নিউ ইয়র্ক: ২১০০ সাল নাগাদ ধারণার চেয়েও দ্বিগুণ বাড়বে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য। বিজ্ঞান বিষয়ক মার্কিন জার্নাল ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’ নামে জার্নালে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমান মাত্রায় তাপ নিঃসরণ অব্যাহত থাকলে ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় দু’মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এতদিন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২১০০ সাল নাগাদ এক মিটারের চেয়ে কিছুটা কম বাড়তে পারে। তবে নতুন গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। এতে আগের ধারণার চেয়ে দ্বিগুণেরও কিছু বেশি হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে। আর সেটা সত্য হলে আশ্রয়হীন হবে লাখ লাখ মানুষ। বিপদের মুখে পড়বে লন্ডন, নিউ ইয়র্ক ও সাংহাইয়ের মতো বড় বড় শহরগুলোও। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উদ্বাস্তু হিসেবে ইউরোপে পাড়ি দিতে পারে ১০ লাখ শরণার্থী। নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে কার্বন নির্গমন এখন যেভাবে চলছে তা কমানো না গেলে ৮০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের একটি বড় অংশ জলের নীচে চলে যেতে পারে। দুনিয়াজুড়ে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকায় বেড়েছে বরফ গলার পরিমাণ। ফলে ধারণার চেয়েও বেশি মাত্রায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর ফলে ৮০ লাখ বর্গ কিলোমিটার পরিমাণ ভূমি সাগরের জলের তলায় তলিয়ে যাবে। যে ৮০ লাখ বর্গ কিলোমিটার পরিমাণ ভূখণ্ড সাগরের জলে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের একটি বড় অংশ এবং মিশরের নীল নদ উপত্যকা থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। এর ফলে কোটি কোটি মানুষকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে।
২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা সাত শতাংশের কিছুটা কম বাড়তে পারে। এতে দেশের ১৭ শতাংশ ভূখণ্ড সাগরের জলে তলিয়ে যেতে পারে। আর সেটা হলে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়বেন লাখ লাখ মানুষ। যে জায়গাগুলো জলের নীচে চলে যাবে তার অনেকগুলোই গুরুত্বপূর্ণ ফসল উৎপাদন অঞ্চল। যেমন, মিশরের নীল নদের বদ্বীপ। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমন পরিণতি এড়ানোর জন্য এখনও সময় রয়েছে, যদি আগামী কয়েক দশকে কার্বন নির্গমন বড় আকারে কমানো যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কার্বন নির্গমন বিদ্যমান হারে চলতে থাকলে ভবিষ্যতের পৃথিবী এখনকার চেয়ে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতর হবে। এতে ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে ৬২ সেন্টিমিটার থেকে ২৩৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। এর আগে ২০১৩ সালের রিপোর্টে বলা হয়েছিল সমুদ্রস্তরের উচ্চতা ৫২ থেকে ৯৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। গবেষণা দলের প্রধান ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জোনাথন বামবার বলেন, পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকা ও পূর্ব অ্যান্টার্কটিকায় বড় বদল আসবে। বিশ্বের ১৭ লাখ বর্গকিলোমিটার ভূমি হারিয়ে যেতে পারে। আকারে এটা লিবিয়ার প্রায় সমান। বিশ্বে বিপুল খাদ্য উৎপাদন করে— এমন অনেক জমি হারিয়ে যেতে পারে।