দীর্ঘদিনের আটকে থাকা কর্মে সফলতা। ব্যবসায় বাড়তি বিনিয়োগের প্রচেষ্টায় সফলতা। ভ্রমণ যোগ আছে। ... বিশদ
বাঙালির দৈনন্দিন রান্নাঘরের উপকরণ হিসেবে জাফরানের ভূমিকা রয়েছে। শরীরের নানা রোগ ব্যাধির উপশমেও তা কাজে লাগে। রূপচর্চাতেও কেশরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বলে জানালেন কসমেটোলজিস্ট এবং এস্থেটিক কনসালটেন্ট সায়ন্তন দাস। মূলত এই উপকরণ ত্বককে বার্ধক্যের হাত থেকে বাঁচায়। যে কোনও ধরনের দাগ, ছোপ দূর করতে কাজে লাগে। সায়ন্তন জানালেন, জাফরানের মধ্যে ক্রোসিন ও ক্রোসেটিন নামে দু’টি পদার্থ রয়েছে। যা ত্বকের বলিরেখা কমায়। মেলানোসাইট কোষ থেকে যে মেলানিন নিঃসরণ হয়, তার ক্ষরণ কম করায় কেশর। ইউ মেলানিন এবং ফিউ মেলানিন নিঃসরণ হয়। ইউ মেলানিন বেশি বেরলে পিগমেনটেশনের সমস্যা দেখা দেয়। জাফরান ফিউ মেলানিনের নিঃসরণ বৃদ্ধি করে। টক দই, মধুর সঙ্গে জাফরান মিশিয়ে লাগালে ত্বক উজ্জ্বল হবে।
সায়ন্তনের কথায়, ‘জাফরানের মধ্যে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে। সেজন্য যে কোনও ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুর সংক্রমণ রোধে ওষুধের মতো কাজ করে। দীর্ঘদিন ব্রণর সমস্যায় ভুগলে, জাফরান এবং চন্দন বেটে একসঙ্গে লাগান। ব্রণর দাগ থাকলে ফ্রেশ ক্রিমের সঙ্গে জাফরান মিশিয়ে লাগালে সেই দাগ কমবে।’
কাজের অত্যধিক চাপ, লাইফস্টাইল সংক্রান্ত নানা সমস্যায় এখন জেরবার বেশিরভাগ মানুষ। ফলশ্রুতি হিসেবে কম ঘুম, চোখের তলায় ডার্ক সার্কলের সমস্যায় ভোগেন অনেকে। চোখের নীচে ফোলা ভাব তৈরি হয়। তা নিরাময়ে কেশর কাজে লাগে। সায়ন্তনের পরামর্শ, ‘কুমকুমাদি তেলের মূল উপাদান কেশর। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল বা আমন্ড অয়েলের মধ্যে কিছুদিন কেশর ভিজিয়ে রাখতে পারেন। এটা রোদে রাখুন। তারপর চোখের চারপাশে মাসাজ করুন। চোখ থেকে অতিরিক্ত জল পড়ার সমস্যা থাকলে সেটাও মেটাবে। ফলে চোখের ফোলা ভাব কমবে। চোখের চারপাশে বলিরেখা এবং ডার্ক সার্কলের সমস্যা দূর করবে।’
ত্বকে ট্যান পড়ে যাওয়া এখন খুব সাধারণ সমস্যা। তা থেকে দূরে থাকার জন্য কেশর ব্যবহার করতে পারেন। রূপবিশেষজ্ঞ জানালেন, যাঁদের রোদে পুড়ে ত্বক কালো হয়ে গিয়েছে, তাঁরা অ্যান্টি এজিং হিসেবে জাফরান ব্যবহার করতে পারেন। ত্বকে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট কমে গেলে বলিরেখা আসে। ফলে প্যাক হিসেবে জাফরান সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। আবার জলে কেশর ভিজিয়ে রেখে খালি পেটে খেলেও উপকার পাবেন। জাফরানের মধ্যে যে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড আছে, তা সব ধরনের ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
কেশর নানা কিছুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ভালো ফল পাবেন। সায়ন্তন বললেন, ‘রাতে জাফরান এবং কালো কিশমিশ খেলে অ্যাসিডিটি, বদহজমের সমস্যা দূর হয়। এর মধ্যে রিফোফিবিন নামে একটা উপাদান রয়েছে, যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি রয়েছে। যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ডিপ্রেশন কাটাতেও সাহায্য করে কেশর। স্নায়ু শান্ত করে। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন পাওয়া যায়। যা উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।’
জাফরানের ফুলের পরাগরেণু আমরা ব্যবহার করি। কিন্তু এই ফুলের পাপড়িরও গুণ রয়েছে। সায়ন্তন জানালেন, থায়মাইন, মিনারেল, প্রোটিন, স্টার্চ, অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে জাফরানের মধ্যে। যা সার্বিক ভালো থাকার ক্ষেত্রে দারুণ কাজে লাগে। তবে জাফরান অত্যন্ত মূল্যবান। সকলের পক্ষে তা কেনা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রেও উপায়? সায়ন্তনের কথায়, ‘জাফরান থেকে মূলত যে উপাদান পাওয়া যায়, তা কাছাকাছি মাত্রায় পাবেন হলুদ ও সূর্যমুখী ফুলের মধ্যে। এগুলো বাজেট ফ্রেন্ডলি বিকল্প হতে পারে।’ কেশর এমনিতে নিরাপদ। কিন্তু তা নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। বেশি ব্যবহারে বিপদ হতে পারে। ফলে আপনার ত্বকের সমস্যায় কতটা পরিমাণ কেশর ব্যবহার করবেন, তা জানতে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।