পঠন-পাঠনে আগ্রহ বাড়লেও মন চঞ্চল থাকবে। কোনও হিতৈষী দ্বারা উপকৃত হবার সম্ভাবনা। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
অয়ন গঙ্গোপাধ্যায়: আল্পস পর্বতমালায় অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে এই গ্রীষ্মের ছুটিতে চলুন সুইজারল্যান্ড। প্রকৃতির স্বপ্নলোক ছবির মতো সুন্দর ইউরোপের সুইজারল্যান্ড দেশ দর্শনের সুপ্ত বাসনা সব পর্যটকদের মনের কোণে লুকিয়ে থাকে। ঋতুভেদে রূপ পাল্টায় এখানকার প্রকৃতি। তবে গ্রীষ্মের মরশুম এই দেশ ভ্রমণের সেরা সময়। গ্রীষ্মেও শীতের চাদরে মোড়া থাকে সুইজারল্যান্ড। ফুলে-ফুলে ভরে যায় পাহাড়ের ঢাল, উপত্যকা, হ্রদের তীর। এই দেশে অনেক দর্শনীয় স্থান। তার থেকে বাছাই করে সেরা গন্তব্যগুলো দিন সাতেকের ছোট সফরসূচিতে অনায়াসেই ঘুরে আসা যায়।
দিল্লি থেকে সুইস এয়ারের বিমান যাচ্ছে সরাসরি জুরিখ। ঘণ্টা সাতেকের এই বিমানযাত্রার শেষে পৌঁছবেন সুইজারল্যান্ডের পর্যটক-প্রিয় শহর জুরিখ। পাহাড় ঘেরা সাজানো শহরটার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে জুরিখ হ্রদ। শহরের মধ্যেই এর অবস্থান। জলে ভেসে বেড়ানোর জন্য রয়েছে নানা ধরনের বোট ক্রুজ। শহরে দেখবেন ফ্রউমুনস্টার চার্চ, গ্রসমুনস্টার চার্চ, বাহানফস্ট্রাসে শপিং স্ট্রিট, জুরিখ জুলজিক্যাল গার্ডেন। একদিনেই শহরটা ঘুরে নেওয়া যায়। শহরে একাধিক সুইস ঘড়ি আর বিখ্যাত সুইস চকোলেটের দোকান রয়েছে। এখানকার লিন্ডট কোম্পানির চকোলেটের স্বাদ ও বৈচিত্র্য অতুলনীয়। সুইজারল্যান্ডের সৌন্দর্যময় প্রকৃতির প্রায় সবটাই জড়ো হয়ে রয়েছে দেশের মধ্যভাগে। এই অংশেই রয়েছে আল্পস পর্বতমালার ঘেরাটোপে বন্দি অনবদ্য সব দর্শনীয় স্থান। জুরিখ থেকে পথ গিয়েছে ১০৫ কিলোমিটার দূরের এঞ্জেলবার্গ। এই যাত্রাপথের দু’পাশে ছড়িয়ে রয়েছে পাহাড়ি সৌন্দর্যের মায়াবী ক্যানভাস। জুরিখ থেকে ট্রেনও আসছে এঞ্জেলবার্গ। এক্ষেত্রে ট্রেন বদলাতে হবে লুসার্নে। পাহাড়, উপত্যকা পেরিয়ে এই রেলসফরের অভিজ্ঞতাও মনে রাখার মতো। মাউন্ট টিটলিসের পাদদেশে অপরূপ এক গঞ্জ এঞ্জেলবার্গ। পাহাড়ের ঢালে ঢেউ খেলানো সবুজ ঘাসের গালিচা পাতা। তারই বুকে ছায়া মেলেছে দীর্ঘকায় অ্যালপাইন গাছগাছালি। পুরো জনপদটা ঠিক যেন পিকচার পোস্ট কার্ড। পায়ে হেঁটে দেখে নিন বেনেডিকটাইন মনাস্ট্রি, হেরিটেজ ফোক মিউজিয়াম, ট্রুবসে হ্রদ, চিজ ফ্যাক্টরি। এঞ্জেলবার্গ থেকে কেবলকার চেপে পৌঁছবেন মাউন্ট টিটলিস হিমশৃঙ্গের কোলে। কেবলকার থামবে বরফের দুনিয়া টপ স্টেশনে। সেখানে হাতের নাগালেই টিটলিস হিমশৃঙ্গ। বরফে ঢাকা হিমবাহের উপর রয়েছে গ্লেসিয়ার পার্ক। এছাড়াও এখানে অন্য আকর্ষণ স্নো ব্রিজ, আইস ফ্লায়ার, চেয়ার লিফট, গ্লেসিয়ার গ্রোটো বরফ গুহা। এই বরফ গুহায় রয়েছে বরফের তৈরি নানা শিল্পকর্ম। উপর থেকে টিটলিস সহ আল্পসের অন্যান্য হিমশৃঙ্গরাজি দৃশ্যমান। এই অধিক উচ্চতায় রয়েছে ওয়েদার রিসার্চ সেন্টার। টপ স্টেশনে রেস্তরাঁ, গিফট শপও রয়েছে।
