ব্যবসার গতি ও বেচাকেনার সঙ্গে লাভও বাড়বে। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। শত্রু সংখ্যা বাড়বে। ... বিশদ
ডাঃ শাশ্বতী সিনহা।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে দু’পা যেতে না যেতেই ঘেমেনেয়ে একশা হচ্ছে। ছাতা, সানগ্লাস কোনও কিছুতেই বাগে আসছে না গরম। চুপচাপ বসে থাকলেও ঘাম থেকে নিস্তার নেই। রুমাল বের করে মুখ চোখ মুছতেই ফের গলগলিয়ে ঘামে ভিজে যাচ্ছে মুখ পিঠ ঘাড়। গরমকালে উষ্ণতা, চড়া তাপমাত্রা, বৃষ্টির চাহিদার সঙ্গে ঘাম খুব স্বাভাবিক চিত্র। আবহাওয়ার আর্দ্রতা আর ঘামের সঙ্গে লড়াইয়ে বিরক্তিও সঙ্গী হয় গরমে।
এ গল্প শুধু হাতে গোনা কয়েকজনের নয়। প্রায় অনেক মানুষই অতিরিক্ত ঘামের জেরে জেরবার হন। কেউ আবার একেবারেই ঘামেন না। তাহলে কি যাঁরা ঘামেন, তাঁদের কোনও শারীরিক সমস্যা আছে? সেসব আলোচনার আগে, জেনে নিই ঘাম কেন হয়।
ঘাম কী
খালি চোখে দেখলে ঘামের বেশিরভাগ অংশই জল। তবে এতে ইউরিয়া ও অ্যামোনিয়াও মিশে থাকে। এই দুই খনিজ খাবার পাতে আমিষ থেকে তৈরি হয়। এছাড়া এতে অল্প পরিমাণে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, নিকেল, কিছুটা তামা ও সীসাও পাওয়া যায়। এসব খনিজ ঘামের সঙ্গে মিশে থাকে বলেই ঘামের স্বাদ নোনা।
কেন ঘামে মানুষ?
ঘাম খুব সাধারণ ও স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। সকল মানুষ ঘামেন। ঘাম শরীরে অস্বস্তি তৈরি করলেও আদপে ঘাম ভালো। আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৬.৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট। গরমে বা কায়িক শ্রমের ফলে শরীরের তাপমাত্রা এর চেয়ে বেশি হলে শরীরে উপস্থিত ঘামের গ্রন্থিগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং তাপমাত্রার ভারসাম্য রাখতে তরল বের করে দেয়। সেই তরলই ঘাম।
শুধু কি মানুষই ঘামে?
মানুষ ঘামে নাজেহাল হয় বেশি। তবে প্রাণীজগতে অন্যান্য অনেক প্রাণীই ঘামে। বিশেষত, বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীই ঘামে। যেমন: কুকুর, বাদুড়, ঘোড়া, হাতি সকলেই ঘামে। আবার গরিলা, শিম্পাঞ্জি, বনমানুষ ইত্যাদি প্রাণীও ঘামে।
মানুষের দেহে দুই ধরনের ঘামগ্রন্থি আছে। একটি হল একক্রাইন (eccrine), অপরটি হল অ্যাপোক্রাইন (apocrine)। এই পশুদের বেলায় সারা শরীরে একক্রাইন গ্রন্থি থাকে এবং তা থেকে ঘাম নির্গত হয়।
তাহলে নিশ্চিন্ত?
ঘাম খুব স্বভাবিক বিষয়। মানুষের দেহে ২০ লক্ষ হতে ৫০ লক্ষ একক্রাইন গ্রন্থি রয়েছে। ব্যক্তিভেদে এই গ্রন্থির সংখ্যার হেরফের হয়। তাই কেউ বেশি ঘামে, কেউ কম। কারও শরীর সহজেই উত্তপ্ত হয় কারও সময় লাগে। ঘামের সঙ্গে ঘামজনিত অস্বস্তি ব্যতীত অন্য কোনও সমস্যা না থাকলে ভয়ের কিছু নেই। চিন্তারও কারণও নেই।
কখন ভয়ের?
ঘামের সঙ্গে যখন বুকে কোনও অস্বস্তি, অত্যধিক ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট এসব থাকে তখন ঘাম ভয়ের। বিশেষ করে ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের নিউরোপ্যাথি হয় বলে হার্ট অ্যাটাকের আগে বুকে ব্যথা খুব একটা হয় না। তবে সেক্ষেত্রে ঠান্ডা বিজবিজে ঘাম হৃদরোগের আগাম সংকেত হতে পারে। এছাড়া দেখা যায়, উচ্চ রক্তচাপ বা থাইরয়েডে আক্রান্ত রোগী কেউ কেউ একটু বেশি ঘামেন। তবে সেই সংখ্যা নামমাত্র। এছাড়া কোনও অ্যালার্জি বা সংক্রমণ হলে, হরমোনের কোনও সমস্যা থাকলেও অনেকে বেশি ঘামেন। তবে ঘাম বেশি হলেই এমন কিছু হয়েছে তা ধরে নেওয়ার মানে নেই। ঘাম ছাড়াও এসব অসুখে অন্য অনেক লক্ষণ থাকে।
তাই গরমে আইসক্রিমের সঙ্গে, ঘামও সঙ্গী হলে ভয় পাবেন না যেন!
লিখেছেন মনীষা মুখোপাধ্যায়