মেয়াদি সঞ্চয় বা পৈতৃক সম্পত্তি সূত্রে ধনাগম যোগ দেখা যায়। কাজকর্মের ক্ষেত্রে ও আর্থিক দিক ... বিশদ
এই নব-রাত্রিতে নেপাল, ভুটান, সিকিম ও তিব্বত প্রভৃতি দেশের বৌদ্ধরাও দেবীর পূজা করিয়া থাকেন। ভারতের বাহিরে চীন, জাপান, কম্বোজ, চম্পা, যবদ্বীপ (যাভা) প্রভৃতি দেশের যেখানে যেখানে হিন্দুধর্ম অথবা বৌদ্ধধর্ম প্রচারিত সেখানে সেখানেই শ্রীশ্রীদুর্গাদেবী পূজিতা হইয়া আসিতেছেন। জাপানে বৌদ্ধধর্ম প্রচারিত হইবার চল্লিশ বৎসর পরে রাজ্ঞী সিন্কোর রাজত্বকালে (৪৯৩-৬২৮ খ্রীষ্টাব্দ) চীন হইতে মহাযান-বৌদ্ধধর্মের অবলোকিতেশ্বর কোয়াননের মধ্যে একটি দেবীমূর্তির পূজা হইয়া থাকে। জাপানী ভাষায় তাঁহার নাম ‘চনষ্টী’। ইহা সংস্কৃত ‘চণ্ডী’ শব্দের অনুরূপ। তাঁহার আর একটি নাম ‘কোটীশ্রী’ অথবা ‘সপ্তকোটী বুদ্ধমাতৃকা চনষ্টীদেবী’। ইনিই হিন্দুদিগের শ্রীশ্রীদুর্গাদেবী।
চীন দেশের ক্যান্টন শহরের বৌদ্ধ মন্দিরে এক দেবীর মূর্তি আছে, তাঁহার শত হস্ত। ইনিও শ্রীশ্রীদুর্গাদেবীর অপর এক রূপ। মহাযান বৌদ্ধতন্ত্রে বজ্রতারার উল্লেখ আছে। ইনি তিব্বত, মহাচীন, জাপান প্রভৃতি দেশে এখনও পূজিতা হইয়া থাকেন। ইনিও শ্রীশ্রীদুর্গাদেবীর অন্যতম একটি মূর্তি। ঋগ্বেদে ‘দুর্গা’ নামটি পাওয়া যায় না সত্য, কিন্তু দুর্গাপূজার সময়ে যে ‘দেবীসূক্ত’ পাঠ করা হয় সেই সূক্তটি ঋগ্বেদে (১০/১২৫) আছে। ঐ দেবীসূক্তে যে জগন্মাতা আদ্যাশক্তি বর্ণিত হইয়াছেন তিনি অগ্নিরূপা। বৈদিক যুগে যাগযজ্ঞের প্রথা প্রচলিত ছিল। যজ্ঞের অগ্নিতে সেই সময়ে সকল দেবদেবীকে আবাহন করা হইত এবং যে দেবতার উদ্দেশ্যে আহুতি দেওয়া হইত সেই দেবতার নামে যজ্ঞীয়-অগ্নির নামকরণও করা হইত। এখনও প্রত্যেক বা প্রতিটি পূজার শেষে হোম না করিলে পূজা সম্পূর্ণ হয় না। বৈদিক যুগে দুর্গার প্রতিমা ছিল না। হব্যবাহী অগ্নিশিখাই তাঁহার (দুর্গার) রূপ। পরে যখন প্রতিমার প্রচলন হইল তখন সেই অগ্নিশিখার রূপই দেবীর গায়ের পীতাভ-রঙ বা বর্ণ হইয়া দাঁড়াইল।
ঋগ্বেদের খিল-অংশে দুর্গাদেবীকে ‘রাত্রিদেবী’ বলা হইয়াছে। যজুর্বেদের তৈত্তিরীয়-আরণ্যকে ঐ দেবী ‘হব্যবাহিনী-অগ্নি’ নামে অভিহিত হইয়াছেন। তাঁহার সপ্তজিহ্বাকে অথর্ববেদের অন্তর্গত মুণ্ডকোপনিষদে (১।২।৪) বর্ণনা করা হইয়াছে। যথা,—‘‘কালী করালী চ মনোজবা চ সুলোহিতা যা চ সুধূম্রবর্ণা/ স্ফুলিঙ্গিনী বিশ্বরুচী চ দেবী লেলায়মানা ইতি সপ্ত জিহ্বা।।’’ অর্থাৎ কালী করালী মনোজবা, সুলোহিতা, সুধূম্রবর্ণা, স্ফুলিঙ্গিনী, বিশ্বরুচী এই সপ্তজিহ্বার শিখার দ্বারা দেবতা হব্যকে (ঘৃতাহুতি) গ্রহণ করেন।