পড়ে গিয়ে বা পথ দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্তির যোগ থাকায় সতর্ক হন। কর্মে উন্নতি ও সাফল্যের যোগ। ... বিশদ
রায়চৌধুরী বাড়িতে এখন উৎসব বিরতি। সদ্য বাড়ির বড় ছেলের বিয়ে মিটেছে। বাড়িতে নতুন বউ এসেছে। সাবেকিয়ানার বহরে, এলাহি আয়োজন আর উৎসবের আমেজে হাজারো ব্যস্ততার ভিড়েও রঙিন কাগজে মোড়া উপহার বাক্সগুলো কিন্তু কারও নজর এড়িয়ে যায়নি। কাজেই অনুষ্ঠানের ধকল কাটিয়ে বিকেলের চায়ের আড্ডার মাঝেই সকলে মিলে উপহারগুলো দেখার সাধ জাগল। বাড়ির নতুন বউকে পাশে নিয়ে একের পর এক রঙিন কাগজ খুলে উপহার দেখা শুরু হল। আর তারই সঙ্গে চলতে থাকল নানারকমের রসিক মন্তব্য! কোনওটায় প্রশংসা, বিস্ময় আবার কোনওটা নিয়ে হাসিঠাট্টা।
পাড়া-প্রতিবেশী থেকে আত্মীয়-পরিজন— শীতের এই মরশুমে একের পর এক বিয়েবাড়ির নিমন্ত্রণ রক্ষা যেন শীতেরই আনুষঙ্গিক পর্ব। তাই পাল্লা দিয়ে চলে প্রিয় মানুষদের উপহার দেওয়ার নানা জল্পনা-পরিকল্পনা। ইদানীং বিয়ের উপহার পরিকল্পনাতেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। আজ থেকে প্রায় ৩০-৪০ বছর আগের বিয়ের উপহারগুলো নবদম্পতির নতুন সংসার গোছানোর ইচ্ছাকে সামনে রেখে পরিকল্পনা করা হতো। সেখানে তাই স্বচ্ছন্দেই জায়গা করে নিত পিতলের থালা-বাটি, গৃহসজ্জার নানাবিধ উপকরণ, নতুন শাড়ি, বিছানার চাদর। বর্তমান দিনকালে উপহার পরিকল্পনায় এসেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। আধুনিক ভাবনাকে সামনে রেখে উপহারের তালিকাতে কী কী রাখা যেতে পারে তা একবার দেখে নেওয়া যাক।
সাধ এবং সাধ্যের মেলবন্ধন: ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনের বিয়েতে সোনা কিংবা রুপোর অলংকার দেওয়ার চল বেশ পুরনো। সোনার মূল্য এখন নাগালের বাইরে থাকলেও সাধ এবং সাধ্যপূরণে এই দুইয়ের জুড়ি মেলা ভার! তবে এখন যুগের চাহিদাকে মাথায় রেখে কম ওজনেরও সোনা-রুপোর রকমারি অলঙ্কার তৈরি হচ্ছে। আর তার সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত দিচ্ছে নজরকাড়া নকশা এবং উপহারের মানানসই প্যাকেজিং। বিয়ের অনুষ্ঠানে উপহারস্বরূপ শাড়ি দেওয়ার রীতিটিও বহু পুরনো। প্রিয়জনের মুখের হাসি আর আপনার রুচি দু’টিই বজায় রাখতে বেছে নিতে পারেন কাঞ্জিভরম, কাঞ্চিপুরম, ঢাকাই-জামদানি, বিষ্ণুপুরী সিল্ক, বালুচরী, স্বর্ণচরীর মতো আভিজাত্যে ভরপুর শাড়িগুলিকে। শাড়ির রং নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজের রুচির পাশাপাশি নতুন বউয়ের পছন্দ-অপছন্দের কথাও মনে রাখবেন। এছাড়াও সাধ এবং সাধ্যকে মাথায় রেখে কিনতে পারেন রুপোর থালা, বাটি, চামচের সেট— যা নবদম্পতি পরবর্তী সময়ে যে কোনও মাঙ্গলিক আচারে ব্যবহার করতে পারবে।
