কাজকর্মে নতুন সুযোগ আসতে পারে। কর্ম সাফল্যে আনন্দ লাভ। ব্যবসায় উন্নতি। গবেষকদের পক্ষে শুভ। ... বিশদ
যাত্রা শুরু
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েলসলি কলেজ থেকে বায়োলজি ও জাপানিজ স্টাডিজে স্নাতক। পরে ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড এনভায়ারমেন্টাল সায়েন্সে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন। পেশা জগতে পা রেখেছিলেন সাংবাদিক হিসেবে। জাপানি টিভি চ্যানেলের হয়ে কভার করতেন হোয়াইট হাউস। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলাল গতিপথ। যোগ দিলেন মার্কিন বিদেশ দপ্তরে। সেখানে সামলেছেন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া অফিসে ডিরেক্টর ও লাটভিয়ার রিগায় মার্কিন দূতাবাসে পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অফিসার পদেও ছিলেন তিনি। প্রথমবার কনসাল জেনারেলের দায়িত্ব পেয়ে পা রেখেছেন কলকাতায়। এখানে আসার আগে ব্রাসেলসে ন্যাটোর ইউএস মিশনে পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইসর ছিলেন ক্যাথি।
কলকাতা ও দুর্গাপুজো
সাংবাদিক থাকাকালীন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের সফর কভার করতে এসেছিলেন ভারতে। এদেশের পাঁচটা শহরে গেলেও সুযোগ হয়নি কলকাতায় আসার। কিন্তু ‘সিটি অব জয়’-এর গল্প শুনেছিলেন অনেকের মুখে। ক্যাথির কথায়, ‘এখানে আসার ইচ্ছেটা ভিতরে ভিতরে ভীষণভাবে ছিল। শিল্প, সাহিত্য থেকে সংস্কৃতি—প্রতিটি ক্ষেত্রেই কলকাতার আকর্ষণ অমোঘ। সত্যি বলতে, এখনও পর্যন্ত এখানকার অভিজ্ঞতা এককথায় অসাধারণ। আর সেই তালিকায় সবার উপরে অবশ্যই দুর্গাপুজো। এখানে আসার আগে এই পুজো নিয়ে বহু কিছু শুনেছিলাম। কিন্তু ঘুরে দেখে বুঝলাম, বাস্তবে যা হয়, তার সিকিভাগও শুনিনি। শহরজুড়ে চোখধাঁধানো সুবিশাল মণ্ডপ, কোথাও থিমের মাধ্যমে নানান সামাজিক বার্তা... একটা পুজো ঘিরে এমনও যে হতে পারে, তা ভাবনারও অতীত। আমার অনেক বন্ধু ও আত্মীয়কে আগামী বছর পুজোয় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছি।’
প্রাণের শহর, স্বাদের শহর
‘অতিথি দেব ভবঃ।’ ভারতীয় ঐতিহ্যের এই চিরকালীন বার্তার মূল সুর যেন সৃষ্টি হয়েছিল কলকাতাকে কেন্দ্র করেই। কখনও কাজের সুবাদে, কখনও আবার শুধুই ঘুরে দেখার আনন্দে শহরের নানা প্রান্তে ঘুরেছেন ক্যাথি। মুগ্ধ হয়েছেন কলকাতার মানুষের প্রাণখোলা ব্যবহারে। সম্পূর্ণ অচেনা মানুষকেও যে উষ্ণ আন্তরিকতায় এই শহরবাসী আপন করে নিতে জানেন, পেয়েছেন তার স্বাদও। তাঁর মতে, একটা শহরে এত ধরনের মানুষ, কিন্তু সকলেই শিল্প-সংস্কৃতির এক অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা। কলকাতার রকমারি খাবারেও মুগ্ধ ক্যাথি। কিন্তু মিষ্টির প্রতি তাঁর প্রেম একটু বেশিই। সবচেয়ে ফেভারিট—মিষ্টি দই।
নারীশক্তি
বহু ক্ষেত্রেই নারীরা যে যোগ্য মর্যাদা বা গুরুত্ব পান না, মানতে দ্বিধা নেই ক্যাথির। বলছিলেন, ‘সমানাধিকার ও প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধা—এই দু’টি জিনিস পেলে মহিলারা সমাজ গঠনে বড় ভূমিকা নিতে পারেন। আমাদের তরফে মহিলাদের ক্ষমতায়নে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মূলধন জোগাড় করা থেকে হিসেব রাখা, ব্যবসার সমস্ত খুঁটিনাটিই তাঁদের শেখানো হয়। যাতে শিক্ষা, পরিবারের দেখভালের পাশাপাশি স্বনির্ভর প্রকল্প, এমনকী ব্যবসাও শুরু করতে পারেন তাঁরা। উত্তর-পূর্বের একাধিক রাজ্যের পাশাপাশি ঝাড়খণ্ড ও বাংলাতেও এই ধরনের স্বনির্ভর প্রকল্প প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’
