সব কর্মেই অর্থকড়ি উপার্জন বাড়বে। কর্মের পরিবেশে জটিলতা। মানসিক উত্তেজনা কমাতে চেষ্টা করুন। ... বিশদ
বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর কিংবা ঝাড়গ্রামে ভোট-রাজনীতিতে হাতি ঢুকবে—এটাই দস্তুর। এবার লোকসভাও তার ব্যতিক্রম নয়। স্বভাবতই বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রে হাতির হানা নিয়ে রাজ্যকে একহাত নিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ। তাঁর অভিযোগ, হাতির তাণ্ডবে ফসল, ঘরবাড়ির ক্ষতি হলে নায্য ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না কেউ। আর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দিয়েই দায় সারছে সরকার। হাতির সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না।’ প্রাক্তন স্বামীকে পাল্টা দিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক। তবুও মানবিক মুখ্যমন্ত্রী অসহায় পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন। সেটা ওঁরা দেখতে পান না।’ বিষ্ণুপুর পাঞ্চেতের ডিএফও রাজু সরকারও বলছিলেন, ‘হাতির হানায় মৃতদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরনের পাশাপাশি পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়া হয়। সম্প্রতি আমাদের ডিভিশনে নতুন করে ৬ জন চাকরি পেয়েছেন।’
বিষ্ণুপুরেও এমন অনেকে রয়েছেন যাঁরা মমতার মানবিক প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। সরকারি নিয়ম মেনে দ্রুত ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। পেয়েছেন চাকরিও।
উদাহরণ-এক, জয়পুরের নতুনগ্রামের বাসিন্দা মংলী হেমব্রম। ২০১৪ সালে তাঁতিপুকুরের জঙ্গলে পাতা তুলতে গিয়ে বুনো হাতির হামলায় বেঘোরে প্রাণ হারান তিনি। মংলীর তখন দুই নাবালিকা কন্যা। তাদের একজন কল্পনা হেমব্রম সাবালিকা হতেই চাকরি পেয়েছেন। তিনি এখন বিষ্ণুপুর ফরেষ্ট রেষ্ট হাউসের কর্মী।
উদাহরণ-দুই, বাঁকাদহ রেঞ্জের কাঠগুঁড়া গ্রামের বাসিন্দা সুখী হাঁসদা। ২০১২ সালে জঙ্গলে পাতা তুলতে গিয়ে বুনো হাতির হানায় প্রাণ হারান। তাঁর ছেলে বাদল হাঁসদা আজ বনকর্মী। একইভাবে বাঁকাদহের দীপক বাজ, তালডাংরার ঢেমনামারা গ্রামের বাসিন্দা রসিদা দালাল, জয়পুরের কুচিয়াকোলের বাসনা সর্দার হাতির হামলায় অভিভাবকদের হারিয়েছিলেন। সম্প্রতি তাঁরা প্রত্যেকেই বনদপ্তরে চাকরি পেয়েছেন।
বিষ্ণুপুর রেষ্ট হাউসের বাগানে জল দিতে দিতে কল্পনা হেমব্রম বলছিলেন, হাতির হানায় মাকে হারিয়েছি। তাঁকে আর ফিরে পাব না। কিন্তু আর এক মা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ বাদলবাবুও বলছিলেন, ‘মায়ের অভাব পূর্ণ হবে না কোনওদিন। কিন্তু সরকারি চাকরি পাব, তা কোনওদিন ভাবিনি।’ বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষ্ণুপুর পাঞ্চেতের অন্তর্গত বাঁকাদহ, বিষ্ণুপুর ও জয়পুর—এই তিন রেঞ্জের জঙ্গলের ভেতর দিয়ে বুনো হাতি যাতায়াত করে। বাম আমলে হাতির হানায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে পরিবারকে মাত্র ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হতো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর তার পরিমান অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ারও সংস্থান রাখা হয়েছে। সরকারের এই প্যাকেজে খুশি জঙ্গল লাগোয়া কাঠগুড়া, চাচর, আমডহরার মতো হাতি উপদ্রুত এলাকার বাসিন্দারা।