একাধিক সূত্রে অর্থপ্রাপ্তি ও ঋণশোধে মানসিক ভাব মুক্তি। নিজ বুদ্ধি ও দক্ষতায় কর্মোন্নতি ও সুনাম। ... বিশদ
মোদি এই প্রতিশ্রুতিই সেদিন দেন যে, উদ্ধার করা কালো টাকা থেকে প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা জমা করা হবে। ওইসঙ্গে হবে ঘরে ঘরে চাকরি, বছরে ২ কোটি চাকরি দেবে সরকার। অস্বীকার করার উপায় নেই, জনসংখ্যার অনুপাতে ভারতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দীর্ঘকাল ভীষণ কম ছিল। এই ব্যাপারে সবচেয়ে পিছিয়ে ছিল প্রান্তিক গ্রামাঞ্চল এবং সব এলাকার গরিব মানুষজন। মোদি সরকার প্রশংসনীয় তৎপরতার সঙ্গে এবং বস্তুত পাইকারি হারে কোটি কোটি নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছিল। কিন্তু নাটকের শেষাঙ্কে পৌঁছতেও দেরি হয়নি আমাদের—বেশিরভাগ অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ল দ্রুত। কারণ ১৫ লক্ষ টাকা দূর, মাথাপিছু ১৫ পয়সাও জমা করেনি সরকার। ফলে অ্যাকাউন্ট মেনটেন করার ন্যূনতম এক-দুই হাজার টাকাও বাড়ন্ত হল বেশিরভাগের ক্ষেত্রে। আর বছরে ২ কোটি চাকরিও হয়ে গেল রূপকথার গল্পের অন্য এক অধ্যায়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মানলে দশ বছরে বিশ কোটি চাকরি হয়ে যাওয়ার কথা।
কিন্তু বাস্তবে কী ঘটেছে? ভারত সরকারের প্রাক্তন প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু সম্প্রতি অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছেন যে, গত দুই দশকে ভারতে বেকারত্ব হু হু করে বেড়েছে। বলা বাহুল্য, তার মধ্যে শেষের দশকে ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) এবং ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (এইচডিআই)-এর তৈরি ‘ইন্ডিয়া এমপ্লয়মেন্ট রিপোর্ট ২০২৪’ প্রসঙ্গে তাঁর প্রণিধান মন্তব্য, ‘ভারতের শিক্ষিত বেকারদের জন্য নতুন দুশ্চিন্তা উপস্থিত হল।’ ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে ডঃ বসু লিখেছেন, মাধ্যমিক এবং তার ঊর্ধ্বে শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন যুবদের বেকারত্ব ৩৫.২ শতাংশ (২০০০) থেকে বেড়ে ৬৫.৭ শতাংশ (২০২২) হয়ে গিয়েছে! ক্রোনিইজম এবং বিশ্বাসের ভাঙন কী করে দেয়, এই পরিসংখ্যান সেটাই দেখিয়েছে।’ রিপোর্টে এও বলা হয়েছে, দেশের বেকার বাহিনীর ৮৩ শতাংশই হল যুব শ্রেণির নারী-পুরুষ। প্রান্তিক গ্রামাঞ্চল এবং গরিবদের মধ্যে শিক্ষার চরম বৈষম্যের দিকটিও তুলে ধরেছে এই রিপোর্ট। এর পাশাপাশি, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক (আরবিআই) দিয়েছে বাকি ‘সুখবরটি’—জিনিসপত্রের চড়া দামে লাগাম পড়ছে না এবছর। সব মিলিয়ে মোদির ‘বিকশিত’ ভারতে দৃষ্টির ত্রিসীমানাতেও কোনও স্বস্তিরেখা আঁকা হয়নি। প্রতিশ্রুতির দিন শেষ। ‘জুমলা’র কবর ফুঁড়ে দীর্ঘতর হচ্ছে মোদির গ্যারান্টির তালিকা—আপাতত, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামের ঊর্ধ্বগতি এবং বেকারত্বের চরৈবেতি!