সপরিবারে নিকট ভ্রমণের পরিকল্পনা। সহকর্মীরা কর্মক্ষেত্রে শত্রুতা করতে পারে। নতুন কোনও কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মক্ষেত্রে বদলির ... বিশদ
আর এখানেই প্রশ্ন, সরকারের ঘোষণার বাস্তবায়ন সম্ভব কতটা? কেননা নির্মাণ খরচ হু হু করে বাড়ছে। কিন্তু সরকার যে গৃহ প্রতি আর্থিক বরাদ্দের অঙ্ক বাড়াচ্ছে না। আবাস যোজনায় কেন্দ্রীয় বরাদ্দের পরিমাণ সমতলের জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা এবং উত্তর-পূর্ব ভারত ও পার্বত্য এলাকার জন্য ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। অথচ গত একবছরে ভারতে নির্মাণ খরচ গড়ে ১১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এই বৃদ্ধি ঘটেছে মূলত গৃহনির্মাণ ক্ষেত্রে। এই শিল্প বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, গত ১২ মাসে গৃহনির্মাণ সামগ্রীর দাম নাগালের মধ্যে থাকলেও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির ধাক্কা পৌঁছেছে ২৫ শতাংশে। ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবরের মধ্যে গৃহনির্মাণের প্রধান জিনিসগুলির দাম বেড়েছে মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতোই: ইস্পাত ৫৭ শতাংশ, সিমেন্ট ৩০ শতাংশ, তামা ৯১ শতাংশ এবং শ্রমিকের মজুরি ১৫০ শতাংশ। এই সম্পর্কে ইংরেজি দৈনিক ‘দি ইকনমিক টাইমস’-এর একটি প্রতিবেদনে একটি বেসরকারি (ন্যাশনাল লেভেল মনিটরিং বা এনএলএম) সমীক্ষার তথ্যাদি তুলে ধরা হয়েছে। তাতে দাবি করা হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা গ্রামীণের ৮০ শতাংশের বেশি বেনিফিসিয়ারি সরকারি বরাদ্দ টাকায় বাড়ি তৈরি করতে পারছেন না। বাস্তবে তাঁদের খরচ পড়ে যাচ্ছে দেড় লক্ষাধিক টাকা। ২০২২ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বরের মধ্যে মোট তিনি দফায় এই সমীক্ষা সম্পন্ন হয়। প্রথম সমীক্ষা হয় দশটি রাজ্যের ৮৫টি জেলায়। দ্বিতীয় সমীক্ষার নমুনা নেওয়া হয় ২৫টি রাজ্যের ১১১টি জেলা থেকে। তৃতীয় ও শেষ সমীক্ষা চলে ২৪টি রাজ্যের ১১০টি জেলায়। অর্থাৎ সারা দেশের ৩০৬টি জেলার কয়েক হাজার বেনিফিসিয়ারির সঙ্গে কথা বলেছেন এনএলএম ইন্ডিপেন্ডেন্ট এজেন্সির সমীক্ষকরা। সমীক্ষা শেষে তাঁদের দাবি, বহু এলাকার পরিবার নিজেদের একটি করে পাকাবাড়ি পেতে আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ করেছে! অর্থাৎ সরকারের দেওয়া টাকার প্রায় দ্বিগুণ পর্যন্ত খরচ করতে হয়েছে বহু গরিব মানুষকে।
তাঁরা এই খরচ এমনি এমনি করেননি, অগ্নিমূল্যের বাজারে তাছাড়া যে ঘর তৈরিই অসম্ভব। লক্ষ করার বিষয় হল, সমীক্ষার সঙ্গে যুক্ত বেনিফিসিয়ারিরা এই সমস্যার মোকাবিলা করেছেন দুই থেকে আড়াই বছর আগে। জিনিসের দাম তারপর আরও অনেকখানিই চড়েছে। অতএব, এখন যেমন তেমন একটি ছোট্ট বাড়ি তিন লাখেও সম্পূর্ণ হওয়া মুশকিল। তাই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় কেন্দ্রীয় সহায়তার পরিমাণ বাড়িয়ে দেড় লক্ষ টাকা করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। কিন্তু নির্মলা সীতারামনের অর্থমন্ত্রক তাতে সাড়া দেয়নি। তীব্র অর্থসঙ্কটের দোহাই পেড়েই পিছিয়ে গিয়েছে। মন্ত্রিসভার গত আগস্টের বৈঠকেই আগামী পাঁচবছরে আরও দু’কোটি আবাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়। খরচের বাস্তবকে সামনে রেখে, তখনই এই প্রকল্পে বাড়ি পিছু আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধির জোরদার দাবি জানানো হয়। কিন্তু সরকার তাতে সাড়া দেয়নি, আশঙ্কা মতোই। এর ফল ভালো হওয়ার নয়। কারণ পর্যাপ্ত টাকা ছাড়া বাড়ি তৈরি হবে না, বহু বাড়ির কাজ থমকে যেতে পারে মাঝপথেই। টাকাগুলি অন্যভাবে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও থাকছে পদে পদে। নিজের বাড়ির স্বপ্ন পূরণ করার জন্য কিছু পরিবার মহাজনি ঋণের ফাঁদেও পড়ে যেতে পারে। মোদি সরকারের অপারগতা গরিব মানুষকে পরিষ্কার দুটি চরম বিপদের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে: স্বপ্ন দেখিয়েও পাকাবাড়ি না-দেওয়া অথবা ফেলে দেওয়া ঋণের ফাঁদে!