বিদ্যার্থীরা মাঝে মধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
এই উপন্যাস মোট আট পর্বে বিভক্ত। প্রতিটি পর্ব এক একটি পুরনো দিনের বাঙালি রান্নার নামশীর্ষক। যেমন কুমড়োফুলের বড়া, চুঁই ঝাল, মালপোয়া, ছ্যাঁচড়া, আমতেল, বিউলির ডাল, চিংড়ির হলুদগোলা ঝোল, কচুবাটা ইত্যাদি। নামের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এগিয়েছে কাহিনিবিন্যাসের গঠন ও ইন্দুবালার ব্যক্তিগত জীবনের স্ট্রাগল ও প্রতিবাদের চড়াই-উতরাই। কাহিনির নানা ব্যঞ্জনাতেও চলে এসেছে খাবারের নানা পদের নাম ও উপমা।
উপন্যাসে ইন্দুবালাই মূল। বাকিরা পার্শ্বচরিত্রের মতো যেন মূল রান্নায় তেল-ঝাল জুগিয়ে গিয়েছে। লেখকের ভাষা প্রাঞ্জল। বর্ণনা সাবলীল। ইন্দুবালার ব্যক্তিত্বনির্মাণ ও মূল্যবোধের প্রতি তিনি বেশ যত্ন নিয়েছেন। কন্যাসন্তানের প্রতি অবহেলার প্রতিবাদ, একা হাতে হোটেলের হেঁশেল সামলানো, মুখ থুবড়ে পড়া জীবনকে একটু কাঠামো দেওয়া— এসব ইন্দুবালাকে অনেকটা জ্যান্ত দুর্গা বানিয়ে দেয়। তার সঙ্গে পাঠক দেশের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে দেখা হওয়া ঠাকুরমা-দিদিমার মিল খুঁজে পেতে পারেন ।
দেশভাগের ছোরা যেসব পাঠকের পিঠে গেঁথে আছে আজও, তাঁরাও ইন্দুবালায় বিভোর হতে পারেন। হয়তো তার মতো কোনও কোনও ট্রেন দেখে ভেবে ফেলতে পারেন, এই ট্রেন কী সহজে দেশের মাটি ছুঁয়ে এল, কিন্তু পিছমোড়া করে বাঁধা জীবনে আমি আর ভিটের কাছে ফিরতে পারি কই! সুতরাং এই কাহিনি শুধুই ইন্দুবালার নয়। নায়ক-নায়িকা সবই যদি ইন্দুবালা হন, দেশভাগের নস্টালজিয়া ও ক্ষত তবে তার নিয়তি। গোটা উপন্যাস জুড়ে লেখক একটি সময় ও দেশকালকে ছুঁতে চেয়েছেন। আর আবেগে জড়ানো উপাখ্যান পরপর সাজিয়েই পাঠকের নস্টালজিয়া ও দেশের মাটির প্রতি টান উস্কে দিতে সক্ষম হয়েছেন। আর তাই এই উপন্যাস এত আলোচিত।
তবে এই উপন্যাস কালজয়ী হয়ে উঠতে উঠতেও হল না। কারণ, এমন টুকরো উপাখ্যানগুলিকে পরপর সাজাতে গেলে যে টানটান বিন্যাস প্রয়োজন এক্ষেত্রে তার কিছুটা অভাব রয়েছে। দুর্দান্ত বিষয়, অভিনব ভাবনায় উপাখ্যান সাজানো, তরতর করে এগনো গল্প হঠাৎই যেন গতি হারায়। বইটি শেষ করে মনে হতেই পারে একটি প্রভূত সম্ভাবনাময় উপন্যাস বা খণ্ডচিত্রগাথা আবেগের থইথই জলে ভাসতে শুরু করলেও একসময় আবেগের ঘোলাজলে পাক খেতে লাগল অসহায়ের মতো। প্রসাদগুণে ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’-এর সঙ্গে এখানেই তার মস্ত পার্থক্য।
নকশাল আন্দোলনের কাহিনিও বেশ অগভীর। তবে পুরনো দিনের বাংলার রান্না ও একটি হোটেলকে কেন্দ্র করে একজনের রোজনামচা ও সংগ্রামের কাহিনি পড়তে চাইলে বইটি আকর্ষণীয় ও পঠনযোগ্য। ইন্দুবালা ভাতের হোটেল। কল্লোল লাহিড়ী। সুপ্রকাশ। দাম ২৩০।