সন্তানের তীক্ষ্ণ বাক্য ও উদ্ধত আচরণে মনঃকষ্টের যোগ। কর্ম নিয়ে জটিলতার অবসান। অর্থকড়ি দিক অনুকূল। ... বিশদ
আর কয়েক মিনিটের অপেক্ষা। তারপরই সেলিব্রেশন শুরু। শহরের বিভিন্ন হোটেল রেস্তরাঁ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভিড়ে ঠাসা। ততক্ষণে মিনিট থেকে সময় চলে এসেছে সেকেন্ডের ঘরে। এবার কাউন্টডাউন শুরু। থ্রি, টু, ওয়ান... ব্যস! আকাশে হাউইয়ের ছটা। বাজি ফাটছে। ঘড়ির বড় কাঁটা আর ছোট কাঁটা তখন ১২টার ঘরকে ছুঁয়েছে। তারপরই শুরু হয়েছে সেলিব্রেশন। চারদিক থেকে ভেসে আসছে হাসি আর আনন্দের রোল। আর সকলের মুখে একটাই কথা— ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’। কয়েকদিন আগেই তো আমরা ইংরেজি নববর্ষ পালন করলাম। স্বাগত জানালাম ২০২৫ সালকে।
ইংরেজি নববর্ষ ঘিরে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই কম-বেশি উৎসাহ, উদ্দীপনা থাকে। সব দেশই নিজেদের স্থানীয় সময় রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে নিউ ইয়ার উদ্যাপন শুরু করে দেয়। টেলিভিশন চ্যানেলগুলি দেখানো শুরু করে ইতিমধ্যে কোন কোন দেশে রাত ১২টা বেজে গিয়েছে অর্থাৎ ১ জানুয়ারির আনন্দ অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছে। ছোট্ট বন্ধুরা, যদি তোমাদের প্রশ্ন করা হয়, পৃথিবীর কোন স্থানে প্রথম নববর্ষ পালন করা হয়? আর কোন স্থানেই বা সব শেষে? তার উত্তর দিতে পারবে তোমরা?
সাধারণত মনে করা হয় নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে প্রথম নিউ ইয়ার সেলিব্রেশন শুরু হয়। আসলে আলোর রোশনাই ও চোখ ধাঁধানো উদ্যাপনে অকল্যান্ড বিশ্ববাসীর নজর কেড়ে নেয়। কিন্তু ততক্ষণে নতুন বছরের ঘণ্টা অনেক আগেই বেজে গিয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের আর এক দ্বীপরাষ্ট্র কিরিবাসে। এর রাজধানী তারাওয়া। এই দেশটির কিরিমাতি দ্বীপ আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার অনেক কাছে অবস্থিত। নিউজিল্যান্ডের রাজধানী ওয়েলিংটনের তুলনায় কিরিমাতি দ্বীপের সময় প্রায় ১ ঘণ্টা এগিয়ে। তাই ওশিয়ানিয়া মহাদেশের কিরিবাসের কিরিমাতিতে প্রথম নিউ ইয়ার উদ্যাপন শুরু হয়।
এবার প্রশ্ন, পৃথিবীর কোন অংশে সবশেষে নববর্ষ পালন করা হয়। উত্তর হবে সামোয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধীনস্থ এই দ্বীপ। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত এই দ্বীপের বাসিন্দারা সবশেষে নিউ ইয়ার পালন করেন। অথচ, কিরিমাতি ও আমেরিকান সামোয়া দ্বীপ দু’টির মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৭৫০ কিলোমিটার। এই দুই দ্বীপের মধ্যে সময়ের ব্যবধান প্রায় ২৫ ঘণ্টা। কিরিমাতির সময় আমেরিকান সামোয়া দ্বীপের থেকে ২৫ ঘণ্টা এগিয়ে। যদি কিরিমাতির ঘড়িতে ১ জানুয়ারি রাত ১২টা বাজে তাহলে সামোয়ায় আগের দিন অর্থাৎ ৩০ ডিসেম্বর রাত ১১টা। তার মানে কিরিমাতির বাসিন্দারা যখন নতুন বছরকে স্বাগত জানান, তখন আমেরিকান সামোয়া দ্বীপের মানুষজন বর্ষশেষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এখানেই একটা প্রশ্ন। দুই দ্বীপের মধ্যে দূরত্বের ব্যবধান মাত্র ৭৫০ কিলোমিটার হওয়া সত্ত্বেও সময়ের পার্থক্য এত বেশি কেন? এর নেপথ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখাটি। অর্থাৎ ১৮০ ডিগ্রি দ্রাঘিমা রেখা। গোটা পৃথিবী ২৪টি টাইমজোনে বিভক্ত। লন্ডনের গ্রিনিচের মান মন্দিরের উপর দিয়ে গিয়েছে শূন্য (০) ডিগ্রি দ্রাঘিমা। এর পূর্ব দিক পূর্ব গোলার্ধ এবং পশ্চিম দিক পশ্চিম গোলার্ধ। পূর্ব গোলার্ধের দেশগুলিতে আগে সূর্যোদয়, মধ্যাহ্ন ও সূর্যাস্ত হয়। আর ১ ডিগ্রি দ্রাঘিমার জন্য ৪ মিনিট সময়ের পার্থক্য হয়। তাই ১৮০ ডিগ্রি রেখাটিকে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। পূর্ব দিক থেকে এই রেখা অতিক্রম করে পশ্চিম দিকে গেলে একদিন পিছিয়ে যায়। আবার পশ্চিম দিক থেকে কোনও জাহাজ বা উড়োজাহাজ এই আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা পেরিয়ে পূর্ব গোলার্ধে পৌঁছলে একদিন এগিয়ে যায়। এই তারিখ রেখার জন্যই প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে অবস্থিত এই দু’টি দ্বীপ সবার আগে এবং সর্বশেষে নিউ ইয়ার পালন করে।