মেষ: পঠন-পাঠনে আগ্রহ বাড়লেও মন চঞ্চল থাকবে। কোনও হিতৈষী দ্বারা উপকৃত হবার সম্ভাবনা। ব্যবসায় যুক্ত ... বিশদ
ডেঙ্গু মশা
সংক্রামিত ইডিস ইজিপ্টাই মশা কামড়ালে শরীরে ডেঙ্গুর ভাইরাস প্রবেশ করে। এই মশার শরীরে সাদা-কালো ডোরা কাটা দাগ থাকে। তাই ইডিস ইজিপ্টাইকে ‘টাইগার মশা’ নামেও ডাকা হয়। সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যা হওয়ার আগে এই মশা কমড়ায়। রাতের দিকে কামড়ানোর আশঙ্কা কম। মূলত এই মশার পছন্দসই বাসস্থান হল পরিষ্কার জল। নোংরা জল এরা এড়িয়ে চলতে ভালোবাসে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বসবাসের জন্য বড় জায়গার প্রয়োজন এদের নেই। একটি বোতলের ছিপির মধ্যে থাকা জলেও এরা অনায়াসে বসবাস এবং বংশবিস্তার করতে পারে। ইডিস অ্যালবোপিকটাস নামে আরও এক ধরনের ইডিস মশাও কখনও কখনও ডেঙ্গু ছড়ায়।
চার ধরনের ডেঙ্গু
টাইপ ১, ২, ৩, ৪— এই চার ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাস রয়েছে। বাংলায় প্রতি বছর মূলত এক ধরনের ভাইরাসের প্রকোপ থাকে বেশি। অর্থাৎ কোনও বছর টাইপ ১-এর রোগী বেশি তো কোনও বছর টাইপ ২-এর। তবে ফি বছর প্রতিটি টাইপে আক্রান্ত রোগীই কমবেশি পাওয়া যায়।
উপসর্গ চিনুন
রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হল জ্বর। শরীরের তাপমাত্রা ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত চলে যেতে পারে। এছাড়া গা-হাত-পা ব্যথা, বমিবমি ভাব বা বমি হয়ে যাওয়া, চোখ লাল, গায়ে লাল রঙের র্যাশ ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।
কখন বিপজ্জনক
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মত অনুযায়ী ‘সিভিয়র’ ডেঙ্গুর লক্ষণগুলি হল— প্রচণ্ড পেটে ব্যথা, অত্যন্ত দুর্বলতা, দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস, অনবরত বমি, রক্ত বমি, মাড়ি থেকে রক্তপাত, ছটপট করা ইত্যাদি।
ডেঙ্গুর কারণে শরীরে প্লেটলেট কমে। রক্ত জমাট বাধতে সমস্যা হয়। অনেক রোগীর অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে শরীরের নানা জায়গা থেকে রক্তপাত শুরু হয়। এক্ষেত্রে রক্তবমি, নাক দিয়ে রক্তপাত, মাড়ি দিয়ে রক্তপাত, কালো মল ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। এই শারীরিক অবস্থাকে ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার বলে।
ডেঙ্গু বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছলে শরীরের তাপমাত্রা কমে, প্রেশার কমে, পালসের গতি বেড়ে যায়, রোগীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়। এই পরিস্থিতির চিকিৎসাসম্মত নাম ডেঙ্গু শক সিনড্রোম।
ডেঙ্গু না করোনা? রোগ নির্ণয় কীভাবে?
ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে গা-হাত-পা ব্যথা খুব বেশি হয়, শরীরে র্যাশ বেরতে দেখা যায়, বমিও হয়ে থাকে। করোনার ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলি সাধারণত খুব একটা বেশি প্রভাব ফেলে না। করোনায় জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণগুলি বেশি দেখা যায়। ফলে রোগীর উপসর্গ দেখে সামান্য হলেও রোগ সম্বন্ধে আন্দাজ করা যায়। তবে এক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ে ঝুঁকি নেওয়া চলে না। ডেঙ্গু সন্দেহ হলে অ্যালাইজা পদ্ধতিতে এনএস ১ অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়। আর এখন ডেঙ্গুর পাশাপাশি রোগীর লালারস নিয়ে পিসিআর পদ্ধতিতে করোনা পরীক্ষাও করে নেওয়া যেতে পারে।
ডেঙ্গুর চিকিৎসা
ডেঙ্গুর লক্ষণ বিপজ্জনক পর্যায়ে না গেলে বাড়িতেই চিকিৎসা হয়। এক্ষেত্রে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা চলে। প্রয়োজন অনুযায়ী প্যারাসিটামল দেওয়া হয়। শরীরে জলের জোগান বাড়াতে দিনে কমপক্ষে আড়াই লিটার জলপান করতে বলা হয়। বেশিরভাগ রোগী এতেই সেরে ওঠেন। বিপজ্জনক লক্ষণ ফুটে উঠলেই হাসপাতালে ভর্তি করে নির্দিষ্ট চিকিৎসা চলে।
কখন প্লেটলেট?
সুস্থ মানুষের প্লেটলেট কাউন্ট দেড় লক্ষ থেকে সাড়ে তিন লক্ষ হয়। কিন্তু ডেঙ্গু হলে প্লেটলেট নেমে আসে। এক্ষেত্রে রোগীর শরীরে রক্তপাত না হলে বা রোগের লক্ষণ বিপজ্জনক না বুঝলে প্লেটলেট কাউন্ট দশ হাজার পর্যন্ত নেমে আসলেও বাইরে থেকে প্লেটলেট দিতে হয় না। কিন্তু দশ হাজারের নীচে নামলেই প্লেটলেট দিতে হবে। অপরদিকে রোগীর রক্তপাত শুরু হয়ে গিয়ে থাকলে প্লেটলেট যতই থাকুক না কেন, সেই অবস্থাতেই প্লেটলেট দিতে হয়।
ডেঙ্গু ও করোনা একসঙ্গে মনে রাখবেন, ডেঙ্গু এবং করোনার বিপদ একজন মানুষের উপর একসঙ্গেও নেমে আসতে পারে। দু’টি রোগ একসঙ্গে হলে বিপদের আশঙ্কা একলপ্তে অনেকগুণ বাড়ে। রোগীকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করতে হয়। তাই রোগ প্রতিরোধ আগে জরুরি।
রোগ প্রতিরোধ
বাড়ির আশপাশে জল জমতে দেবেন না। বিশেষত পুরনো টায়ার, অব্যবহৃত বালতি, ফাঁকা টব ইত্যাদি জায়গায় বৃষ্টির জল জমতে পারে।
আগাছা পরিষ্কার করুন।
মশার হাত থেকে বাঁচতে গা-হাত-পা ঢাকা জামা কাপড় পরুন।
বাড়িতে মশার ধূপ বা শরীরে মশা নিরোধক ক্রিম মাখতে পারেন।
মশারি টাঙিয়ে ঘুমান।
একই সঙ্গে করোনা প্রতিরোধের যাবতীয় ব্যবস্থা নিন।