বিদ্যার্থীদের উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে মধ্যম ফল আশা করা যায়, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। ব্যবসাতে যুক্ত ... বিশদ
মুণ্ডক এবং ধ্যানবিন্দু উপনিষৎ শিখাইলেন—প্রণব হইলেন ধনু, জীবাত্মা হইলেন শর, ব্রহ্ম হইলেন লক্ষ্য; অপ্রমত্ত হইয়া তন্ময়চিত্তে সেই লক্ষ্য ভেদ্য। অমৃতবিন্দুপনিষদে ওঁকারকে বলা হইয়াছে ব্রহ্মলোকপদান্বেষীর রথস্বরূপ, সেই রথের সারথি হইলেন বিষ্ণু এবং আরাধ্য হইলেন রুদ্র। চিত্তমল দূরীকরণের উপায় প্রাণায়াম। ওঁ, মন্ত্রে প্রাণায়ামের উপদেশ দিয়াছেন এই শ্রুতি—“ওমিত্যেকাক্ষরং ব্রহ্ম ওমিত্যেকেন রেচয়েৎ” ইত্যাদি।
সাধ্যের সহিত সাধকের নৈকট্য সংস্থাপনের জন্যই উপাসনার প্রয়োজন। সেই উপাসনার পদ্ধতিটি নানা ভঙ্গীতে ব্যাখ্যাত হইয়াছে উপনিষদের নানাস্থানে। প্রণবের উপাসনায় জীবাত্মার ঘটে ঊর্দ্ধায়ন। প্রণবমন্ত্রের ভিতরে এমন শক্তি, এমন আলোক, এমন ছন্দঃ আছে, যাহা সাধকচিত্তের সকল তমঃ অপসারিত করিয়া তাঁহার চেতনাকে করে দিব্য ও রমণীয় এবং পরিশেষে সাধক অন্তরে বাহিরে ব্রহ্মময়ই হইয়া যান।
প্রণবের ধ্যান
ভাবনার একতানতাই ধ্যান। ধ্যানে চাই তন্ময়তা। ধ্যানের আলম্বনও প্রণব। মুণ্ডক বলেন—“ওমিত্যেবং ধ্যায়থ আত্মনং”; আত্মাকে ওঁকার অবলম্বনে ধ্যান কর। আত্মার অধিষ্ঠান কোথায়? হৃদয় মধ্যে। চক্রশলাকা যেমন রথচক্রের নাভিতে অবস্থিত, তেমনি নাড়ীসমূহের মিলনক্ষেত্র হৃদয়ে পুরুষ বা জীবাত্মা বিরাজমান। তিনিই ধ্যেয়। এই ধ্যান করিতে হইবে অবিচ্ছিন্ন ভাবে পুনঃ পুনঃ চেষ্টার দ্বারা। কি উপায়ে তাহা দৃষ্টান্ত সহায়ে বর্ণনা করিলেন শ্বেতাম্বতরোপনিষৎ।
কাষ্ঠের ভিতরে অগ্নি থাকে; কিন্তু অব্যক্তাবস্থায়। দুইটি অরণির পৌনঃপুনিক ঘর্ষণে সেই অগ্নির বাস্তব প্রকাশ। তেমনি হৃদ্দেশে জীবাত্মা রহিয়াছেন অব্যক্তরূপে, তাঁহার জ্যোতিঃ আমরা দেখিতে পাইতেছি না। সেই আত্মার আগুন প্রকাশের জন্য চাই ধ্যাননির্ম্মস্থন—নিজ শরীরকে (জীবাত্মা) কর অধররণি, আর প্রণবকে কর উত্তরারণি—দুই অরণির ঘষাঘষির ফল সময়ে ফলিবেই।
অন্তিমের সুহৃদ-প্রণব
প্রণব জীবের অন্তিমের সুহৃদ্। শেষের দিনে কেউ তোমার বন্ধু নাই; কেহই তোমাকে কোনও সাহায্য করিতে পারিবে না; আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, বিষয়-সম্পত্তি সকলের চিন্তা ছাড়িয়া প্রণবের ধ্যান ও মননে নিরত হও—শান্তি ও মুক্তি পাইবে।
স্বামী নির্ম্মলানন্দের ‘শ্রীশ্রীপ্রণবানন্দ—শত রূপে, শত মুখে’ থেকে