কাজকর্মে নতুন সুযোগ আসতে পারে। কর্ম সাফল্যে আনন্দ লাভ। ব্যবসায় উন্নতি। গবেষকদের পক্ষে শুভ। ... বিশদ
একটা সময় ছিল যখন হিন্দুশাস্ত্রে বাল্যবিবাহের প্রচলন ছিল। মেয়েদের বাচ্চাবেলায়, যখন তাদের পুতুল খেলার বয়স, তখনই বিয়ে দেওয়া হতো। সেই সময় কন্যা সম্প্রদানের প্রথাটি চালু হয়। সম্প্রদান অর্থাৎ কন্যাকে তার পিতা তার স্বামীর হাতে সঁপে দিলেন। বাবার হাত থেকে মেয়ের সব দায় গিয়ে পড়ল স্বামীর উপর। এবার থেকে মেয়েটির ভালোমন্দ, দেখভালের সব দায়িত্ব স্বামীর। অর্থাৎ বাবার হাত থেকে কন্যা চলে গেল স্বামীর অধীনে।
এখানে অনেকগুলো জিনিস খেয়াল করা দরকার। প্রথমত যে বয়সে মেয়েটির বিয়ে হচ্ছে সেটা নিতান্তই তার বাল্যকাল। দ্বিতীয়ত ওই বয়সে মেয়েটির দেখভালের জন্য একজন অবশ্যই প্রয়োজন। তৃতীয়ত মেয়েটি বিয়ের আগে বাবার অধীনে, বিয়ের পর স্বামীর, কারণ সে নিজে অপরিণতবয়স্ক। ফলে এমন পরিস্থিতিতে কন্যা সম্প্রদান তবুও বা যুক্তিযুক্ত। কিন্তু যুগ বদলের পরেও, মেয়েরা যখন স্বাবলম্বী, তখনও হিন্দুশাস্ত্র সেই কন্যা সম্প্রদানের প্রথাটাকেই আঁকড়ে ধরে রয়েছে এটা বড্ড হাস্যকর। এখন মেয়েরা একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর বিয়ে করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বনির্ভর হওয়ার পরেই মেয়েদের বিয়ে হয়। তবে কেন কন্যা সম্প্রদান? স্বনির্ভর কন্যাটি তো বাবার অধীনে নেই। সে নিজেই নিজের দায়িত্ব নিতে পারে। তবে কেন কন্যা সম্প্রদান? এই প্রশ্নগুলো কিন্তু ক্রমশ আমাদের সমাজের মনে জাগা উচিত। মেয়েদের সদর্পে বলা উচিত তারা স্বাধীন। অতএব কন্যা সম্প্রদান বন্ধ করা হোক। নাহলে নারী স্বাধীনতা কেবলই একটা বিপ্লবের পর্যায় থেকে যাবে। সমাজের মনে নারী কোনওদিনই সঠিক অর্থে স্বাধীন হতে পারবে না।
হিন্দু শাস্ত্রমতে বিবাহে আরও একটি প্রথার পরিবর্তন প্রয়োজন। সত্যি বলতে কী, বেশ কিছু প্রথারই পরিবর্তন প্রয়োজন, কিন্তু এই স্বল্প পরিসরে আর একটির কথাই এখানে আলোচনা করব, তা হল গোত্রান্তর। হিন্দু আনুষ্ঠানিক বিয়েতে গোত্রান্তর একটা বড় জায়েগা জুড়ে রয়েছে। অথচ এই প্রথাটি নিতান্তই ভিত্তিহীন। তার কারণটা বুঝতে গেলে গোত্র শব্দের অর্থটা ব্যাখ্যা করা দরকার। বৈদিক এই নিয়মটির আধুনিক অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘স্কুলিং’। অর্থাৎ বৈদিক যুগে আমাদের পূর্ব পুরুষরা বিভিন্ন ঋষির কাছে পড়াশোনা শিখতেন, যে ঋষির কাছে তাঁরা শিক্ষা লাভ করতেন তাঁর নামেই তাঁদের গোত্র নির্ধারিত হতো। আমরা পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বাস করি বলে পিতৃপুরুষের গোত্রই আমাদের গোত্র হিসেবে গৃহীত হয়। তাহলে বিয়ের পর হঠাৎ তা বদলাবে কেন? মেয়েরা যখন স্বাবলম্বী তখন কেন তারা বিয়ের পর নিজের পরিচয় বদল করবে? একটি ছেলে যদি সারা জীবন একটাই পরিচয়ে (বাবার) বাঁচতে পারে তাহলে একটি মেয়ে কেন তা পারবে না?
আগেকার যুগে যখন বাল্যবিবাহের প্রচলন ছিল, মেয়েটির নিজস্ব কোনও পরিচিতি তৈরি হওয়ার আগেই তার বিয়ে দেওয়া হতো, তখন তবুও যদি বা গোত্রান্তরের একটা যুক্তি ছিল। মেয়েটি স্বাবলম্বী নয়, স্বনির্ভর নয়, সর্ব অর্থেই স্বামীর অধীনে তার স্থান তাহলে তার পরিচয়ে পরিচিত হতে ক্ষতি কি? কিন্তু এখন তো সে যুক্তি খাটে না। মেয়েরা এখন সম্পূর্ণই নিজের পরিচয় গড়ে তোলে বিয়ের আগে। তাহলে কেন গোত্রান্তর? কেনই বা পদবি বদল? দ্বিতীয়টির বিরুদ্ধে অবশ্য অনেক মেয়েই এখন সরব হয়ে উঠেছে। কিন্তু খানিকটা বেখেয়ালে, খানিকটা অজ্ঞতার কারণে হিন্দু বৈবাহিক রীতিতে অবাধে চলছে গোত্রান্তর। এই ধরনের প্রথাগুলো যতদিন না বন্ধ করা যাবে ততদিন নারী স্বাধীনতার মাথায় প্রশ্নবোধক চিহ্নটা খাঁড়ার মতো ঝুলেই থাকবে।