এঞ্জেলবার্গ থেকে চলুন ৮৬ কিলোমিটার দূরের ইন্টারলাকেন। এই পথটা গাড়ি বা বাসে যেতে হবে। পাহাড়ি পথযাত্রার শেষে পৌঁছবেন প্রকৃতির খেলাঘর এক অনিন্দ্যসুন্দর জনপদ ইন্টারলাকেন। চারপাশে ঘিরে আছে পাহাড়ের প্রাচীর। তার ফাঁকফোঁকড় দিয়ে উঁকি মারছে শ্বেতশুভ্র হিমশৃঙ্গ। এর মাঝখানে ছড়িয়ে আছে বিস্তৃত সমতল ক্ষেত্র। যার বুকে জেগে রয়েছে দুই যমজ হ্রদ ব্রিয়েনজ আর সুন। এমনই মায়াবী প্রকৃতির সান্নিধ্যে গড়ে উঠেছে ইন্টারলাকেন। প্রথম দর্শনেই এই পর্যটন কেন্দ্রের প্রেমে পড়ে যাবেন। পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়াতে পারেন অচেনা গ্রাম্য পথে। এখানে রাত কাটিয়ে দেখে নিন ইয়ুংফ্রাউ পার্ক, চার্চ, শপিং স্ট্রিট। মাউন্টেন টয়ট্রেনে চেপে ঘুরে আসা যায় পাহাড়ের উপর সিনিগ প্ল্যাটে, হার্ভার কুলম থেকে। এঞ্জেলবার্গ, ইন্টারলাকেন এই দুই জায়গায় থাকার জন্য হোটেল, হোম স্টে, রিসর্ট রয়েছে।
ইন্টারলাকেন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের জন্যও বিখ্যাত। ট্রেকিং, হাইকিং, প্যারাগ্লাইডিং হয় এখানে। হ্রদের জলে বোটিং করতে পারেন। এখান থেকেই দিনে দিনে ঘুরে আসা যায় এই অঞ্চলের সব থেকে আকর্ষক দৃষ্টিনন্দন গন্তব্য ইয়ুংফ্রাউ ইয়ক থেকে। ইন্টারলাকেন থেকে প্রথমে ট্রেন বা বাসে চলুন ২০ কিলোমিটার দূরের গ্রিনডেল ওয়ার্ল্ড। পাহাড়ের গায়ে সাজানো নির্জন এই গ্রাম যেন প্রকৃতির স্বর্গলোক। ফুলবাগানে সাজানো ছোট ছোট কাঠের তৈরি বাংলোধর্মী বাড়ি পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত। এর মধ্যে স্থানীয় বসতবাড়ির সঙ্গে হোটেলও রয়েছে। গ্রিনডেল ওয়ার্ল্ড থেকে কেবলকারে চেপে দেখে নিন ফার্স্ট গিরিশিরা, ফিংস্টেগ। গ্রিনডেল ওয়াল্ড থেকে পাহাড়ি রেলে চেপে এরপর গন্তব্য ১৮ কিলোমিটার দূরের ক্লেইন শেইডেক। চারপাশে চোখ ধাঁধানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এখান থেকে ট্রেন বদলে চলুন ৯ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের মাথায় ইয়ুংফ্রাউ ইয়ক। সেখানে পৌঁছে হারিয়ে যান বরফ রাজ্যে। এটি ইউরোপের সর্বোচ্চ রেলস্টেশন। উচ্চতা ৩ হাজার ৪৫৪ মিটার। এখানে হাতের মুঠোয় ধরা দেবে আল্পস পর্বতমালার ইগার, মনচ, ইয়ুংফ্রাউ হিমশৃঙ্গ। ইয়ুংফ্রাউইয়কে দ্রষ্টব্য আইস প্যালেস গ্লেসিয়ার, কেভ স্ফিংস ভিউ পয়েন্ট প্রভৃতি। এখান থেকে বিস্তৃত হিমবাহ আর অপরূপ তুষার সাম্রাজ্য দৃশ্যমান। এই অধিক উচ্চতায় রেস্তরাঁ, গিফট শপ, টয়লেট, মেডিক্যাল হেল্পের ব্যবস্থা রয়েছে। স্টেশনে নেমে তারপর লিফট চেপে পৌঁছবেন আরও উপরে বরফের দুনিয়ায়। ইয়ুংফ্রাউইয়ক বেড়িয়ে ফিরে আসুন ইন্টারলাকেন। সেখান থেকে রেলপথে জুরিখ ১১৮ কিমি। পার্বত্য প্রকৃতিতে এই রেল সফর অতুলনীয়।