ব্যবসার গতি ও বেচাকেনার সঙ্গে লাভও বাড়বে। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। শত্রু সংখ্যা বাড়বে। ... বিশদ
আমাদের আজকের আলোচনা মূলত টক দই নিয়ে। টক দই সাধারণত শুভ্র বর্ণের হয়। অনেকের আবার সাদা দই এবং ইয়োগার্ট নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। ইয়োগার্ট এবং দই-এর প্রস্তুতির মধ্যে একটু ছোট্ট পার্থক্য আছে।
টক দই বাড়িতে পাতা যায়, আবার মিষ্টির দোকানেও মেলে। ইয়োগার্টে আলাদা করে ভিটামিন এবং মিনারেলস যোগ করা হয়। তবে দু’টিই পুষ্টিকর খাদ্য।
পুষ্টি উপাদান
বাড়ন্ত বাচ্চা হোক বয়স্ক ব্যক্তি উভয়ের জন্যই দই অত্যন্ত উপকারী।
দই ও ইয়োগার্টে রয়েছে ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি ইত্যাদি। ভিটামিনগুলি ত্বক, পেশি, ব্রেন এবং স্নায়ু স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া দই হল ক্যালশিয়ামের অন্যতম উত্স। তাই নিয়মিত দই খেলে দাঁত ও হাড়ের ঝোর বাড়ে। দইয়ে রয়েছে ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজও। অল্প মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট ও অনেকখানি প্রোটিন রয়েছে দইয়ে। দেখা গিয়েছে দইয়ে থাকা প্রোটিন শরীরে মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। আবার ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ উপকারী দই! বিভিন্ন এভাবে হার্টের সমস্যাও প্রতিরোধ করতে সক্ষম দই।
প্রো বায়োটিক
দই হল প্রাকৃতিক প্রো বায়োটিকের উত্স। প্রশ্ন হল প্রোবায়োটিক কী? আমাদের যে ক্ষুদ্রান্ত্র আছে তার মধ্যে থাকে প্রচুর উপকারী ব্যাকটেরিয়া বা প্রোবায়োটিক। এই উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলি আমাদের খাদ্য পরিপাক ও বিপাকক্রিয়ার বিশেষভাবে সাহায্য করে। আজকাল মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের জন্য বহু মানুষের অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার যে কলোনি নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বিশেষ উপকারে আসতে পারে দই। এই কারণেই নিয়মিত দই খেলে শরীরে তা প্রভূত উপকারে আসে।
ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যরক্ষায়
ত্বক এবং চুল ভালো রাখতে দই-এর কোনও বিকল্প হতে পারে না।
দই খাওয়া যেমন এই ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে তেমনই ত্বকে সরাসরি প্রয়োগ করলেও মেলে ভালো ফল।
• দই-এর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে লাগালে একদিকে তা যেমন মুখমণ্ডল থেকে মৃত ত্বকের স্তর উঠিয়ে দিতে সাহায্য করে তেমনই আর এক দিকে হাইপার পিগমেনটেশন কন্ট্রোল করতেও সাহায্য করে। ফলে ত্বক অনেক বেশি উজ্জ্বল দেখায়।
লেবুর রস ও দই-এর মিশ্রণ ত্বকে লাগানোর পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবেন ও হালকা গরম জল দিয়ে ধীরে ধীরে তুলে দেবেন।
• চুলে খুশকির সমস্যা মেটাতে, চুল ঝরার জটিলতা দূরে রাখতে দই ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে দই-এর সঙ্গে মেথি বাটা চুলের গোড়ায় লাগানো যেতে পারে। তাতে চুলের গোড়া শক্ত হয়। চুলে খুশকির সমস্যা কমে। চুলে একটা ঝলমলে ব্যাপার লক্ষ করা যায়।
আইবিএস নিয়ন্ত্রণে
ইরিটবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস রোগীর জন্য দই হল আদর্শ খাদ্য। যাঁরা আইবিএস-এর রোগী তাঁরা নিয়মিত ভাবে দই খেতে পারেন। তাতে তাঁদের ডায়ারিয়া হোক বা কোষ্ঠকাঠিন্য— উভয় ক্ষেত্রেই উপকার পাবেন।
গ্রীষ্মের শান্তি দই
• প্রতি ১০০ গ্রাম দইয়ে থাকে ৮০ থেকে ৮১ কিলোক্যালোরি পর্যন্ত এনার্জি। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে দই এনার্জি লাভের উন্নত উত্স।
• গরম কালে শরীরচর্চা করতে যাওয়ার আগে ও পরে দই-এর সঙ্গে সামান্য চিনি মিশিয়ে খেলে তা ব্যায়ামের সময় ক্লান্তি দূরে রাখে।
• গ্রীষ্মকালে যাঁরা আগুন ঝরানো দুপুরে ঘুরে ঘুরে কাজ করছেনতাঁরা সুযোগ পেলেই ঘোল খেয়ে নিন। ঘোল আমাদের শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
• বাচ্চা হোক বয়স্ক, রোদ থেকে ঘেমে-নেয়ে এসে বাড়ি ফেরার পর তাদের দিন দই ও চিনি। দ্রুত হৃত এনার্জি ফিরে আসবে। চনমনে অনুভব করবেন তাঁরা।
• গ্রীষ্মের দুপুরে ভাত খাওয়ার পর শেষ পাতে রাখুন দই। খাদ্য হজমে যেমন দই সাহায্য করবে তেমনই পেট ঠান্ডা রাখবে।
• ফ্রুট স্যালাডের সঙ্গেও দই মিশিয়ে খাওয়া যায়।
আয়ুর্বেদিক ঘোল বা তক্র
আয়ুর্বেদে ‘ঘোল’ বা তক্রকে স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারকারী হিসেবে বিশেষ স্থান দেওয়া হয়েছে। ঘোলের সঙ্গে কিছু ভেষজ মেশালে তার উপকারিতা আরও বেড়ে যায়। শরীরে একটা চনমনে ভাব আসে। খর দিনে জলশূন্যতা প্রতিরোধ করে তক্র।
তক্র তৈরির নিয়ম—
দইয়ের সঙ্গে প্রয়োজন মতো জল মিশিয়ে বানান ঘোল। এরপর তার সঙ্গে যোগ করুন শুঁঠ চূর্ণ (শুকনো আদা চূর্ণ), গোল মরিচ, পিপুল চূর্ণ, জিরে গুঁড়ো, বিট নুন। আইবিএস-এর রোগী, ডায়ারিয়ার রোগী, কনস্টিপেশনের রোগীর জন্য এই তক্র বা ঘোল দারুণ কার্যকরী। যাঁরা কোনও কারণে প্রবল অম্বলের সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা ছাড়া যে কোনও ব্যক্তি তক্র পান করতে পারেন নিয়মিত।
কারা খাবেন, কারা খাবেন না?
যাঁরা আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় ভুগছেন, কিংবা ভুগছেন সর্দি কাশিতে, তাঁদের দই একটু এড়িয়ে চলাই ভালো। তবে বাকি সমস্ত ক্ষেত্রেই, সব বয়সেই টক দই নিশ্চিন্তে খাওয়া যায়।