সপরিবারে নিকট ভ্রমণের পরিকল্পনা। সহকর্মীরা কর্মক্ষেত্রে শত্রুতা করতে পারে। নতুন কোনও কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মক্ষেত্রে বদলির ... বিশদ
এটাই আঠারো মাসের অশান্ত মণিপুরের সর্বশেষ ছবি। যেখানে হিংসার হাত থেকে একটা দিনও রেহাই পায়নি এই রাজ্য। আক্রমণ প্রতি-আক্রমণে প্রতিদিনই ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে মণিপুর। মহিলা ও শিশুদের উপর আক্রমণ হচ্ছে বেশি। সরকারি হিসেবে, গত দেড় বছরে ২০০-র বেশি প্রাণ গিয়েছে, ঘরছাড়া ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। পরিস্থিতি এতটাই অগ্নিগর্ভ যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনাস্থা জানিয়েছেন বিজেপি তথা এনডিএ-র বিধায়কদের অনেকে। মুখ্যমন্ত্রীর কোনও ডাকেই তাঁরা সাড়া দিচ্ছেন না। কেবল বিরোধী নয়, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ ও রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি উঠেছে শাসকদলের একাংশের পক্ষ থেকেও। পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা বাড়িয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। রাজ্যের ছটি থানা এলাকায় সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ‘আফস্পা’ আইন ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখন গোটা রাজ্যেই ‘আফস্পা’ ফিরিয়ে আনার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন শাসকগোষ্ঠীর কুকি-জো জনজাতির বিধায়করা। এই দাবিতেই স্পষ্ট হয় যে, প্রশাসনের প্রতি জনসাধারণের আস্থা-বিশ্বাস-ভরসা তলানিতে ঠেকেছে। কারণ, এক সময়ে যে ‘আফস্পা’ প্রত্যাহারের দাবিতে উত্তাল হয়েছে মণিপুর, স্বাভাবিক জনজীবন ফেরাতে সেই কুখ্যাত ব্যবস্থাকেই আবার বরণ করে নিতে চাইছে সেখানকার মানুষ। ‘ডাবল ইঞ্জিনের’ এই ছোট্ট রাজ্যটির মানুষ শান্তি চাইছেন, ‘জাস্টিসের’ দাবি করছেন। তাই প্রশ্ন উঠছে, এই কি তাহলে মোদি-শাহদের বহু কথিত ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের ‘সুশাসন?’ মাসের পর মাস মণিপুর জ্বললেও কেন তাঁরা নীরব?
গত কয়েকসপ্তাহ ধরে মণিপুর ফের অশান্ত হয়ে ওঠায় সে রাজ্যে আদৌ কোনও সরকার আছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা মণিপুরকে শান্ত করার পরিবর্তে অশান্তি জিইয়ে রাখতে বেশি আগ্রহী কি না! বিজেপি যে আদর্শগতভাবে ধর্মীয় বিভাজনের পক্ষে, এটাই তাদের ভোটে জেতার প্রধান অস্ত্র— সেটা তারা খুব বেশি গোপন করে না। মণিপুরেও সেই ধর্মীয় জাতপাতের বিভাজনকেই উস্কে দেওয়ার কাজ করে চলেছে গেরুয়াবাহিনী। পাহাড়ি এই রাজ্যে সমতলের বাসিন্দা মেইতেই জনগোষ্ঠী। এরা হিন্দু এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ। অন্যদিকে পার্বত্য বনাঞ্চলে কুকি-জো আদিবাসীরা খ্রিস্টান ও সংখ্যালঘু। যাকে বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির আদর্শ কেন্দ্রস্থল বলা যায়। হিন্দুত্ববাদীরা এই দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ উস্কে দিয়ে, জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে বদ্ধপরিকর। যার পরিণতিতে রক্তের হোলিখেলা থামছে না। একপক্ষ অন্যপক্ষকে নৃশংস আক্রমণ করছে, নির্বিচার খুন করছে, ধর্ষণ করছে। মুখ্যমন্ত্রীর উপর তবু প্রবল আস্থা মোদি-শাহদের! গত দেড় বছরে সেই রাজ্যে একবারও পা রাখেননি প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লি থেকে পরিস্থিতির উপর ‘নজর’ রাখছেন। আর মণিপুর আরও অতলে তলিয়ে যাচ্ছে!