বিদ্যার্থীদের উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে মধ্যম ফল আশা করা যায়, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। ব্যবসাতে যুক্ত ... বিশদ
যেখানে গতি, সেখানেই আছে ছন্দঃ। শক্তির ক্রিয়াও তাই ছন্দোময়। তিনটি ইহার বিশিষ্ট ছন্দঃ—সৃষ্টি-স্থিতি-লয়। শক্তির এই ক্রিয়াছন্দঃ ঋত ও সত্যের উপর বিধৃত। তাই ইহাতে এত্ শৃঙ্খলা ও সুবিধান। ঈশ্বরবাচক প্রণবই এই বিশ্বশক্তির আধার—তিনিই সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ের অধিকর্ত্তা। তন্ত্রশাস্ত্র প্রণবের এই শক্তিকেই বলিয়াছেন কলা। কলা অর্থে শক্তির বহুমুখী প্রকাশ। প্রণবের এক একটি কলার ভিতরে যে বিচিত্র মহাশক্তি নিহিত রহিয়াছে, সাধারণ বুদ্ধির মানুষ তাহার কণামাত্রও ধারণা করিতে পারে না। জগতে যেখানে যে শক্তি দেখিতেছ, তাহা প্রণবেরই শক্তি। সর্ব্বশক্তিমান্ প্রণবেশ্বরই জগৎ গড়িতেছেন ভাঙ্গিতেছেন, আবার রক্ষাও করিতেছেন।
বেদান্তশাস্ত্রে এই তত্ত্বের স্বীকৃতি রহিয়াছে। পরবর্তী পৌরাণিক দৃষ্টিভঙ্গীর পথ রচনা করিয়া দিয়া শিরোপনিষদ্ ঘোষণা করিলেন—প্রণব বা ওঁকারের প্রথমমাত্রা ‘অ’কার ব্রহ্মদৈবত, দ্বিতীয়মাত্রা ‘উ’কার বিষ্ণুদৈবত এবং তৃতীয়মাত্রা ‘ম’কার রুদ্রদৈবত, অর্থাৎ, ত্রিমাত্রায় ত্রিদেবতা আছেন—ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর। ইঁহারা যথাক্রমে সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়ের অধীশ্বর। পৃথক্ পৃথক্ ভাবে ইঁহারা সর্ব্বশক্তিমান প্রণবেরই এক একটি বিশিষ্ট কলা—মিলিত ভাবে ইঁহারাই তাঁহার সামগ্রিক শক্তি। প্রণবের চতুর্থমাত্রা অব্যক্তভূত—তুরীয়। তুরীয় প্রণব জীবের মুক্তিবিধাতা।
রসানাং রসতমঃ
আমরা চাই রস, আমরা চাই আনন্দ। এই রস বা আনন্দের উৎসও হইলেন প্রণব। ছান্দ্যোগ্যোপনিষদ্ বলেন—ইনি “রসানাং রসতমঃ”—সমস্ত রসসমূহের ভিতরে রসতম। এই চরাচর পৃথিবী ভূতসমূহের রস,
জল পৃথিবীর রস, ওষধি জলের রস, পুরুষ (মনুষ্য শরীর) ওষধির রস, জল মনুষ্য-শরীরের রস, ঋগ্মন্ত্র বাক্যের রস, সাম ঋগ্মন্ত্রের রস, উদ্গীথ-ওঁকার সামমন্ত্রের রস—রসতত্ত্বের বিচারে প্রণব অষ্টম এবং সর্ব্বোওম স্থানীয়। ইঁহার উপরে আর কোন রসোত্তম বা সারোত্তম কেহ নাই, কিছু নাই। ইনিই ‘পরমঃ’ এবং ‘পরার্ধ্যঃ’—অর্থাৎ, পরম এবং পরমের স্থান। রসের অষ্টম ভূমিতে ইনি রসেশ্বর—রসচূড়ামণি। ইঁহাকে জানিলে, ইঁহার উপাসনা করিলেই জীবের ক্ষুধিত ইন্দ্রিয়সমূহের রসপিপাসার আত্যন্তিক নিবৃত্তি তথা তাহার সর্ব্ববিধ কামনার তৃপ্তি সাধন। জৈব স্তরের মানুষ আনন্দ চায় স্থূল মিথুনের ভিতরে। কিন্তু, সে আনন্দ তো ক্ষণস্থায়ী ও পরিণামে দুখঃপ্রদ। শাশ্বত আনন্দ চাও? তবে কায়মনোবাক্যে মৈথুন হউক তোমার সেই রসোত্তম পরম পুরুষেরই সহিত। ব্রজের রাস্লীলায় ভাগবতকার সেই তত্ত্বটিই পরিবেশন করিয়াছেন। কিন্তু, প্রাকৃত জনেরা উহার বিকৃত ব্যাখ্যা করিয়া ও ব্যর্থ অনুকরণ করিত যাইয়া অধঃপতিত হইয়া থাকে।
প্রণবের উপাসনা
প্রণবই ব্রহ্ম, পুনশ্চ প্রণবই ব্রহ্ম লাভের উপায়। বেদান্তশাস্ত্রে প্রণবই উপায় ও উপেয়রূপে বর্ণিত।