ব্যবসায় বাড়তি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত সাফল্য নাও দিতে পারে। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি শ্বাসকষ্ট ও বক্ষপীড়ায় শারীরিক ক্লেশ। ... বিশদ
বিশ্বাস কর,—যা কিছু হচ্ছে জান্বে প্রভুর শক্তিতে, তোমরা যন্ত্রমাত্র। ঐ কর্ম্মকে কর্ম্ম মনে করবে না, কেবল নিষ্কাম নিঃস্বার্থ ভাবে কর্ত্তে চেষ্টা করিও। ওতেই বন্ধন ছুটে যাবে। একই ঔষধে অনুপান ভেদে ভিন্ন ভিন্ন ফল হয়। তেমনি কর্ম্মই বন্ধন, আবার অনাসক্ত হ’য়ে ভগবদুদ্দেশে কর্ত্তে পাল্লে ওতেই ভক্তি মুক্তি লাভ হয়। নাম, লৌকিকতার দিকে নজর রাখলেই গোল বাঁধে। কে বলিও ঐ কর্ম্মকে সাধন, ভজন, ত্যাগ, তপস্যা যেন মনে করে। দেখেছি, ব’সে ব’সে ধ্যান কর্তে গিয়ে ঢুলছে। এটা চাও? না সেবা কর্ত্তে কর্ত্তে দিলাম শরীর পাত করে—কোন্টা শ্রেষ্ঠ? তবে গোঁ কিংবা অতি পরিশ্রম উচিত নয়। শরীরের দিকে খুব নজর রাখ্বে। সময়ে স্নান আহার বিশেষ দরকার। নিয়মমত নিদ্রা চাই। সকল কাজ ভালবাসা দ্বারা যেন চলে, কঠোর আইন কানুন ভাল নহে। স্নেহ, প্রীতি, প্রেম যেন তোমাদের মূল-মন্ত্র হয়। এতেই ছেলেরা মেতে যাবে—প্রাণ দিবে। মঠে থেকে থেকে এই শিখেছি যে, ছেলেরা যদি কোনও দোষ করে, বিচার করে দেখি, সেটা তাদের দোষ নয়, যা কিছু অপরাধ সে আমারই। তাই আপনার কল্যাণ যদি চাও, নিজের দুর্ব্বলতা শোধরাতে চেষ্টা কর। সর্ব্বদা আপনার দিকে দৃষ্টি রাখ। যদি খুঁত হয় সে আমারই, ঠাকুর ইহা খুব শিখাচ্ছেন। যদি বড় হ’তে চাও সকলকে বড় দেখ—মহৎ দেখ। বীর বিবেকানন্দের আদেশ—‘‘হে বঙ্গীয় যুবকগণ! তোমরা জগতে শ্রেষ্ঠ হবেই হবে’’—সাক্ষাৎ শিব-বাক্য, বিশ্বাস কর, যুবকগণ, সাবধান! এখন একমাত্র শ্রীরামকৃষ্ণ—জীবন তোমাদের আদর্শ, উহাই অনুসরণ কর, তবেই নব বলে বলীয়ান হবে নিশ্চয় জেনো। সর্ব্বশক্তির আধার আমাদের প্রভু। শ্রীশ্রীমা ও ঠাকুর অভেদ, শ্রীবিবেকানন্দ স্বামীও তাই।
মিশনের ঘর বাড়ী হচ্ছে উত্তম, সেই সঙ্গে তোমাদেরও ভক্তি, বিশ্বাস, ত্যাগ, বৈরাগ্য বাড়ুক, নতুবা ঐসব ঐশ্বর্য্য বন্ধন ও বিড়ম্বনার কারণ মাত্র। তোমরা সকলে মার কাছে দীক্ষা নিয়েছো, ঘর, দোর ত্যাগ করে এসেছ, ভক্তি-মুক্তি-জ্ঞান-বিজ্ঞান লাভই তোমাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য, তত্রাচ যে তোমরা তিনজনে একমন প্রাণ হতে পাচ্ছ না এ অতি আক্ষেপের বিষয়! আমরা যে বলে বেড়াই ‘হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান সব এক হতে হবে’ এগুলি কি কথার কথা? মনের কথা নয়? তবে আর আমাদের শ্রীশ্রীমার দর্শনে কি লাভ হ’ল? কি শিখ্লাম তাঁর অদ্ভুত আশ্চর্য্য জীবন দেখে? প্রভু-দর্শনে সব বন্ধন কেটে যায়, যেমন সূর্য্যোদয়ে আঁধার পালায়। আমাদের কি অভিমান আঁধার দূর হয়ে ভক্তি প্রেমের উদয় হবে না? বিশ্বাস কর—নিশ্চয় আমরা সিদ্ধ হব, মুক্ত হব যখন শ্রীশ্রীমার দর্শন পেয়েছি। তিনটে লোক এক হ’তে পার না, দম্ভ দূর কত্তে পার না, ভালবাসায় মেতে আপনহারা হ’তে পার না, জ্যান্তে মরা হ’তে পার না, আবার চাও কিনা ভগবান্? তোমরা নাকি আবার ঠাকুর পূজা কর! শিব জ্ঞানে জীব-সেবা কর! ধিক তোমাদের! যদি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা না থাকে তবে তোমাদের পড়াশুনা পাঠ পূজা প্রচার সব বৃথা।
ঠাকুর বলেছেন ভক্তের জাতি নাই। আমরা যে জগৎ জুড়ে একটা জাত বাঁধবার ইচ্ছা করি। দেখ বাবা, এখনও সময় আছে। তোমরা ছেলে মানুষ, তোমাদের মন কাঁচা, প্রাণপণে ঠাকুরের কাছে কাঁদ ও প্রার্থনা কর। তিনি তোমাদের পথ দেখিয়ে দেবেনই দেবেন। ‘আমি’ ‘আমার’ গুলো ফেলে দাও। আজ থেকে একমন একপ্রাণ তোমাদের হয়ে যাক্ প্রভুর কৃপায়, তিনি তোমাদের শুভ বুদ্ধি দিন এই নিবেদন। মনের কথা যখন বলে ফেলেছ তাতে ভালই হবে। তোমার একলার জন্য নয়, সকলের জন্যই লিখ্লাম। তোমার প্রতি আমার ক্রোধ নাই, কাহারও উপর নাই। তোমাদের কল্যাণের জন্যই লিখ্লাম, তোমাদের আপনার ভাবি ব’লে।
স্বামী প্রেমানন্দের ‘পত্রাবলী থেকে