বিশেষ কোনও পারিবারিক কারণে মানসিক দুশ্চিন্তা বাড়তে পারে। কাজকর্মের ক্ষেত্রে বিশেষ সুখবর পেতে পারেন। ... বিশদ
মগের মুকুল কথাটার সঙ্গে তো কমবেশি সকলেই পরিচিত তাই না? শব্দের অর্থ চূড়ান্ত অরাজকতা বা লুটতরাজের জায়গা। ভাবছেন এ আবার কী! রান্নার গল্পের মধ্যে মগের মুলুক এল কোথা থেকে? তাহলে গল্পটা গোড়া থেকেই বলি শুনুন। সে বহু বছর আগের কথা। মোটামুটি ১৫২৮ সাল। পর্তুগিজ জাহাজ এসে ভিড়ল চট্টগ্রামে। সেই সময় ঢাকার নবাবের অধীনে ছিল চিটাগং বা চট্টগ্রাম। পর্তুগিজরা তাঁর কাছে কিছুটা জমি চায় ব্যবসার করবে বলে। সেই সময় চট্টগ্রাম, বর্মা আর ভারত সংলগ্ন একটি লম্বাটে এলাকা ছিল মগদের অধীনে। তার থেকেই চট্টগ্রামের খানিকটা অংশ পর্তুগিজদের দেওয়া হল। এবার ঔপনিবেশিকদের যেমন স্বভাব, তারা সূচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরতে চায়, এক্ষেত্রেও সেই নিয়মের অন্যথা হল না। ক্রমশ তারা নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে লাগল। একটার পর একটা গ্রাম দখল করতে করতে ঢুকে পড়ল মগ অধীনস্থ অঞ্চলে। শুরু হল লুটতরাজ, অরাজকতা, গ্রাম দখল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে, মহিলা ও শিশুদের অত্যাচার করে, পুরুষদের ক্রীতদাস বানাতে শুরু করল পর্তুগিজরা। এরপর এই ক্রীতদাসদের নিয়ে গিয়ে নিজেদের দেশজ নৌকা বা কান্ট্রি বোটে তুলত পর্তুগিজরা। সেখানে তাদের দিয়ে নিজেদের আরাম অবসরের ব্যবস্থা করত। এইভাবেই মগদের রন্ধনক্ষমতা ধরা পড়ল পর্তুগিজদের চোখে। তারা নৌকার ক্যাপ্টেনদের জন্য যে রান্না করত তা অত্যন্ত সুখ্যাতি লাভ করে। তারই অন্যতম এই চিকেন কান্ট্রি ক্যাপ্টেন। মগ ক্রীতদাসরা দেশজ নৌকার ক্যাপ্টেনদের জন্য মুরগির মাংসের এই বিশেষ পদটি রাঁধত বলেই পদের এমন নাম। আসুন সেই রান্নার পদ্ধতিটা জেনে নিই।
চিকেন কান্ট্রি ক্যাপ্টেন
উপকরণ: চিকেন লেগপিস ১ কেজি, আলু লম্বা স্লাইস করে কাটা ২টো, বাঁধাকপির পাতা কুচি ৫০০ গ্রাম, ডিম ২টো, মাঝারি পেঁয়াজ স্লাইস করে কাটা ৫-৭টা, নারকেল কোরা ১ কাপ, কাঁচালঙ্কা ৫-৬টা, কালো সর্ষে ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ৩ টেবিল চামচ, আদাবাটা ২ টেবিল চামচ, গোলমরিচ গুঁড়ো ১ চামচ, ঘি ১ টেবিল চামচ, নুন স্বাদমতো, সাদা তেল প্রয়োজন অনুযায়ী।
পদ্ধতি: প্রথমে কড়াইতে সাদা তেল দিয়ে গরম করে নিন। তাতে সর্ষে ফোড়ন দিন। ফোড়নের সুগন্ধ বেরলে তাতে অর্ধেকটা স্লাইস করে কাটা পেঁয়াজ ও দু’-তিনটে কাঁচালঙ্কা দিয়ে দিন। এবার তা ভেজে নিয়ে রসুন ও আদাবাটা যোগ করে বেশ ভালো করে তা কষিয়ে নিন। পেঁয়াজ-আদা-রসুনের কাঁচা গন্ধ চলে না যাওয়া পর্যন্ত কষিয়ে নেবেন। তারপর একটু একটু করে বাঁধাকপি দিন আর নেড়ে মেশাতে থাকুন। এবার এতে স্বাদমতো নুন যোগ করুন। এরপর বাঁধাকপি সম্পূর্ণ রান্না করে নিন। এরপর তার সঙ্গে মেশান নারকেল কোরা। মশলার সঙ্গে নারকেল আর বাঁধাকপি মিশে গেলে বুঝবেন তৈরি হয়েছে বাঁধাকপির ফুগত। এটি পরিবেশন করতে হবে চিকেন কান্ট্রি ক্যাপ্টেনের সঙ্গে। আপাতত তা তুলে রেখে দিন।
এবার অন্য একটি কড়াইতে তেল গরম করে বাকি পেঁয়াজ ভেজে নিন। এই পেঁয়াজ বেরেস্তা করে ভাজতে হবে। অর্থাৎ লাল করে ভেজে নিতে হবে। তারপর তা তুলে রেখে কড়াইতে আবারও তেল গরম করে নিন। তার সঙ্গে ঘিও দিন। সবটা গরম হলে তাতে আদা বাটা ও রসুন বাটা মেশান। ভেজে নিন ভালো করে। এরপর তাতে কিছু কাঁচালঙ্কা দিয়ে একই সঙ্গে মাংসের টুকরোগুলো দিয়ে দিন। তাতে হালকা রং ধরা পর্যন্ত ভাজুন। মাংসে রং ধরলে গোলমরিচ গুঁড়ো ও নুন মিশিয়ে নেড়ে নিন। সবটা মিশে গেলে দু’কাপ মতো জল দিয়ে মাংস ঢাকা দিন। মাংস সেদ্ধ ও নরম হলে ঢাকা খুলে আঁচ বাড়িয়ে বাড়তি জল টানিয়ে নিন। ঝোল গা মাখা হলে কড়াই থেকে মাংস নামিয়ে রাখুন। এবার কড়াইতে জল ও নুন দিয়ে ফোটাতে দিন। সেই জলে আধসেদ্ধ করুন আলু। তারপর তা জল থেকে তুলে জল ঝরিয়ে ছাঁকা তেলে ভেজে নিন। বেশ লালচে করে ভেজে তুলে নিন। পরিবেশনের সময় চিকেনের উপর পেঁয়াজের বেরেস্তা ছড়িয়ে দিন। তার সঙ্গে আলুভাজা, বাঁধাকপির ফুগত, ডিম সেদ্ধ আর পাউরুটি সাজিয়ে পরিবেশন করুন।