দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় থেকে অর্থাগম ও পুনঃ সঞ্চয়। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি বা নতুন কর্ম লাভের সম্ভাবনা। মন ... বিশদ
ভারত রাষ্ট্র হল অনেকগুলি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের এক সমবায়। রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সমন্বয় রক্ষিত হয় ফেডারেল বা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে। বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্রই হল যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মূল শক্তি। সেখানে কিম্ভুত ডাবল ইঞ্জিন তত্ত্ব কোনোভাবেই মান্যতা পেতে পারে না। কারণ এই ধারণা মান্যতা পাওয়ার অর্থ, একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্রকে স্বাগত জানানো। এই স্বপ্ন নরেন্দ্র মোদি নামক একজন একনায়কের হলেও তা কোনোভাবেই ভারতের মহান সংবিধানের নয়। বস্তুত এই তত্ত্বের মধ্যে বৈষম্যের বীজই প্রোথিত রয়েছে। গেরুয়া রাজনীতি, এই ধারণা থেকেই রাষ্ট্রশাসনের সর্বক্ষেত্রে ‘আমরা, ওরা’ বিভাজন রেখা এঁকে চলেছে। ধর্ম, ভাষা, অঞ্চল, রাজ্য, রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংগঠন প্রভৃতি কোনও ক্ষেত্রকেই রেয়াত করা হচ্ছে না। বাজেট বরাদ্দ এবং রাজস্ব বণ্টনের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বিরোধী দল বা জোটের সরকারগুলি (পড়ুন, ‘সিঙ্গল ইঞ্জিন’) এই প্রশ্নে গেরুয়া জমানায় যে ভয়াবহ বঞ্চনার শিকার হয়ে চলেছে তা নিঃসন্দেহে বেনজির ঘটনা। উল্লেখ করা দরকার যে, সর্বাধিক বঞ্চনার শিকার রাজ্যের নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গ। মনরেগা, আবাস যোজনাসহ অনেকগুলি ক্ষেত্রে বাংলার সঙ্গে লাগাতার বঞ্চনা করে চলেছে মোদি সরকার। এটাই যে দলের ‘দর্শন’ এবং ‘রেকর্ড’ তারাই আবার বড় মুখ করে গণতন্ত্রের বুলি আওড়ায়, সংবিধান দিবস পালন করে এবং বিদেশে গিয়ে ‘বৃহত্তম গণতন্ত্রের’ সম্মান চায়।
বিজেপির এই ‘দ্বৈত চরিত্র’ এবার ফাঁস হয়ে গিয়েছে সরকারি নথিতেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল এবং সরকারের বিরুদ্ধে বঙ্গজ বিজেপি নেতারা তর্জনী উঁচিয়ে অহরহ দাবি করেন যে, এখানে নাকি গণতন্ত্র নেই; প্রতিদিন নানাভাবে তা পদদলিত হচ্ছে! অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি/এনডিএ শাসিত অনেকগুলি রাজ্যে পঞ্চায়েত এবং পুর নির্বাচন করাই হয় না। একাধিক ‘ডাবল ইঞ্জিন’ রাজ্যে লোকাল গভর্নমেন্ট বা স্থানীয় সরকারগুলি চলে গিয়েছে প্রশাসকের জিম্মায়! অর্থাৎ সেসব জায়গায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কোনও অস্তিত্ব বা ভূমিকা নেই। সরকারি প্রশাসকের দ্বারা পঞ্চায়েত বা পুর বোর্ড পরিচালনার অর্থ, গণতন্ত্রের জলাঞ্জলি! কোনও অনিবার্য পরিস্থিতিতে এই জিনিস অল্প কিছুদিন চলতে পারে, কিন্তু ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলিতে তা চলছে অনির্দিষ্টকাল ধরে। সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত হল বৃহন্মুম্বই। এই পুরসভা ২০২০ সাল থেকে প্রশাসকের জিম্মায়। শুধু মহারাষ্ট্র নয়, তৃণমূল স্তরে গণতন্ত্র জলাঞ্জলি গিয়েছে উত্তরাখণ্ড, পুদুচেরি, কর্ণাটক, মণিপুর, এমনকী অসমেও। ওইসব জায়গায় পঞ্চায়েত ভোট হয়নি বোর্ড তামাদি হওয়ার দু’-তিন বছর পরও! সম্প্রতি তাদের বার্ষিক রিপোর্টে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেছে কেন্দ্রের পঞ্চায়েত মন্ত্রক। কেন্দ্রের তাগাদা পেয়েও বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনও উদ্যোগই নেয়নি! আসলে ‘আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখাও’ নীতির কোনও জায়গা নেই বিজেপিতে। এই কাচের ঘরের বাসিন্দারা অন্যের ঘর লক্ষ্য করে অনবরত ঢিল নিক্ষেপকেই ব্রত মেনেছে। ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’ মেনটেন করার এর চেয়ে উত্তম কৌশল কেউ দেখবে না।