পড়ে গিয়ে বা পথ দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্তির যোগ থাকায় সতর্ক হন। কর্মে উন্নতি ও সাফল্যের যোগ। ... বিশদ
কনভেন্ট স্কুলে পড়তাম বলেই বোধহয়, ক্রিসমাস আমার কাছে বিশেষ গুরুত্ব নিয়ে হাজির হয়েছিল সেই ছোটবেলা থেকেই। পুজোর উন্মাদনার পাশাপাশি ক্রিসমাসের অপেক্ষাতেও অধীর আগ্রহে দিন গুনতাম। তারপর কোনও এক বাঙালি খ্রিস্টান বন্ধুর বাড়িতে ক্রিসমাস উদ্যাপনের নেমন্তন্ন আসত। সেও এক অন্য ধরনের রোমাঞ্চ। ছোটবেলাতেই বুঝে গিয়েছিলাম আমাদের দুর্গাপুজোর তুলনায় যিশুপুজো বা ক্রিসমাস একেবারেই আলাদা। পুজোর হুল্লোড় নেই এই অনুষ্ঠানে। বরং বাড়িতেই আত্মীয় বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা, খাওয়াদাওয়া ইত্যাদি। তবে অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে বাড়ি সাজানো দেখার মতো। আজও বাঙালি খ্রিস্টান বাড়িতে ক্রিসমাসে বাড়ির সাজের সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। এই বিষয়ে দমদম নিবাসী অর্চনা গোমস বললেন, ‘আজকাল অনলাইনের যুগ। তবু পুরনো ট্র্যাডিশন মেনে নিউ মার্কেট থেকেই আমি ক্রিসমাস ডেকর কিনি। টিনসেল গার্ল্যান্ড, ক্রিসমাস ট্রি, অর্নামেন্টস, রিদ সবই নিউ মার্কেট থেকেই আনা হয় আমাদের বাড়িতে।’
অর্চনার সঙ্গে সহমত পোষণ করেন না টিনা উইলিয়ামস। অল্পবয়সি খ্রিস্টান কন্যা আবার পুরোপুরি অনলাইনের ভরসাতেই ক্রিসমাসের বাজার সারেন। তাঁর কথায়, ‘অনলাইনে ডিজাইনগুলো অনেক আধুনিক। তাই বাঙালি বাড়িতে বিদেশি ধাঁচ আনতে ওগুলোই কিনি।’
নিউ মার্কেট, পার্ক স্ট্রিট বা অনলাইন, বাজারের ঠিকানা যাই হোক না কেন, তার ধরন কিন্তু বদলায় না। অর্চনা গোমস বাড়ির ঘর অনুযায়ী সাজের বর্ণনা দিলেন। আলোচনা শুরু হল বসার ঘরের সাজ দিয়েই। তবে ঘরে ঢোকার আগে বাইরের বর্ণনাও নেহাত ফেলনা নয়। বাড়ির সামনে স্ট্রিং লাইট লাগানো হয়। গাছের সঙ্গে তার দিয়ে ঝোলানো হয় সেই আলো। কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল— মূলত এই ক’টা রঙেরই বাহার থাকে ক্রিসমাস লাইটে। বাড়ির বাইরের গাছে, প্রবেশপথের দরজায়, রেলিংয়ে জড়ানো থাকে এই লাইটগুলো। দরজায় লাগানো হয় রিদ। টিনসেল গার্ল্যান্ড দিয়ে নিজে হাতে রিদ বানাতেন অর্চনার শাশুড়ি। তাতে স্যাটিনের মেপল পাতা আর পুঁতির তৈরি চেরি দিয়ে সাজানো হতো। কিন্তু এখন আর হাতে বানানো রিদ লাগানো হয় না দরজায়। বরং দোকান থেকেই কিনে আনা হয়।
দরজা ঠেলে এবার বৈঠকখানায় ঢুকে পড়ুন। অর্চনাদের বসার ঘরে উডেন ফ্লোরিং রয়েছে। তারই এক কোণে একটা বড় ক্রিসমাস ট্রি বসানো হয়। মাঝেমাঝে আসল পাইন গাছ কেনা হয়, আবার কখনও বা নকল গাছেই সাজসরঞ্জাম লাগিয়ে বিদেশি ক্রিসমাস ফিল আনা হয়। ‘গাছ নকল হোক বা আসল তাতে একটু সেন্টেড এসেন্স স্প্রে করে দেওয়া হয় বড়দিনে। তাতে পাতাগুলো চকচক করে ওঠে। আর ফোম দিয়ে তৈরি স্নো স্প্রে ছিটিয়ে দিলে তো