কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। উপার্জন ভাগ্য ভালো। কর্মে উন্নতির যোগ আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা মিলবে। ব্যবসা ... বিশদ
সন্ধে পেরিয়ে তখন রাত হতে চলেছে। হঠাৎই শোনা গেল যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিগরি প্রযুক্তি শাখার সেরা ছাত্রটি নাকি ‘ওয়ান টু ওয়ান’ ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। খবর ছড়িয়ে পড়ল দাবানলের মতো। হইচই চারিদিকে। সবিস্তার জানা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লেসমেন্ট অফিসারের সঙ্গে কথা বলে। বিষয়টি হল— তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটির কর্তারা ছাত্রটির সঙ্গে মুখোমুখি পার্সোনাল ইন্টারভিউ নেওয়ার সময় প্রথম পর্বে সহজসরল কিছু প্রশ্ন করার পর, এমন কিছু প্রশ্ন করেছিলেন যেগুলির উত্তর দেওয়ার জন্য অন্তত মিনিট তিন-চার কথা বলতে হতো ছাত্রটিকে। মেধাবী, নিজের বিষয় সম্পর্কে পাণ্ডিত্য থাকলেও ইংরেজি কথোপকথনে ছিল নিতান্তই দুর্বল। কোনও মতে Introduce Yourself অর্থাৎ নিজের পরিচয় দাও, এই প্রশ্নের ধাক্কা সামলালও কেন এই সংস্থাতে যোগ দিতে আগ্রহী এর উত্তর দিতে গিয়ে হোঁচট খাওয়া শুরু হয়। এরপরই ছেলেটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমতা আমতা উত্তর ইন্টারভিউ কর্তাদের যে আদৌ সন্তুষ্ট করতে পারেনি— তা সে বুঝতে পারে।
এটি অবশ্য কোনও বিরল ঘটনা তা নয়। চাকরির লিখিত পরীক্ষাতে সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়ে ইন্টারভিউ-এ ঠোক্কর খেয়ে হাতের চাকরি খোয়ানো ব্যাপারটি প্রায়ই ঘটে। এর প্রধান কারণটিই হল কথপোকথনের মাধ্যম। যেটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকে ইংরেজি। আর, আগাগোড়া বাংলা মাধ্যমে পড়া মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রে এটাই হয়ে দাঁড়ায় প্রধান অন্তরায়। কেবলমাত্র কারিগরি ও প্রযুক্তি শাখার প্রার্থীদের ক্ষেত্রেই নয়, সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রেই দেখা যায় এমন অজস্র নমুনা। আড়ষ্টতা ভয়ে সন্ত্রস্ত হয়ে থাকাটা বাঙালি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অহরহ ঘটে।
প্রশ্ন উঠতেই পারে— এ সমস্যা শুধু বাঙালিদের ক্ষেত্রে বেশি ঘটে কেন? অন্যান্য রাজ্যেও তো আর কোথাও ইংরেজি মাতৃভাষা নয়, তা সে— তামিল, তেলুগু, ওড়িয়া, কানাড়া, মারাঠি— যে ভাষাই হোক না কেন কারওর মাতৃভাষাই তো ইংরেজি নয়। এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে হায়দরাবাদের ‘দ্য ইংলিশ অ্যান্ড ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক জানালেন— সমস্যা অন্যান্য সমস্ত রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেই আছে। কিন্তু, তাদের মধ্যে ‘আত্মবিশ্বাসের’ সঙ্গে ‘ভুল’ বলার প্রবণতা অনেক বেশি, তাই সাবলীলভাবে গড়গড় করে ভুল ইংরেজিতে কথা বলতে তাদের গলা কাঁপে না, অর্থাৎ ছোট্ট ফারাকটা হল আত্মবিশ্বাস। ব্যাকরণগত দিক দিয়ে একেবারে নিখুঁত ইংরেজি কথপোকথনের ‘সদিচ্ছা’ ছেড়ে দিয়ে মন দেওয়া উচিত কীভাবে সাবলীলভাবে ইংরেজিতে কথা বলে ইন্টারভিউ কর্তাদের নিজের বক্তব্য বুঝিয়ে দেওয়া যায়।
(চলবে)