ব্যবসায় বাড়তি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত সাফল্য নাও দিতে পারে। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি শ্বাসকষ্ট ও বক্ষপীড়ায় শারীরিক ক্লেশ। ... বিশদ
সংযত করার পর অহংকাররূপ শত্রুকে বিষয়চিন্তার আর কোন অবকাশ দিবে না। জল যেমন শুষ্কপ্রায় জম্বীরবৃক্ষকে বাঁচাইয়া তোলে, এই বিষয় চিন্তাই সেইরূপ অহংকারের পুনরায় উদ্রেকের সহায়তা করে।
দেহাভিমানবিশিষ্ট ব্যক্তিই কামনাপরায়ণ হয়। যাহার দেহাভিমান নাই, সে আর কীরূপে কামনার বশীভূত হইবে, অতএব, বিষয়চিন্তায় রত থাকার ফলেই ভেদবুদ্ধির উৎপত্তি এবং জন্মমরণরূপ সংসারবন্ধন হয়।
কার্য বৃদ্ধি পাইলে বাসনাসমূহকেও বৃদ্ধি পাইতে দেখা যায়। কর্মত্যাগ হইতে বাসনাসমূহের নাশ হয়। অতএব কাম্যকর্মাদি ত্যাগ করিবে।
বাসনা বৃদ্ধি পাইলে কাম্যকর্মাদিতে প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পায়, এবং কর্মে প্রবৃত্তি হইতে বাসনা বাড়িতে থাকে। এই কারণে পুরুষের জন্মমরণ-প্রবাহ আর কোনকালে নিবৃত্ত হয় না।
সংসারবন্ধন ছিন্ন করার জন্য সাধক এই দুইটিকে ত্যাগ করিবেন। এই দুটির দ্বারা—বিষয়চিন্তনের এবং (সকাম) কর্মানুষ্ঠানের ফলে—বাসনা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। সেই বাসনা, বিষয়চিন্তন এবং সকামকর্মের অনুষ্ঠান—এই দুইয়ের দ্বারা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইয়া জীবের জন্মমরণের কারণ হয়। এই তিনটি নাশের উপায়—সকল অবস্থায়, সকল সময়, সকল স্থানে, সকল উপায়ে ‘সবকিছু ব্রহ্ম’ এইরূপ দৃষ্টির ফলে ব্রহ্মের সহিত আত্মার ঐক্যভাবনা দৃঢ় হইলে এই তিনটি নষ্ট হইয়া যায়।
সকামকর্ম-ত্যাগ করিতে পারিলে মনে আর বিষয়চিন্তার উদয় হয় না। সকামকর্ম-ত্যাগের ফলে বাসনাও নষ্ট হইয়া যায়। বাসনাবিহীন অবস্থা মুক্তির অবস্থা। এই অবস্থাকেই জ্ঞানিগণ জীবন্মুক্তি বলিয়া বর্ণনা করিয়া থাকেন।
ব্রহ্মভাবনার বিশেষ প্রকাশ হইলে দেহাদিতে ‘আমি-আমার’ ভাবনা সহজেই নষ্ট হইয়া যায়; যেমন রাত্রিকালের গাঢ় অন্ধকার প্রাতঃকালে অরুণউদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কাহারও চেষ্টা ব্যতীত নষ্ট হইয়া যায়।
সূর্য উঠিলে অন্ধকার এবং অন্ধকারের মধ্যে সম্ভাবিত কষ্টদায়ক অবস্থাসমূহ আর থাকে না। সেই প্রকারে আত্মসাক্ষাৎকারের ফলে অখণ্ড ব্রহ্মানন্দের অনুভূতি হইলে বন্ধনের কারণ অহংকারাদি নষ্ট হইয়া যায়; সেই অবস্থায় দুঃখের লেশমাত্র অবশিষ্ট থাকে না।
বাহিরে বা অন্তরে প্রকাশিত বিষয়সমূহ বা সে সকলের স্মৃতি বিচারের দ্বারা নিরাস করিয়া আনন্দস্বরূপ অবিনাশী স্বীয় স্বরূপের চিন্তায় রত থাকিয়া সাবধানে (বিষয়ীর সঙ্গে বিষয়চিন্তা মনে উদয়ের অবসর না দিয়া) প্রারব্ধ কর্মের ক্ষয় না হওয়া পর্যন্ত দিন কাটাইবে। ব্রহ্মনিষ্ঠায় কখনও আলস্য করিবেনা। ব্রহ্মার মানসপুত্র ভগবান্ সনৎকুমার বলিয়াছেন, ‘প্রমাদই মৃত্যুতুল্য’।
জ্ঞানী সাধকের পক্ষে আত্মচিন্তনে অবহেলার অতিরিক্ত অনর্থপ্রাপ্তির অন্য আর কারণ নাই। স্বরূপচিন্তনে অবহেলা হইতে মোহের উৎপত্তি হয়; মোহ হইতে আসে অনাত্মবস্ত দেহাদিতে আত্মবুদ্ধি; এই অহং হইতে সংসারবন্ধনের উৎপত্তি হয়; আর সংসারে যাতায়াতের ফলে যত দুঃখকষ্ট ভোগ হইতে থাকে। বিদ্বান্ ব্যক্তিও যখন বিষয়চিন্তায় রত হন, তখন বিস্মৃতি উপস্থিত হইয়া তাঁহাকে কামক্রোধাদি বুদ্ধির দোষ-সমূহের দ্বারা বিক্ষিপ্ত করিয়া তোলে; যেমন কোন নারী তাহার প্রিয় উপপতিকে তাহার বিষয়ে চিন্তায় দ্বারা অভিভূত ও ক্লিষ্ট রাখে।
কোন জলাশয়ের জলের উপর হইতে পানাপ্রভৃতি ঠেলিয়া সরাইয়া দিলে তাহা যেমন ক্ষণকালেও স্থির থাকে না, আবার আসিয়া খালি জায়গা ভরাইয়া ফেলে, সেইরূপে মায়া ক্ষণকালের জন্যও আত্মচিন্তায় বিমুখ জ্ঞানী ব্যক্তির চিত্তকে আবৃত করিয়া ফেলে।