সপরিবারে নিকট ভ্রমণের পরিকল্পনা। সহকর্মীরা কর্মক্ষেত্রে শত্রুতা করতে পারে। নতুন কোনও কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মক্ষেত্রে বদলির ... বিশদ
তাই বুঝতে অসুবিধা হয় না, শিক্ষাব্যবস্থা সচল রাখতে দেশজুড়ে রাজ্যগুলির কী হিমশিম অবস্থা চলছে। বিশেষত স্কুলশিক্ষার করুণ ছবিটা সামনে এনে দিয়েছিল কোভিড-১৯। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অগ্রাধিকারের তালিকাতেই রয়েছে শিক্ষা। তাঁর কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে মেয়ে এবং আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলি। তাদের উপরের ধাপে তুলে আনতে পরিবর্তনের কাণ্ডারী হাতে নিয়েছেন একগুচ্ছ প্রকল্প। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজ সাথী, তরুণের স্বপ্ন, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড প্রভৃতি। এছাড়া মিড ডে মিল তো চলছেই। এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে গত একদশকে কয়েক কোটি ছেলেমেয়ে শিক্ষার আলো দেখেছে। তারা স্কুলশিক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে প্রবেশ করেছে উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে এবং সম্মানজনক কর্মক্ষেত্রে। এই দায়িত্বপালন কখনও শেষ হওয়ার নয়, বরং একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার সাফল্য—গণ্ডির বাইরে রয়ে যাওয়া পরিবারগুলিকে উৎসাহ ও সাহস জোগাচ্ছে। ফলে প্রতিটি প্রকল্পে বেড়ে চলেছে উপভোক্তার সংখ্যা।
সীমিত আর্থিক ক্ষমতা এবং তীব্র রাজনৈতিক বিরোধিতার মধ্যেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে সেই দুরূহ কাজটি করে যেতে হচ্ছে। আর সেখানেই সম্প্রতি চিহ্নিত হয়েছে কিছু ত্রুটি। যেমন দুষ্কৃতী হানা ঘটেছে ‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টালে। তার ফলে সোজা কালো হাত পড়েছে ‘তরুণের স্বপ্ন’-এ। সাইবার জালিয়াতরা পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা আত্মসাৎ করার সাহস দেখিয়েছে। তাদের জাল বাংলার কয়েকটি জেলাতেই সীমিত নেই, বিস্তৃত হয়েছে ভিন রাজ্যেও। গুচ্ছ অভিযোগের তদন্তে নেমে পুলিস বুঝেছে—পূর্ব মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ বা উত্তর দিনাজপুরের পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে চলে যাওয়া কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটা চেইনে বাঁধা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিস ইতিমধ্যেই চারজনকে পাকড়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন মালদহের এবং একজন উত্তর দিনাজপুরের বাসিন্দা। রাজ্যজুড়ে আটক করা হয়েছে আরও কয়েকজনকে। ধৃতরা ‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টালে ‘অ্যাকসেস’ নিয়ে নিজেদের লোকজনদের নম্বর ঢুকিয়ে দিয়েছিল। টাকা চলে গিয়েছে সেসব অ্যাকাউন্টেই। ধৃতদের সঙ্গে জামতাড়া গ্যাং যোগের সন্দেহ বাড়ছে। কারণ, টাকা ঢুকেছে কিষানগঞ্জেরও কিছু অ্যাকাউন্টে। পুলিসের সন্দেহ, মালদহের বৈষ্ণবনগর থেকে ধৃত কম্পিউটার ডিপ্লোমাধারী হাসেম আলি এই চক্রের পান্ডা। ধৃত সিদ্দিক হোসেন, মোবারক হোসেন এবং আসিরুল হক কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়েছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে বিহার যোগ। ঝাড়খণ্ড এবং বিহারের কয়েকজন প্রতারককেও পুলিস খুঁজছে। কলকাতা, পূর্ব মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব বর্ধমানসহ বিভিন্ন জেলায় বহু প্রকৃত গ্রাহক ট্যাবের টাকা পায়নি। সেসব আত্মসাৎ করেছে এই চক্রটি। এখন খুঁজে দেখা দরকার, প্রতারকরা গত জুলাই থেকে সরকারি পোর্টালের ‘অ্যাকসেস’ নিয়ে বসে আছে কীভাবে! চারমাসেও তা টের পাওয়া গেল না কেন? ভূত সর্ষের ভিতরেই নয় তো? জানা জরুরি। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু যথার্থই আশ্বস্ত করেছেন, এই মারাত্মক জালিয়াতদের কেউই ছাড় পাবে না। ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টারকে (এনআইসি) পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছে রাজ্য। এনআইসি ইতিমধ্যেই একটি এসওপি’র প্রস্তাব করেছে। বিষয়টিতে তাঁর প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রীও। আশা করা যায়, সব টাকা দ্রুত উদ্ধার হবে এবং কঠিন সাজার মুখে পড়বে প্রতিটি জালিয়াত। তবেই পূরণ হবে তরুণের স্বপ্ন। রাজ্যের অন্য প্রকল্পগুলি নিয়েও এই সূত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। না-হলে ফের ব্যাহত হতে পারে রাজ্যজুড়ে চলা সামগ্রিক উন্নয়ন যজ্ঞ।