একাধিক সূত্রে অর্থপ্রাপ্তি ও ঋণশোধে মানসিক ভাব মুক্তি। নিজ বুদ্ধি ও দক্ষতায় কর্মোন্নতি ও সুনাম। ... বিশদ
এই দফায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রাজ্য হল গুজরাত। মোদি-শাহের রাজ্যের ২৬টি আসনের সবগুলিতেই ওই একদিনে ভোট নেওয়ার কথা। মোরারজি দেশাই এই কেন্দ্র থেকে জিতে দেশের প্রধানমন্ত্রী হন। লোকসভায় তিনি সুরাতের প্রতিনিধিত্ব করেন মোট পাঁচবার। ১৯৮৯ থেকে আসনটি বিজেপির শক্তঘাঁটি। ‘স্ট্রংম্যান’ কাশীরাম রানা সেখান থেকে ছ’বার এমপি হন। গত নির্বাচনে সুরাত-সহ গুজরাতের সবক’টি আসনই দখল করেন মোদিরা। তার মধ্যে সুরাতে বিজেপির পক্ষে প্রদত্ত ভোট (৭.৯৬ লক্ষ) এবং জয়ের মার্জিন (৫.৪৮ লক্ষ) ছিল চমকপ্রদ। সব মিলিয়ে গুজরাতের ভিতরে অন্তত সুরাত আসনটি বিজেপির জন্য শুধু ‘নিরাপদ’ নয়, ‘দুর্ভেদ্য দুর্গ’। তা সত্ত্বেও সুরাতের ১৬.৫৬ লক্ষ ভোটার এবার ভোটদানের সুযোগ পেলেন না। ভোটগ্রহণের অনেক আগেই আসনটি চলে গেল বিজেপির ঝুলিতে! রবিবার বাতিল হয় কংগ্রেস প্রার্থীর মনোনয়ন। ‘হাত’-এর ‘ডামি’ প্রার্থীর সম্ভাবনাও খারিজ করে দেন রিটার্নিং অফিসার। বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইতে বাকি ছিলেন বিএসপি এবং নির্দল-সহ আটজন। কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তাঁদের প্রত্যেকেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন সোমবার! অমনি একমাত্র প্রার্থী বিজেপির মুকেশ দালালকে ‘বিজয়ী’ ঘোষণা করে দেওয়া হয়। মনোনয়নপত্র পেশের শেষদিন ছিল শুক্রবার। শনিবার ছিল ‘স্কুটিনি’। তারপরই সুরাতের কংগ্রেস প্রার্থী নীলেশ কুম্ভানির প্রস্তাবকদের স্বাক্ষরে গরমিলের কারণ দেখিয়ে মনোনয়ন বাতিল করেন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি বা রিটার্নিং অফিসার। এক্ষেত্রে প্রস্তাবকরাও স্বীকার করেন যে, সইগুলি তাঁদের নয়। একইভাবে বাতিল হয় ওই কেন্দ্রে কংগ্রেসের বিকল্প প্রার্থী সুরেশ পাডশালারও মনোনয়ন। ‘হাত’ শিবিরের প্রতিবাদ, আর্জির কোনও কিছুই মান্যতা পায়নি। সেদিনই ভোটের লড়াই থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন বিএসপির পেয়ারেলাল ভারতী-সহ বাকি আটিজনও! অতঃপর প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধির হাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের শংসাপত্র তুলে দিতে দেরি করেনি কমিশন। অর্থাৎ ভোট গণনা এবং ফলাফল ঘোষণার দিন ৪ জুন পর্যন্ত সুদীর্ঘ প্রতীক্ষা থেকে মুক্তি দেওয়া হল মিঃ দালালকে। তাঁকে দ্রুত অভিনন্দন জানান গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল এবং রাজ্য বিজেপির সভাপতি সি আর পাতিল। ‘এক্স’ হ্যান্ডলে পাতিল লেখেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে প্রথম পদ্মটি তুলে দিল সুরাত।’
সুরাতের ভোট-পরম্পরায় আমরা দেখেছি, পৃথিবী নিতান্ত উল্টে না গেলে অন্তত সুরাত আসনটি নিয়ে গেরুয়া শিবিরের দুশ্চিন্তার কোনও কারণ ছিল না। তা সত্ত্বেও যে কায়দায় এবং অতিতৎপরতায় মুকেশ দালালের জয় হাসিল করল বিজেপি, তা মোটেই স্বাভাবিক নয়। বিশেষত মোদি এবং শাহ যে অহমিকার সঙ্গে লোকসভায় চারশো পারের ‘গ্যারান্টি’ দেশজুড়ে বিতরণ করছেন তার স্পিরিটের সঙ্গে এই কারবার মোটে যায় না। বরং এই বার্তাই সর্বত্র পৌঁছচ্ছে যে, বিজেপি নেতারা মুখে যতই হম্বতম্বি করুন, তাঁরা ভিতরে ভিতরে রীতিমতো ভড়কে আছেন। সম্ভবত, ভোটের প্রথম দফাতেই তাঁদের গোচরে এসেছে পাহাড়ের কোণে ধোঁয়ার উদ্গিরণ! তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তো জোরের সঙ্গে কবে থেকেই বলে চলেছেন, এনডিএ দু’শোও পেরবে না। তাই কি গেরুয়া ভোট ম্যানেজাররা যেকোনোভাবে কিছু ফসল এখন থেকেই গোলায় ভরে নিতে মরিয়া হলেন? চারশো পারের ঢক্কা নিনাদের মধ্যেই কি ধরা আছে এসব ‘ধূসর’ কারবার? এই যে অবিশ্বাস্য কাণ্ডটি ঘটানো হল, এতে একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ণ হল এবং কালির ছিটে লাগল তাদের ভাবমূর্তিতে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র স্ক্রুটিনিতে কমিশনের কাছে আরও সহনশীলতা প্রত্যাশিত ছিল। বিজেপি-বিরোধী প্রার্থীদের ভরসা জোগাতেও কি ব্যর্থ হয়নি কমিশন? এই সঙ্কেত গণতন্ত্রের পক্ষে মোটেই শুভ নয়। জনমনে এই প্রশ্নও উঁকি দেবে যে, এটা কি কোনোভাবে ‘ওয়ান নেশন নো ইলেকশন’-এরই মহড়া?