সাধ্যের মধ্যে ইচ্ছাপূরণ: প্রিয় মানুষ কিংবা বন্ধুর বিয়েতে কী উপহার দেবেন এই নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন, অথচ মাসের শেষে পকেটে টান! সেক্ষেত্রে স্বল্প বাজেটের মধ্যেই আপনি আপনার সাধ পূরণ করতে পারেন। বর্তমান দিনে বিয়েতে ‘গিফট ভাউচার’ বা অনলাইন মার্কেটিং সাইটের নানা মূল্যের গিফট কার্ড উপহার হিসেবে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি উপহার নির্বাচনের দায়ভার থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। নবদম্পতি তাঁদের সময়-সুযোগ মতো নিজেদের পছন্দের জিনিস কিনে নিতে পারবেন। এছাড়াও বাজেট-ফ্রেন্ডলি উপহারের তালিকায় পাবেন গৃহসজ্জার রকমারি জিনিস যেমন— ডিজিটাল ফোটো অ্যালবাম, প্রিয়জনের ছবি দিয়ে সাজানো কফি মগ, কুশন, দেওয়াল ঘড়ি, ক্রিস্টালের নানারকম ঘর সাজানোর জিনিস, রকমারি ফুলদানি ইত্যাদি। নবদম্পতির চাহিদা এবং রুচিকে মাথায় রেখে তাঁদের হাতে উপহারস্বরূপ তুলে দিতে পারেন ডিজিটাল ওয়াচ, ইয়ার পড কিংবা ব্লু-টুথ স্পিকার। বই ভালোবাসেন এমন দম্পতির মন ভালো করার ক্ষেত্রে অবশ্যই উপহারের তালিকায় রাখতে পারেন জনপ্রিয় লেখকের সদ্য প্রকাশিত বই, আর তার সঙ্গে দিতে পারেন হ্যান্ডমেড পেপার দিয়ে বানানো সুন্দর ডায়েরি। আপনার বাজেটের মধ্যেই আপনি নির্বাচন করতে পারেন মিনি কফি মেকার, মিনি জুসার মিক্সারের সেটগুলিকেও। এগুলির বেশিরভাগই পোর্টেবল হওয়ার জন্য এদিক-সেদিক ঘুরতে গেলেও বেশ অনায়াসেই সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া যায়। আপনার বাজেটের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে নির্বাচন করতে পারেন রকমারি কাটলারি সেট, ডিনার সেট। আর যদি শেষ মুহূর্তে বিয়েবাড়ির নিমন্ত্রণ রক্ষার দায় এসে পড়ে সেক্ষেত্রে আপনি অনায়াসেই উপহারস্বরূপ নগদ অর্থ কিংবা গিফট চেক দিতে পারেন। এক্ষেত্রে রকমারি খাম ব্যবহারের পাশাপাশি, যদি সম্ভব হয় নবদম্পতির জন্য দু’-চার কলি ছড়া বা পদ্য লিখে দিতে পারেন। যাতে, পরবর্তী সময়ে সুসজ্জিত এই খামটিও স্থান পায় তাঁদের সংরক্ষণের তালিকাতে।
পরিবেশবান্ধব রকমারি উপহার: পরিবেশ সচেতনতার মনোভাব এখন জায়গা করে নিয়েছে উপহারের পরিকল্পনায়। পরিবেশবান্ধব রকমারি উপহারের তালিকায় রয়েছে শীতকালীন নানারকম ফুলগাছের চারা, বীজ এবং অত্যাধুনিক গাছ সাজানোর টব। এছাড়াও পরিবেশ বান্ধব উপহারের তালিকায় যুক্ত করতে পারেন পরিবেশবান্ধব প্রসাধনী সামগ্রী। এগুলি রাসায়নিক যোগ করা প্রসাধনীর মতো পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর নয়। আপনার এই ভিন্ন স্বাদের উপহার পরিকল্পনা নিঃসন্দেহেই প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটাবে।