দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় থেকে অর্থাগম ও পুনঃ সঞ্চয়। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি বা নতুন কর্ম লাভের সম্ভাবনা। মন ... বিশদ
নাম ও নামী এক নয়। যেমন জল শব্দ জল নয়, জল আলাদা বস্তু। গেলাসের ভেতর যে বস্তুটি আছে, জল শব্দটি তার পরিচিত স্বরূপ। জল একটি শব্দ, উহা সেই বস্তুটি নয়। জল শব্দ যদি জল হতো তবে জল জল করে ডাকলে পিপাসা দূরীভূত হতো। তা যখন হয় না তখন জল শব্দ জল নয়। অতএব ঈশ্বর শব্দও ঈশ্বর নয় বা হরি শব্দও হরি নয়। সুতরাং হরি হরি করে ডাকলে স্থিরপ্রাণরূপ হরির সাড়া পাওয়া সম্ভব নয়। নাম ও রূপ জীবদেহের বা কোন বস্তুর হয়। কিন্তু ঐ দেহের যিনি অধিষ্ঠাত্রী দেবতা তাঁর কোন নাম ও রূপ নেই। তিনি রূপাতীত নিরঞ্জন। তিনি যখন যে দেহে থাকেন তখন তিনি সেই রূপ ধারণ করেন বটে কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে তিনি নাম ও রূপের অতীত। যেমন আকাশের রূপ নেই অথচ ঘটস্থ আকাশকে ঘটাকাশ বলা হয়। তিনি (দেহী) আছেন বলে নাম ও রূপের অস্তিত্ব; অতএব তিনি সত্য, নাম-রূপ সত্য নয়। দেহ অনিত্য অতএব নাম-রূপও অনিত্য। দেহের নাশ আছে অতএব নাম রূপেরও নাশ আছে। রামবাবুকে ডাকলে তিনি সাড়া দেন ও নিকটে আসেন, কারণ তিনি পরিচিত। যদি সর্বভূত সাড়া দিত ও কাছে আসত তাহলে নাম ও রূপ এক হতো। কোন ব্যক্তিকে প্রত্যক্ষ দর্শন ব্যতিরেকে তার নাম বা রূপ শ্রবণে তাকে জানা যায় না। নাম ও রূপ সেই অধিষ্ঠাত্রী দেবতার ছায়া মাত্র। ছায়া যেমন সত্য নয়, নাম-রূপও তেমনি সত্য নয়। বর্তমান কালে অনেকের ধারণা আছে যে হরিনাম সংকীর্তনে মোক্ষলাভ হয়, বস্তুতঃ তা নয়। শাস্ত্রে শব্দকে ব্রহ্ম বলা হয়েছে। কিন্তু সে কোন্ শব্দ? মুখ অর্থাৎ ইন্দ্রিয় দ্বারায় উচ্চারিত শব্দ নয়। সে শব্দ জীবহৃদয়ে অবিরাম হচ্ছে, যাকে অনাহত এবং ওঁকার ধ্বনি বলে। অনাহত অর্থাৎ বিনা আঘাতে যে ধ্বনি নির্গত হয়। জীবের সেদিকে লক্ষ্য নেই, লক্ষ্য করতেও চায় না। সেই অনাহত বা ওঁকার ধ্বনিকে লক্ষ্য করেই শাস্ত্রে শব্দকে ব্রহ্ম বলা হয়েছে। প্রাণকর্ম করতে করতে যখন দেহবোধ চলে যায় কেবল তখনই জীব সেই শব্দ শুনতে পায়। তখন চক্ষু, জিহ্বা, ওষ্ঠ এমন কি দেহও কম্পনহীন প্রদীপ শিখার ন্যায় স্থির হয়ে যায়। এ অবস্থায় সংকীর্তন করে কে?
শ্বাস-প্রশ্বাসই জীবের আয়ু। জীব কত বছর বাঁচল উহা তার আয়ু নয়। কতখানি শ্বাসের পুঁজি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে, উহাই তার আয়ু। অর্থাৎ প্রাণ যতক্ষণ চঞ্চল থাকবে ততক্ষণই শ্বাস-প্রশ্বাস চলবে এবং ততক্ষণই জীব জীবিত থাকবে। জীবিত বলেই তাকেই জীব বলা হয় এবং প্রাণের এই চঞ্চল অবস্থাকেই জীবন বলা হয়। প্রাণ চঞ্চল বলে জীবের শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে, উহাই প্রাণের কর্ম বা উহাই জীবের জীবিতাবস্থা, উহাই চঞ্চলা প্রকৃতি। কোন কিছুর বিনিময়ে কোন কিছু পাওয়া যায়। যেমন কিছু অর্থের বিনিময়ে কোন দ্রব্য পাওয়া যায়, তেমনি ব্যায়াম করলে সুস্বাস্থ্য লাভ হয়। অর্থাৎ ব্যায়াম করলে দ্রুত ও লম্বা শ্বাস ত্যাগ হয় এবং এইভাবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত শ্বাস-প্রশ্বাস খরচ করে তার বিনিময়ে সুস্বাস্থ্য লাভ করা যায়। সুস্বাস্থ্য ভাল ঠিকই কিন্তু কিছু শ্বাস-প্রশ্বাসের বিনিময় অর্থাৎ কিছু পরমায়ুর বিনিময় ছাড়া পাওয়া যায় না। তেমনি চঞ্চলতার বিনিময়ে স্থিরত্বকে পাওয়া যায়। প্রাণকর্মও চঞ্চল কর্ম; সেই চঞ্চল কর্মরূপ প্রাণকর্ম করতে করতে যখন চঞ্চলতা চলে যায় তখনই স্থিরপ্রাণরূপ আত্মনারায়ণের উপলব্ধি হয়। ইহাই সেই কর্মের ফল। প্রত্যেক কর্ম অবশ্যই ফল উৎপন্ন করে। ঠিক যেমন তাঁতীর তাঁত বোনা।