কোনও কিছুতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভাববেন। শত্রুতার অবসান হবে। গুরুজনদের কথা মানা দরকার। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সুফল ... বিশদ
উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদের বাংলাদেশ সীমান্তের বহু জায়গাতেই কাঁটাতার নেই। পাচারকারীরা অবাধেই গোরু বা মোষ পাচার করে। চাষের জমির উপর দিয়ে মোষের পাল নিয়ে যাওয়ায় শষ্যের ক্ষতি হয়। কয়েকদিন আগে রানিনরের রাজাপুর এলাকা দিয়ে আড়াই থেকে তিন হাজার গোরু এবং মোষ পাশ করানোয় কয়েকশো বিঘা জমির শষ্য নষ্ট হয়েছিল। এলাকার বাসিন্দাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সেই খবর ‘বর্তমান’ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরেই বিএসএফ নড়েচড়ে বসে। কয়েকদিন ধরে লাগাতার খবর প্রকাশ হওয়ার পরেই ওই এলাকায় পাচার বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। দক্ষিণবঙ্গের বিএসএফের অন্যতম এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ওই এলাকা দিয়ে পাচার বন্ধের জন্য সব রকম কৌশল অবলম্বন করা হবে। সেই নির্দেশ ইতিমধ্যেই ক্যাম্পের আধিকারিকদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। রাতেও টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। পাচারকারীরা গোরু বা মোষের পাল নিয়ে এলে তাদের আটকানো হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, রানিনগর সীমান্ত দিয়ে বহু বছর ধরেই গোরু পাচার হয়। অল্প গোরু পাচার হলে সেটাকে পাচারকারীরা ‘বাইপাস’ বলে। এক সঙ্গে আড়াই থেকে তিন হাজার গোরু বা মোষের পাল সীমান্ত পার হলে তাকে ‘ঝটকা’ বলে। কয়েক দিন আগে পাচারকারীরা ঝটকা দিয়েছিল। রানিনগর সীমান্তের এক ব্যক্তি বলেন, ঝটকার ফলে বহু জমির সর্ষে, আলু, মটরশুঁটি আর ঘরে উঠবে না। সব শেষ হয়ে গিয়েছে। বিএসএফ আগে এরকম ব্যবস্থা নিলে এত ক্ষতি হতো না। পাচারকারীরা অল্প সংখ্যক গোরু আলপথ দিয়ে নিয়ে গেলে ফসলের ক্ষতি হয় না। কিন্তু, ঝটকা এলেই সব শেষ হয়ে যায়। এখন নদীতে কম জল রয়েছে। সেই কারণে গোরু বা মোষ হেঁটেই নদী পার হয়ে যায়। বর্ষার সময় মোষের সঙ্গে কলার ভেলা বেঁধে নদী পার করানো হয়। নদী পার হওয়ার পর কিছুটা পথ হেঁটে গেলেই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছে যাওয়া যায়। এখন বিএসএফ নদী থেকে কিছুটা দূরেই সাত থেকে আট ফুট গভীর গর্ত করেছে। ওই পথ দিয়ে গোরু বা মোষ পার করা সম্ভব নয়। তবে পাচারকারীরা অন্য পথে গবাদি পশু নিয়ে যেতে পারে। সেই সুযোগ তাদের কাছে রয়েছে। সেই পথ অবশ্য তারা খুব বেশি ব্যবহার করে না।
বিএসএফের দাবি, মুর্শিদাবাদের সমস্ত সীমান্তবর্তী এলাকায় গোরু বা মোষ পাচার বন্ধ রয়েছে। রাতের অন্ধকারে কেউ সীমান্ত দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন সীমান্তে বিভিন্ন ধরনের পণ্য পাচার হয়। রানিননগর সীমান্তে বহু দিন ধরেই গোরু বা মোষের পাল পার করানো হয়। জলঙ্গি এলাকা দিয়ে গোরুর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের নেশার সামগ্রী পাচার হয়। আগে হেরোইন এবং গাঁজা বেশি পাচার হতো। এখন ইয়াবা ট্যাবলেটের রমরমা বেড়েছে। কয়েকদিন আগে বিপুল সংখ্যক ইয়াবা সহ তিনজন গ্রেপ্তার হয়। এছাড়া জঙ্গিপুর সীমান্তে গোরু এবং অস্ত্র পাচার হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গোরু ও মোষের পাশাপাশি অন্যান্য বেআইনি কারবারও বন্ধ হোক। তাহলে সীমান্তের গ্রামগুলিতে শান্তি ফিরবে। গোরু পাচারের সময় বহু অপরিচিত মুখও সীমান্ত পেরিয়ে যায়। তা কী উদ্দেশে বাংলাদেশে যায় তা অনেকের কাছে অজানা। কিছুদিন পর আবার তারা এলাকায় ফিরেও আসে।
বিএসএফ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, গোরু ও মোষ পাচারের খবর লাগাতার প্রকাশ হওয়ার পর শীর্ষ আধিকারিকরা রিপোর্ট চেয়ে পাঠান। তারপরেই পাচার রুখতে সীমান্তে গর্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগামী দিনে আরও কয়েকটি এলাকায় তাদের এভাবেই গর্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেসব এলাকাগুলি তারা ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, পাচার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শান্তিতে রাতে ঘুমানো যাচ্ছে। যদিও এই কড়াকড়ি কতদিন থাকবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।