কৌলিক ঘোষ: সংসদে সেদিন তুমুল হইচই, গন্ডগোল। কেন? বিরোধী নেতা নাকি বলেছেন যে, শাসকদলের অর্ধেক এমপি-ই মূর্খ। দীর্ঘদিনের বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ আর বাগ্মী বলেও যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে, তিনি কীভাবে সংসদে এ ধরনের কথা বলে বসলেন— এই নিয়ে যথেষ্ট ধন্দে সমালোচক মহল। অতঃকিম— শাসকদলের দাবি বিরোধী প্রবীণ নেতাকে সংসদেই ক্ষমা চাইতে হবে। রসবোধে পরিপূর্ণ বিরোধী নেতা ততক্ষণে বুঝে ফেলেছেন ক্ষমা চাওয়া ছাড়া কোনও বাঁচার রাস্তা নেই। তাই স্পিকারের মত নিয়ে তিনি ক্ষমা চেয়ে বললেন— ‘আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিচ্ছি। সংসদের অর্ধেক এমপি মূর্খ নয়।’ রসিক বিরোধী নেতার উত্তর শুনে কিছুক্ষণ স্তব্ধ থাকলেও, পরক্ষণেই বিরোধী ও শাসকদলের এমপিদের হাসির রোল মিলেমিশে একাকার। সবাই খুশি, আবার শুরু হল সংসদের কাজকর্ম। সাপও মরল, অথচ লাঠিও ভাঙল না। রসবোধ ও তাৎক্ষণিক বুদ্ধি দিয়ে শুধু যে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই মাত করে দেওয়া যায়, তাই নয়, নিজের চাকরিস্থলেও এমনটি প্রযোজ্য। এমনিতেই এখন কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত, বেসরকারি ক্ষেত্রে বেলাগাম ছাঁটাই নিত্যদিনের ঘটনা। সেখানে কাজ জানা গোমড়ামুখো কর্মীদের চেয়ে জনপ্রিয়, পরতে পরতে বুদ্ধির ছাপ, হাসিখুশি মেজাজের কর্মীর চাহিদা অনেকটাই বেশি। যাঁর সঙ্গে অন্তত কিছুক্ষণ কথা বলে ঊর্ধ্বতন কর্তারাও চাপমুক্ত হতে পারেন।
তাই ইদানীং স্ট্রেস, ডিপ্রেশন, ফ্রাস্টেশন— এসব শব্দগুলি অফিসে অফিসে কর্মীদের মধ্যে সংক্রামক রোগের মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে, সেখানে নিজেকে এবং অফিসের অন্যান্যদের ফুরফুরে থাকার ক্ষুদ্র দায়িত্বটুকু নিলে কর্তৃপক্ষের নজর কাড়া যেতে পারে অনায়াসে। যে ব্যক্তির মধ্যে রসবোধ বা ‘সেন্স অফ হিউমার’ থাকে অনেক ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যাকে চট করে মিটিয়ে নিতে পারেন তিনি।
একইভাবে একজন কর্মী যখন সহকর্মী বা অধঃস্তনের দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে নেন এবং উল্টোদিকে সাধুবাদ যতটা প্রাপ্য ততটা মোটেই দাবি করেন না—তিনি কিন্তু গোটা অফিসের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকেন। এদেরকে কিন্তু ওপরে উঠতে গেলে বা ছাঁটাই বাঁচাতে গেলে তোষামুদি করতে হয় না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এদের গুরুত্ব সবসময় অনুভব করেন। তবে ওপরওয়ালা বা সংস্থার বাহবা কুড়ানোর জন্য কাজের দায়িত্বের সবটাই নিজের কাঁধে তুলে নেওয়াটা ঠিক নয়। এতে একদিকে সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের চাহিদা বেড়ে যাবে, অন্যদিকে বেশি কাজের দায়িত্ব নেওয়ার ফলে অল্পস্বল্প ভুলচুক হলেই কোপে পড়তে হতে পারে। তাই, সংস্থার মধ্যে এমন একটা বাতাবরণ তৈরি করতে হয়— ‘সবে মিলে করি কাজ’-এর মতো। সেখানে আপনার বয়স, পদমর্যাদা, কোম্পানিতে চাকরির কতদিনের অভিজ্ঞতা— এসব কিছু গণ্য হবে না। অর্থাৎ একজন অল্পবয়সি হয়েও নেতা হওয়া সম্ভব। রাজনৈতিক দলের নেতারা যেমন এক এক জনের ওপর একেকটি দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়, তেমনই কর্মক্ষেত্রেও বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব বণ্টন বা ন্যস্ত করে দেওয়াটাও একটা গুরুদায়িত্ব বটে। শুধু দায়িত্ব দিয়েই খালাস থাকা নয়, দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে কি না, সেটা দেখভালের দায়িত্বও কর্মীদেরকেই নিতে হবে। চাকরি পেয়ে গেছি, এবার গতানুগতিক জীবন কাটাব এমন মানসিকতা থাকলে পায়ের তলার মাটি সরতে আজকাল কিন্তু সময় বেশি লাগে না। প্রত্যেক মুহূর্তে নিজেকে প্রমাণ করাটা জরুরি। প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের দরকার সরকারি-বেসরকারি যে কোনও ধরনের চাকরির ক্ষেত্রে।