একাধিক সূত্রে অর্থপ্রাপ্তি ও ঋণশোধে মানসিক ভাব মুক্তি। নিজ বুদ্ধি ও দক্ষতায় কর্মোন্নতি ও সুনাম। ... বিশদ
তবে নাগরিক সমাজ এই জিনিসটাকে কোনোদিনই মেনে নিতে পারে না। তারা এর থেকে মুক্তির পথ খুঁজছে বহুদিন যাবৎ। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রিক হিংসায় নানাভাবে জড়িয়ে পড়া মানুষগুলিরও চোখ খুলে যাওয়া জরুরি। সম্ভবত, ওই উদ্দেশ্যে এরাজ্যেই একটি অনবদ্য সমীক্ষা করা হয়েছে এবং সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তার রিপোর্ট। তাতে দেখা যাচ্ছে, নানা সময়ে ঘটনাগুলিতে জড়িত লোকজনের বেশিরভাগই এজন্য এখন অনুতপ্ত। কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা বোধ থেকে ৮৬ শতাংশ মানুষই স্বীকার করেন, ‘যা করেছি, ভুল করেছি।’ তাঁদের মনে ক্ষত দগদগে হয়ে আছে আজও। একাধিক জেলার কিছু ‘স্পর্শকাতর’ এলাকার সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী, সাধারণ গ্রামবাসী এবং নানাভাবে হিংসায় জড়িয়ে পড়া যুবদের সঙ্গে কথা বলেন সমীক্ষকরা। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৪৩০ জনের মধ্যে পুরুষ ২৯০ জন এবং বাকি ১৪০ জন মহিলা। ৭৯ শতাংশ নারী-পুরুষের দাবি, তাঁরা অন্যের প্ররোচনার ফাঁদে পড়েই মারামারি বা হিংসাত্মক কার্যকলাপের জড়িয়ে পড়েন। এমনকী, ১৪ শতাংশ সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীও এসব ঘটনার জন্য আফশোস করেন এখনও। তাঁরা আত্মধিক্কারই দিচ্ছেন এই ভাষায়, ‘কাদের জন্য এসব করলাম? যাদের জন্য এত অন্যায় করা, তারাই তো মওকা বুঝে দল বদলে ফেলেছে! মাঝখান থেকে বোকা বনে গিয়েছি কেবল আমরাই।’
ভোটে হিংসা কি আটকানো যায় না? রাজনৈতিক দলগুলির কাছে এর উত্তর খুঁজতে যাওয়া বাস্তবিকই বৃথা। কারণ সুরাহার সন্ধান দেওয়ার ব্যাপারে তারা আন্তরিক ক্বচিৎ। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন ও অর্থায়ন এবং নির্বাচনে হিংসার পক্ষ নিয়েছে এমন দল খুঁজে পাওয়া যায় না, বরং এসবেরই নিন্দায় সরব সমস্ত দল। তবু হিংসার বিরাম নেই, বরং কোনও কোনও স্থানে নৃশংসতা ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। অতঃপর, যাবতীয় দায় অন্যের ঘাড়ে ঠেলে দেওয়ার রাজনীতিতেই দড় হয়ে উঠেছে তারা সকলেই এবং একযোগে। নিজের দলের উগ্র-হিংস্র কর্মী-ক্যাডারদের সংযত করার কোনও পাঠ কারও পাঠশালায় নেই। বরং তাদের হয়েই চলে নির্লজ্জ সাফাই। তার ফল যা হওয়ার তাই হয়—হিংসার পুনরাবৃত্তি—সেখানে শাসক এবং বিরোধীতে কোনও ভেদাভেদ নেই। এই দুনিয়ায় যত ধরনের বৈষম্য আছে, তার প্রায় সবেতেই পয়লা নম্বরে ভারত, ব্যতিক্রম কেবল দায় গ্রহণের বেলা। এই একটিমাত্র ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘পূর্ণ সাম্যবাদ’—কেউ ছোট বা বড় নয়—সবাই দাঁড়িয়ে আছে একটি বিন্দুতে। প্রত্যেকে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অভিযোগের তর্জনী তুলেই বীরত্ব ফলায় এবং দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টায় ওস্তাদ। ‘রাজনীতি’র লক্ষ্য থেকে যেদিন ‘মানুষ’ বিযুক্ত হয়ে গিয়েছে এবং ‘মোক্ষ’ হয়ে উঠেছে নিছক ‘ক্ষমতা’, সেদিন থেকেই এই সমস্যার সূচনা। ক্ষমতার লক্ষ্য যেদিন থেকে হয়ে উঠেছে নিরঙ্কুশ এবং সর্বগ্রাসী, এই বিপদ সেদিন চরম আকার নিয়েছে। এর একমাত্র সমাধান—রাজনীতিতে বিরোধী পরিসরকেও সমান মান্যতা দান। বিরোধী-শূন্য ক্ষমতার আসনে অনন্তকাল রাজ করার বাসনাই যত নষ্টের গোড়া। ক্ষমতার অধিকারী কোন দল গণতন্ত্রের সৌন্দর্যকে রক্ষা করতে প্রস্তুত? নির্বাচনে হিংসা বন্ধে আন্তরিক হলে সব শাসক দল এই প্রশ্ন সবার আগে নিজেকে করুক।