আয় বৃদ্ধি ও গৃহসুখ বৃদ্ধি। কর্মস্থলে সাফল্য ও প্রশংসা লাভের সম্ভাবনা। শরীর-স্বাস্থ্য বুঝে চলুন। ... বিশদ
অথচ মহামায়ার লীলাক্ষেত্রে মানুষকে দেখি তার ঐ সর্বোচ্চ স্বভাব থেকে বিচ্যুত জীব রূপে, যার ভিতর ক্রমাগত চলছে তিনটি গুণের খেলা। সত্ত্ব রজঃ তমঃ—এই ত্রিগুণাত্মিকা প্রকৃতি মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করেছে নানা গুণবৈচিত্র্যের ও ভাববৈচিত্র্যের। তাই সব মানুষের ধর্ম এক হয় না। বরং প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব ধর্ম হ’য়ে যায় আলাদা। পশুপাখী ইত্যাদি প্রাণীর বা অন্যান্য বস্তুর ধর্মের সঙ্গে মানুষের ধর্মের একটা বিরাট পার্থক্য এখানেই দৃষ্ট হয়। মানুষের ভিতরে তার জন্ম জন্মান্তরের সংস্কারের প্রভাব, পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রভাব, ইচ্ছাশক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তির প্রভাব ইত্যাদি বিশেষ ভাবে কাজ করে। ফলে ব্যক্তিগত ভাবেই নির্ধারিত হয় তার ধর্ম, তার প্রকৃতি, তার স্বভাব। কিন্তু এই ব্যক্তিধর্ম আবার ব্যক্তিমাত্রতেই ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রভাব বিস্তার করে তার পরিবারে, সমাজে, গোষ্ঠীতে এবং বৃহত্তর দেশে। তাই ধর্মের পরিভাষা স্বভাব বা স্ব-প্রকৃতির গণ্ডী থেকে বেরিয়ে মানুষের সামগ্রিক মঙ্গলের দিগন্তকে স্পর্শ করে।
ধর্মের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন—
“ধারণাদ্ধর্মমিত্যাহুর্ধর্মো ধারয়তে প্রজাঃ।
যৎস্যাৎ ধারণসংযুক্তং স ধর্ম ইতি নিশ্চয়ঃ।।
“মানুষকে যা ধারণ ক’রে রাখে বা ধরে রাখে তাই ধর্ম।” ধারণ করার তাৎপর্য এই যে, ধর্ম মানুষকে মনুষ্যত্বের অধিকারী ক’রে পশুত্বের ঊর্ধে ধরে রাখে; মানুষকে পশু থেকে আলাদা এবং উন্নততর জীবরূপে চিহ্নিত করে। ধর্মহীন হ’লে মানুষ আর পশুতে কোনও ভেদ থাকে না। ধর্ম মানুষকে সেই উচ্চাবস্থায় ধরে রাখে বলেই শাস্ত্রে বলা হয়েছে—“ধর্মো হি তেষাং অধিকো বিশেষো/ ধর্মেণ হীনাঃ পশুভিঃ সমানাঃ”। মানুষ তার আদিম অবস্থার গণ্ডীতে আবদ্ধ থাকতে চায় না, একটা উন্নততর অবস্থার দিকে যাবার তাগিদ বা প্রেরণা অনুভব করে। পশুর জীবন জৈব ভোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মানুষ এই ভোগসর্বস্বতাকে অতিক্রম ক’রে, জৈব ভাবকে অতিক্রম ক’রে, দেবত্বে উন্নীত হ’তে চায়। ধর্ম সে-পথের দিশারী; তাই ধর্ম মানুষের বিশেষ অবলম্বন।