আয় বৃদ্ধি ও গৃহসুখ বৃদ্ধি। কর্মস্থলে সাফল্য ও প্রশংসা লাভের সম্ভাবনা। শরীর-স্বাস্থ্য বুঝে চলুন। ... বিশদ
মন্ত্র কি? ‘মন্ত্র’ হলো আধ্যাত্মিক অথবা অলৌকিক সঙ্কেতসূত্র, যা বারংবার আবৃত্তির দ্বারা অজ্ঞানের বন্ধন, জন্ম-মৃত্যুর পরম্পরা থেকে মুক্তিলাভ করা যায়। এই হলো মন্ত্রদীক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্য। মন্ত্রদীক্ষা কি এবং আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনে এর গুরুত্ব কতখানি তা নিয়ে আমাদের মনে অনেক সংশয়, অনেক ভ্রান্ত ধারণা আছে। অনেকেই মন্ত্রদীক্ষার তাৎপর্য কি এবং আধ্যাত্মিক জীবনে মন্ত্রদীক্ষার দ্বারা কি লাভ হবে তা স্পষ্টভাবে না বুঝেই ‘মন্ত্রদীক্ষা’ নিতে চান। ঈশ্বরলাভের উদ্দেশ্যে গুরুদত্ত মন্ত্র নিয়মিত জপ করতে ব্রতী হওয়া অর্থেই আমি ‘মন্ত্রদীক্ষা’ শব্দটি এখানে ব্যবহার করব। সংস্কৃতে মন্ত্র শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো–“মননাৎ ত্রায়তে ইতি মন্ত্রঃ”। ‘মন্ত্র’ মানে যা মনন করে মানুষ জন্ম-মৃত্যুর পরম্পরা, সংসার-সমুদ্র, মায়া বা অবিদ্যা থেকে মুক্তি পায়। আর ‘দীক্ষা’ হলো গুরুনির্দিষ্ট পন্থা অনুসরণ করে এই মন্ত্র জপ করা।
প্রাচীনকালে মন্ত্র বলতে বৈদিক সূক্তকে বোঝাত। মন্ত্র আর ব্রাহ্মণ নিয়ে সমগ্র বেদ। “মন্ত্রব্রাহ্মণোর্বেদনামধেয়ম্”–বেদ শব্দের অর্থ মন্ত্র এবং ব্রাহ্মণসমূহ। বিভিন্ন রকম যজ্ঞ সম্পর্কে ঋষিদের উক্তি হলো ‘মন্ত্র’। বেদের যে-অংশে মন্ত্রাদির ব্যাখ্যা এবং তাদের প্রয়োগের কথা বলা আছে তাকে বলে ‘ব্রাহ্মণ’। বিভিন্ন যজ্ঞসম্পাদনে মন্ত্রের কিরকম ব্যবহার হবে ব্রাহ্মণে তার উল্লেখ আছে। আবার তন্ত্রশাস্ত্রে মন্ত্রের ভিন্ন অর্থ দেওয়া হয়েছে। সেখানে ‘মন্ত্র’ মানে ঈশ্বরের বিশেষ মহিমাবোধক সাঙ্কেতিক শব্দসূত্র। সেগুলি এমন রহস্যময় ভাষায় লেখা, যার অর্থ অদীক্ষিতদের কাছে বোধগম্য নয়। তান্ত্রিক মন্ত্রসমূহ সাঙ্কেতিক, অত্যন্ত শক্তিসম্পন্ন, স্বল্প অক্ষর দ্বারা গ্রথিত যা ঈশ্বরের গুণবাচক।
বৈদিক অথবা তান্ত্রিক মন্ত্র অপৌরুষেয়—মনুষ্য-রচিত নয়। গুরুশিষ্য পরম্পরাক্রমে এগুলি চলে আসছে। বেদ এবং তন্ত্র উভয়েই বলেন, মন্ত্র শাশ্বত, চিরন্তন। বেদের মতে এগুলি ঋষিদের কাছে প্রতিভাত। তন্ত্র বলেন, মন্ত্র হলো পার্বতীর প্রশ্নের উত্তরে মহাদেবের মুখনিঃসৃত বাণী। পার্বতী জিজ্ঞাসা করেছেন, শিব উত্তর দিয়েছেন। তন্ত্রমতে মন্ত্র ঈশ্বরের বিশেষ মহিমাবাচক সাঙ্কেতিক শব্দ। ঈশ্বরের ভিন্ন ভিন্ন ঐশ্বর্য বা শক্তি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্র। মন্ত্রদীক্ষার অর্থ হলো গুরু কর্তৃক শিষ্যকে বিশেষ মন্ত্রদান। শিষ্য সেই মন্ত্র মনন বা জপ করতে ব্রতী হয়।