা আত্মহত্যাকে ‘হারাম’ বলে মনে করায় জয়েশ এতদিন এই কাজে পাকিস্তানি জঙ্গিদের ব্যবহার করত। স্থানীয় জঙ্গিদের কাজ ছিল অনুপ্রবেশকারী পাক জঙ্গিদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করা। অর্থাৎ হামলার যাবতীয় ক্ষেত্র তৈরি রাখত স্থানীয় জঙ্গিরা। সীমান্ত টপকে আসার পর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করত পাক জঙ্গিরা। পুলওয়ামা হামলার আগে কাশ্মীরের সব আত্মঘাতী বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছে। তা সে ২০০১ সালে বিধানসভা ভবনের বিস্ফোরণ হোক বা উরি ও পাঠানকোটের ঘটনাই হোক। হামলা কার্যকর করেছিল পাক জঙ্গিরা। কাশ্মীরি জঙ্গিরা প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা বা ওই পাক জঙ্গিদের সুনির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেওয়ার কাজ চালিয়েছে। প্রাক্তন ডিজির পাশাপাশি একই আশঙ্কা অন্য পুলিসকর্তাদেরও। তাঁদের বক্তব্য, জয়েশ যদি আত্মঘাতী হামলার কাজে স্থানীয় যুবকদের ব্যবহার করতে শুরু করে, তাহলে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। কারণ পুলওয়ামা হামলার উদাহরণ সামনে রেখে তা কাশ্মীরের আরও যুবককে এইভাবে ব্যবহার করার জন্য মগজ ধোলাই দিতে শুরু করবে। পাশাপাশি জম্মু কাশ্মীরের হিংসাকে স্থানীয় সন্ত্রাস বলে আরও বেশি করে প্রচার করার সুযোগ পেয়ে যাবে পাকিস্তান। অন্য একটি বিষয়ও নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। পুলিসের রেকর্ড অনুযায়ী, পুলওয়ামার হামলাকারী আদিল আহমেদ দার ‘সি’ ক্যাটেগরির জঙ্গি ছিল। ‘এ প্লাস প্লাস’ ক্যাটেগরির মতো জঙ্গিদের তুলনায় এই ‘সি’ ক্যাটেগরির জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মে যুক্ত থাকার অভিযোগ কম থাকে। অর্থাৎ নজরদারি এড়াতে নিচুতলার জঙ্গিকে এরকম বড় ধরনের হামলার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এই নয়া কৌশলও ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের।

১. গ্রাউন্ড স্ট্রাইক: ২০১৬ সালের মতো সার্জিক্যাল স্ট্রাইক। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ রেখা বেরিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অঞ্চল দখলে নেওয়ার পদক্ষেপ।
২. স্ট্যান্ড-অফ স্ট্রাইক: পাক সেনাঘাঁটি, জঙ্গি শিবির, লঞ্চ প্যাড ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলিকে লং রেঞ্জ আর্টিলারি গান, ৯০ কিমি পাল্লার স্মার্চ মাল্টিপল-লঞ্চ রকেট সিস্টেম ও ব্রাহ্মস সুপারসনিক ক্রজ মিসাইলের মাধ্যমে নিশানা বানানো।
৩. লিমিটেড এয়ার স্ট্রাইক: পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি ঘাঁটি ও লঞ্চ প্যাডগুলি গুঁড়িয়ে দিতে মিরেজ-২০০০, জাগুয়ার ও সুখোই-৩০এমকেআই ব্যবহার করা।