লোককে খাওয়ানো এক রকম তাঁরই সেবা করা। সব জীবের ভিতর তিনিই অগ্নিরূপে রয়েছেন। লোককে খাওয়ানো কিনা তাঁহাকে আহুতি দেওয়া। কিন্তু তা বলে অসৎ লোককে খাওয়াতে নাই। কারুকে নিন্দা কোরো না, পোকাটিরও না। নারায়ণই এই সব রূপ ধরে রয়েছেন। দুষ্ট খারাপ লোককেও পূজা করা যায়। যেমন ভক্তি প্রার্থনা করবে তেমনি এটাও বলবে—‘যেন কারও নিন্দা না করি।’ ঈশ্বর দুবার হাসেন। যখন ভা’য়ে ভা’য়ে দড়ি ধরে জমি বখ্রা করে নেয় আর বলে ‘ঐ দিকটা আমার ওদিকটা তোমার’—তখন একবার হাসেন। এই ভেবে হাসেন, আমার জগৎব্রহ্মাণ্ড, কিন্তু ওরা বলছে, ‘এটা আমার ওটা তোমার,’। ধনীলোক দেখলেই সব মোসাহেব এসে জোটে। যেমন মরা গরু পেলে যত শকুনি এসে পড়ে। ওদের কথায় ভুলো না। মো-সাহেবেরা সব কথাতেই ‘আজ্ঞা হাঁ, অতি চমৎকার।’ আবার বলবে ‘আপনি দানী, জ্ঞানী, ধ্যানী।’ বলা তো নয় অমনি বাঁশ। যাদের টাকা আছে তারা তো মায়ের দেওয়ান, তাদের দান করা উচিত। সাধু, ভক্ত, দরিদ্র সামনে পড়লে কিছু দিতে হয়। পূর্ব্ব জন্মে যারা দান টান করে তাদেরই ধন হয়। কৃপণের ধন মামলা মোকদ্দমায়, চোর ডাকাতে, ডাক্তার খরচে, আবার বদ্ ছেলের দ্বারা উড়ে যায়। ওদেশে চাষারা মাঠে আল বাঁধে। যারা খুব যত্ন করে চারিদিকে আল দেয়, জলের তোড়ে তাদের জমির আল ভেঙ্গে যায়, আর জল বেরিয়ে গিয়ে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। তাই চাষারা আলে ঘাসের চাপড়া ধরিয়ে মাঝে মাঝে ছেঁদা করে রাখে, তাকে ঘোগ বলে। জল ঘোগ দিয়ে একটু একটু বেরিয়ে যায়, তখন জলের তোড়ে আল ভাঙ্গে না, আর ক্ষেতের উপর পলি পড়ে, সেই পলিতে ক্ষেত খুব উর্ব্বরা হয়ে খুব ফসল হয়। যে দান ধ্যান করে সে অনেক ফল লাভ করে; —চতুর্ব্বর্গ ফল।
এখানে আসবার সময় যা হোক এক পয়সার কিছু কিনে এনো। দেবতার স্থানে শুধু হাতে আসতে নেই। কিছু খাবার আনবে। এতে খুব ভাল হয়। দেখ এখানকার জন্য যখন কিছু আনবে তার আগ ভাগ কারুকে তুলে দিও না, দিলে উচ্ছিষ্ট হয়। ভগবানের ভোগে তা আর দেওয়া যায় না।
বেশী খেও না, আর শুচিবাই ছেড়ে দাও। শুচিবাইগ্রস্ত লোকদের কেবল অশুদ্ধ বিচার করতে গিয়ে সর্ব্বদা একটা অশুচির ভাব থেকে যায়। আচার যতটুকু দরকার ততটুকু করবে। বেশী বাড়াবাড়ি কোরো না। যাদের শুচিবাই, তাদের মধ্যে ঈশ্বর চিন্তা ঢোকা বড় কঠিন। তাদের জ্ঞান হয় না।
একাদশী করা ভাল। ওতে মন বড় পবিত্র হয়, আর ঈশ্বরেতে ভক্তি হয়। একাদশীতে খৈ দুধ খাবে। আর দু’রকম একাদশী আছে। ফলমূল খেয়ে, আর লুচি ছক্বা খেয়ে। প্রথম নির্জ্জলা একাদশী, জল পর্য্যন্ত খাবে না। সন্ন্যাসীর নির্জ্জলা একাদশী। তোমরা নির্জ্জলা একাদশী পারবে না। পূর্ণত্যাগী, একেবারে সব ভোগ ত্যাগ।
কুমারকৃষ্ণ নন্দী সংকলিত ‘শ্রীরামকৃষ্ণ বাণী ও শাস্ত্রপ্রমাণ’ থেকে