মমতা থেকে কমলা
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। দেশীয় রাজনীতির নিরিখেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতে রীতিমতো মুগ্ধ ক্যাথি। বলছিলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এরাজ্যে বিভিন্ন বিষয়ে যেভাবে নানা উদ্যোগ-পদক্ষেপ নেন, তা প্রশংসনীয়।’
মমতায় মুগ্ধতার পাশাপাশি কোথাও বুঝি প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট না পাওয়ায় আশাভঙ্গের হালকা ছোঁয়া রয়েছে মনে। যদিও আমেরিকা একদিন ঠিক মহিলা প্রেসিডেন্ট পাবেই, বিশ্বাস করেন কনসাল জেনারেল। তাঁর মতে, রাজনীতিতে আরও মহিলার যোগ দেওয়া উচিত।
বিশেষ নজর শিক্ষায়
চিকিৎসা, ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে গবেষণা— বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখনও সংখ্যার বিচারে মেয়েদের থেকে এগিয়ে ছেলেরা। এই ব্যবধান দ্রুত কমাতে দুই দেশই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। চলতি বছরে ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পড়ুয়া মার্কিন মুলুকে গিয়েছে। কিন্তু সেই তালিকায় উত্তর-পূর্ব ভারত কিছুটা পিছিয়ে। আগ্রহী পড়ুয়াদের সাহায্য করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তৈরি হও...
ভারত হোক বা আমেরিকা, সামনে এগতে গেলে নানা চ্যালেঞ্জের যে মোকাবিলা করতে হবে, তাও জানাতে ভোলেননি ক্যাথি। তুলে ধরেন কর্মজীবনের শুরুর দিনের কথা। মার্কিন বিদেশ দপ্তরে যে বিভাগে তিনি যোগ দিয়েছিলেন, ১০ জনের সেই অফিসে তিনিই ছিলেন একমাত্র মহিলা। তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে ক্যাথির বার্তা—‘স্বপ্ন দেখো। নিজেকে কখনও নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বেঁধে ফেলো না। যে লক্ষ্য নিয়েছ, তা পূরণ হবেই। কখনও হয়তো ঝড়ঝাপ্টা আসবে, কিন্তু নিজের প্রতি বিশ্বাস হারিও না। সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখো। অন্য মহিলাদেরও এগতে সাহায্য করো।’
সংসার সামলাতে দশভুজা
কাজের হাজারো চাপ। তার মধ্যেও পরিবারের দিকে থাকে পুরো নজর। ক্যাথির কথায়, ‘মাঝেমধ্যে মনে হয়, ২৪ ঘণ্টা বুঝি যথেষ্ট নয়। হাতে কোনও জাদু ছড়ি থাকলে ভালো হতো। কিন্তু তা তো নেই। তাই কাজের শেষে যতটা সময় পাই, পরিবারের সঙ্গে কাটাই। রোজ রাতে সবাই একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করি। এটা বহু পুরনো প্রথা বলতে পারেন। সারাদিন আমাদের কার কেমন কাটল, কী হল— এই সমস্ত গল্প হয়। এখন বড় মেয়ে কলেজ থেকে কিছুদিনের ছুটিতে বাড়ি এসেছে, আমরা একসঙ্গে নানা ধরনের খেলা খেলি, গান শুনি, গল্প করি। সঙ্গে নিয়মিত শরীরচর্চা। ওটা মাস্ট।’
নিউ ইয়ারে বাংলা
আলাপচারিতা শেষ। ওঠার পালা। কিছুটা চমকে দিয়েই ক্যাথি হঠাৎ ভাঙা ভাঙা বাংলায় বললেন, ‘ধন্যবাদ, নমস্কার।’ চমকের তখনও বাকি ছিল। জানালেন, আরও বাংলা শিখবেন। এটাই নতুন বছরের রেজোলিউশন!