আয় বৃদ্ধি ও গৃহসুখ বৃদ্ধি। কর্মস্থলে সাফল্য ও প্রশংসা লাভের সম্ভাবনা। শরীর-স্বাস্থ্য বুঝে চলুন। ... বিশদ
জানি নাই তো তুমি এলে আমার ঘরে
তবু দিন যায়—দিন আসে—আমি ঘাটে বসেই থাকি। তার তরী তো আসে না। বাহিরে ভিতরে যেন সব নিঝুম। হাওয়া নেই, পাতা নড়ে না, মেঘ ছোটে না। তবু মনে হয় এই বুঝি ঝড় এলো। আমার তো তার পথ চেয়ে বসে থাকতেই হবে। উপায় নেই। কোথায় আর বেড়াবো ঘুরে? ঘুরে ঘুরে হয়তো তার থেকে দূরেই সরে যাবো। সন্ত কবীর বলেছেন তিনি চলেও যাননি—ঘরেও বসে থাকেননি আবার শরীরকে কষ্টও দেননি। জেন বৌদ্ধ বাউলরা বলেন তার পথ খুঁজতে গেলে হারিয়ে ফেলবে, সে পথ যে আকাশের মতো মুক্ত। বাংলার বাউল বলেন, ‘তার পথ ঢেকেছে, মন্দিরে মসজিদে। আর তন্ত্রমন্ত্র দিয়ে কি তাকে ধরা যায়—সে নিজেই নিজের ফাঁসে পড়ে।’
পারস্যের সূফী আবু সাইদ বললেন, ‘যতোদিন না সমস্ত মসজিদ ধ্বংস হয়ে যাবে— ততোদিন কোনো পবিত্র কাজ হবে না এবং সত্যকার মুসলমান তখনই আসবে যখন ধর্মবিশ্বাস আর অবিশ্বাস এক হয়ে যাবে।’ আরও বলেন—‘কাবা যাওয়া এমন কি ব্যাপার! খাঁটি মানুষ যেখানে থাকে—সেখানেই বসে থাকে আর কাবাই তার কাছে দিনেরাতে বহুবারই আসে।’ তাঁকে একজন জিজ্ঞাসা করলেন তাঁর ঈশ্বর ভক্ত শিষ্যেরা কি মসজিদে থাকে? তিনি বললেন, ‘না তারা পান্থশালাতেও থাকে।’ ঈশ্বরের কৃপা বিনা যখন মুক্তি নেই—তখন বেশী বাছ-বিচারে, সাধন-ভজনে, জপে-তপে কিছু হবে না। আর ঈশ্বর-কৃপাও অদ্ভুত ধরণের।
আবু সাইদ বলেছেন একদিন প্রার্থনাকালে তিনি যেন শুনলেন ভগবানের বাণী—‘তুমি কি সত্যি চাও যে সকলকে আমি তোমার সব কথা বলে দিই? তাহলে আর ওরা তোমায় আস্ত রাখবে?’—আবু সাইদ জবাব দিলেন—‘আর তুমিও কি চাও আমি সকলকে তোমার সব কথা বলে দিই? বলে দিই তোমার করুণা আর কৃপার কথা? তাহলে আর ওরা তোমার কাছে মাথা নোয়াবে?’ আবু এবার স্বর্গবাণী শুনলেন— ‘তুমিও কিছু বোলো না—আমিও বলবো না।’ এইটাই মস্ত গুপ্ত রহস্য যে ঈশ্বর আপন তাগিদেই আমাদের মধ্যে ঈশ্বর-ভাব জাগিয়ে নিজেই এসে ধরা দেন, বৌদ্ধ-সাধক অভিধর্ম যখন চীনে গেলেন—সেখানকার রাজা জিজ্ঞাসা করলেন—‘ধর্ম-সম্পর্কে প্রথম সূত্রগুলি কি?’
‘সেরকম কোনো সূত্র নেই আর ধর্ম বলেও কিছু নেই।’
‘তাহলে ধার্মিকতা কি?’
‘তোমার দৈনন্দিন ভাব-ভাবনা।’ জবাব দেন অভিধর্ম। তারপর তিনি সেখান হ’তে একটি মঠে চলে এলেন আর সেখানে একখানি খাড়া দেওয়ালের সামনে শুধু চেয়ে চেয়ে বাকী জীবন কাটালেন। মঞ্জুশ্রীকে বিমলকীর্তি জিজ্ঞাসা করলেন—‘বাসনা-কামনা ভুলভ্রান্তি আর পাপগুলিই বুদ্ধত্বের বীজ—এ কেমন কথা?’ উত্তর পেলেন—‘কমল শুক্নো জমিতে হয় না—পাঁকেই জন্মে।’ আবু সাইদ বললেন—‘খাঁটি সাধু মানুষের মধ্যে যায়-আসে-খায়-দায়-শোয়, বেচে-বেনে, ঘর-সংসার করে উৎসব-আনন্দ সবই করে। শুধু সে এক মুহূর্তের জন্যও ভোলে না ভগবানকে।’ শ্রীরামকৃষ্ণ বললেন—‘হরিনাম আঁচলে বেঁধে যেখানে ইচ্ছে যা।’ জেন গুরুকে শিষ্য জিজ্ঞাসা করলেন—‘কি সাধনা করবো?’