কথাই নেই, একেবারে বিদেশে বরফের পটভূমি তৈরি হয়ে যায়,’ বললেন অর্চনা। তবে এগুলো সবই বাইরের সাজ। ক্রিসমাস ট্রি-এর আসল সাজ লুকিয়ে থাকে তার গায়ে ঝোলানো গয়নায়। বেলস, বল, ক্রিস্টালের হার ইত্যাদি থাকে সেই সাজে। ওগুলোকে বলে অর্নামেন্টস। বলের মধ্যে গোল্ডেন আর লাল এই দুটো রঙেরই প্রাচুর্য দেখা দেয়। আর ক্রিস্টাল বিডস, স্টার ইত্যাদি দিয়ে গাঁথা মালা ঝোলানো হয় গাছের ডাল থেকে। অনেকে আবার এর পাশাপাশি পরীর মূর্তিও ঝুলিয়ে দেন। আর গাছের মাথায় থাকে একটা বড় সোনালি তারা। যিশুর জন্মের সময় সেই তারাই ছিল পথপ্রদর্শক। ক্রিসমাস ট্রি-র মাথায় লাগানো স্টার তাই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে আবার পারিবারিক রীতি মেনে পরীর মূর্তি বসান গাছের মাথায়। এছাড়াও আছে ক্যান্ডি স্টিক, গিফট বক্স ইত্যাদি। এগুলো সবই ক্রিসমাস ট্রি-র গায়ে ঝোলানো হয়। আর তার নীচে রাখা হয় উপহারের বাক্স। চকমকে রাংতায় মোড়ানো এইসব উপহারের বাক্সে বাড়ির সকলের নাম লেখা থাকে। এক একজনের জন্য আলাদা উপহার। অর্চনা বলেন, বাচ্চারা মনে করে ২৪ ডিসেম্বর রাতে নর্থ পোল থেকে সান্টা ক্লজ আসেন উপহারের ঝুলি নিয়ে। তাই বাঙালি খ্রিস্টান বাড়িতেও রীতিমতো বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়ার পর বাবা মা উপহারগুলো গাছের নীচে সাজিয়ে দেন চুপিচুপি।
ক্রিসমাস ট্রি ছাড়াও অনেকেই বসার ঘরের দেওয়াল থেকে আলো ঝোলান, কেউ সোফা বা ডিভানে একটু গরম ঢাকা (থ্রো ব্ল্যাংকেট) রাখেন, সঙ্গে কিছু কুশন। আর পায়ের তলায় মোটা মখমলের পাপোশ দেওয়া হয়। এই সবই ক্রিসমাস কালার মেনে। রেড অ্যান্ড গোল্ড বা গ্রিন। অনেকে বসার ঘরে সান্টা ক্লজের মূর্তি রাখেন। কেউ বা যিশু ও মা মেরির ছোট মূর্তি (ফিগারিন) সাজান।
শোওয়ার ঘরে খাটের পাশে নাইট স্ট্যান্ডে একটা সান্টা ক্লজের ছোট মূর্তি রাখতে পারেন। অথবা মিনি ক্রিসমাস ট্রি দিয়েও সাজাতে পারেন। আর ড্রেসিং টেবিলে টিনসেল গার্ল্যান্ড জড়িয়ে দিন। সবুজ রাংতা দিয়ে তৈরি এই মালাগুলো ঘরের ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে। বাড়িতে নবদম্পতি থাকলে শোওয়ার ঘর আর বসার ঘরের মাঝে দরজার মাথায় ‘মিসেলটো’ পাতার গুচ্ছ ঝুলিয়ে দিন। তার মুখে ছোট চেরি ফল। সবুজ আর লালের মিশ্রণের দরজার সাজটাই ভিন্ন হয়ে যাবে। ইংরেজি সিনেমা দেখা বা সাহিত্য পড়ার পর মিসেলটো পাতার কার্যকারিতা বিষয়ে আর আলাদা করে বলে দিতে হয় না।
বাড়ির বারান্দা আর জানালা থেকে সরু আলোর মালা ঝুলিয়ে দিন। স্টার বা স্টিক মোটিফের হলুদ আলো দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। বাড়িতে একটা ক্রিসমাস কালার বজায় রাখুন। লাল, সোনালি আর সবুজ এই তিন রঙে রাঙিয়ে তুলুন বিছানার চাদর থেকে পর্দা সবকিছুই। ব্যস, ক্রিসমাসে বাড়ি সাজ সম্পূর্ণ। জিনিসপত্র অনলাইনে পাবেন। তাছাড়া নিউ মার্কেট আর পার্ক স্ট্রিট তো রয়েছেই।