ব্যবসায় বেচাকেনা বেশ ভালো হবে। কাজকর্মে কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তির আনুকূল্য লাভ ও ভাগ্যোন্নতি। ... বিশদ
ব্যাপারটা বরাবর এরকমই দাঁড়ায় যে, বিহার বা ঝাড়খণ্ড ডুবে যাবে, অতএব ওই প্রতিবেশী রাজ্যকে বাঁচাতে বিপুল পরিমাণ জল নিম্ন অববাহিকার বাংলায় ঢুকিয়ে দাও। এমন একচক্ষু সিদ্ধান্তে যে বাংলার লক্ষ লক্ষ মানুষও বিপন্ন হবে, সেই অকাট্য যুক্তিটা কখনও মানা হয় না। বন্যার মতো দুর্যোগ বাংলার উপর অতীতে বার বার চাপানো হয়েছিল, নির্বিকার ভঙ্গিতে চাপানো হল এবারও। এটা প্রাকৃতিক বিপর্যের সংজ্ঞাভুক্ত নয়, এই বন্যা একশো শতাংশ ‘ম্যান-মেড’। এর দায় মোদি সরকারকেই নিতে হবে। কিছু এলাকায় এমন তোড়ে জল ঢুকেছে যে বহু মানুষ ভেসে গিয়েছেন। বেশিরভাগ মানুষকে উদ্ধার করা গেলেও কিছু লোককে শেষমেশ বাঁচানোই যায়নি। এছাড়া কাঁচাঘর ধসে পড়ার কারণে কিংবা গাছ থেকে পড়ে গিয়েও প্রাণ হারিয়েছেন কয়েকজন হতাভাগ্য মানুষ। সর্বশেষ সরকারি হিসেবে, অন্তত ২৮ জনের প্রাণ গিয়েছে। মৃতের তালিকায় রয়েছে শিশুও। বহু স্কুলবাড়ি এবং সরকারি অফিসেও জল ঢুকে গিয়েছে। টানা জলবন্দি বহু গ্রাম ও ছোট শহর। বরবাদ হয়ে গিয়েছে বহু রাস্তা। ফলে দুর্গত মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে সরানো এবং ত্রাণবণ্টন কঠিন হয়ে পড়েছে। দুর্ভোগের শেষ এখানেই হবে কি? ফের ভারী বৃষ্টির সতর্কতা এবং ডিভিসির কাণ্ডজ্ঞান এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। দুর্গত এলাকায় সাপের উপদ্রব এবং নানারকম রোগের আশঙ্কাও বাড়ছে।
এবার কৃত্রিম বন্যা ঘটানো হল ঠিক পুজোর মুখে। মানুষ না-পারল প্রতিমা গড়া শেষ করতে, না-পারল মণ্ডপ সাজাতে! পুজোর কেনাকাটাও হল না বহু পরিবারের। বাংলার মানুষের সবচেয়ে বড় উৎসব হল দুর্গাপুজো। একে কেন্দ্র করে প্রায় একমাসের আনন্দে ডুবে যায় বঙ্গসন্তানরা। এবার সবটাই মাটি হয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ডিভিসির এক ভয়াবহ সিদ্ধান্তে। মঙ্গলবার বোলপুরে বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। মৃতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য। কিন্তু বন্যার জল সরে যাওয়া মাত্রই জরুরি হয়ে উঠবে পুনর্গঠনের কাজ। সেটা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেরে ফেলতে প্রয়োজন হবে বিপুল পরিমাণ অর্থ। কিন্তু বিভিন্ন প্রকল্পে রাজ্যের প্রাপ্য ১.৭০ লক্ষ কোটি টাকা আটকে রেখেছে যে কেন্দ্র তাদের ঘুম কি ভাঙবে বাংলার এই দুঃসময়েও? শুধু নির্বাচন মানেই গেরুয়া ভোটপাখিদের আনাগোনা! ওই দলে মোদি, শাহ, নাড্ডা, যোগী কার না দর্শন মেলে? একুশের বিধানসভা এবং এবারের লোকসভা ভোটের ময়দানে তাঁদেরকে বস্তুত ডেইলি প্যাসেঞ্জার হিসেবেই পাওয়া গিয়েছিল! কিন্তু বাংলার মানুষের অপরিসীম দুঃখ-কষ্টের দিনগুলিতে তাঁরাই আবার ডুমুরের ফুল! কেন্দ্রের শাসকের গায়ে এমনি এমনি ‘বাংলা বিরোধী’ তকমা জোটেনি। বাংলা ও বাংলার মানুষের ভালোবাসা পেতে হলে কিছু করেও দেখাতে হবে মোদি সরকারকে। অন্তত এক্ষেত্রে নদী এবং জলাধারগুলির আমূল সংস্কারে এখনই উদ্যোগী হতে হবে তাদের। নদী এবং জলাধারের নাব্যতা বৃদ্ধি না-পেলে ডিভিসি এই কাণ্ড ঘটাতেই থাকবে। এই অন্যায় কিন্তু বাংলা আর মানবে না। একইসঙ্গে বন্যাবিপর্যস্ত এলাকার পুনর্গঠনের জন্য পর্যাপ্ত টাকাও দিতে হবে দিল্লিকে।