উত্তম বিদ্যালাভের যোগ আছে। কাজকর্মে উন্নতি ও কাজে আনন্দলাভ। অর্থাগমের উত্তম যোগ। ... বিশদ
বিন্নাগুড়ির অবস্থান জলপাইগুড়ি জেলার মধ্যে হলেও তা আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাট বিধানসভার অন্তর্গত। বিন্নাগুড়িতে বিজেপির ভালো ভোট আছে। লোকসভা ভোটেও ভালো ফল করেছিল। উপনির্বাচন নিয়ে দলের উঁচুতলায় আত্মবিশ্বাস থাকলেও নীচেরতলায় রয়েছে বেশ সংশয়। আর তার কারণ নাকি নির্দল প্রার্থী বুদ্ধিমান লামা। প্রাথমিক শিক্ষক। এলাকায় ইমেজ খুব ভালো। তারচেয়েও বড় কথা, গোর্খাদের মধ্যে তিনি ভীষণ জনপ্রিয়। আগে বিজেপির সঙ্গে থাকায় গেরুয়া ভক্তদের মধ্যেও তাঁর ভালোই প্রভাব আছে। তাই এবার বিজেপির নেপালি ভোট ভাঙার আশঙ্কা প্রবল।
বিন্নাগুড়ি বাসস্ট্যান্ডে বইয়ের দোকানে বসে গোপাল চৌধুরী যখন এই সব কথা বলছিলেন, তখন তাঁর চোখেমুখে একরাশ হতাশা। সক্রিয় রাজনীতি করেন? উত্তরে গোপালবাবু বলেন, ‘এক সময় আরএসপি করতাম। তারপর বিজেপি। আগে সমবায় করে প্রেস চালাতাম। এখন অন্যের দোকানে কাজ করি। তাই রাজনীতি সেভাবে
করি না। আর করেই বা কী হবে? পঞ্চায়েতে বিজেপির টিকিটে জিতে একজন তৃণমূলে চলে গেল। এই তো রাজনীতির অবস্থা!’ এবার ভোটে কী হবে? উত্তর এল, ‘বলা কঠিন। তবে লামা বিজেপির নেপালি ভোট কাটবে।’
মাদারিহাটে চলছে ভোট কাটাকাটির অঙ্ক। বিজেপির পক্ষে ভোট বাড়ানো দিন দিন কঠিন হচ্ছে। তাই বিরোধী ভোটের বিভাজনই তাদের মূল লক্ষ্য। আলিপুরদুয়ার জেলার রাঙালিবাজনা পঞ্চায়েতের শিশুবাড়িতে গাছে পতাকা বাঁধছিলেন কংগ্রেস কর্মীরা। এই পঞ্চায়েতের ২৩টি আসনের একটিতেও কংগ্রেস জিততে পারেনি। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মুস্তাফা রহমান, আমিনুর রহমান। মুস্তাফা সাহেবের স্বীকারোক্তি, ‘এখানে কংগ্রেস দুর্বল। নতুন করে তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেটুকু ভোট পাওয়া যায় সেটাই লাভ।’
এই লাভটা যতটা না কংগ্রেসের, তারচেয়েও অনেক বেশি বিজেপির। তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোট কাটলে বিজেপির লাভ ষোলোআনা। তাই মদত দিচ্ছে গেরুয়া শিবির। চা বাগানের আদিবাসীদের একটা বড় অংশ একদশক ধরে বিজেপিকে সমর্থন জুগিয়ে আসছে। সৌজন্যে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। গেরুয়া শিবিরের আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্ক ভাঙতে মরিয়া তৃণমূলও। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের একটা অংশকে তারা পাশে টেনেছে। প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ জন বার্লার বিদ্রোহ সেই কাজ আরও সহজ করে দিয়েছে। লোকসভা ভোটে যাঁরা তলায় তলায় বিজেপির শিকড় কাটার চেষ্টা করেছিলেন, এখন তাঁরাই প্রকাশ্যে বিরোধিতা করছেন। এবারের ভোটে সেটাই বিজেপির সবচেয়ে বিপদের কারণ হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপিকে রক্ষা করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে আরএসএস। মানুষের ছোট ছোট ক্ষোভগুলোকে অত্যন্ত সুকৌশলে কাজে লাগাচ্ছে। দিন কয়েক আগে মাদারিহাটের যুব আবাসে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের মিটিং ডেকেছিল তৃণমূল। উদ্দেশ্য মহিলা ভোট এককাট্টা করা। উদ্যোক্তারা নির্বাচনী বিধির কথা মাথায় রেখে টিফিনের ব্যবস্থা করেননি। ছিল না জলের বোতল। সেটাকে ইস্যু করেই তলে তলে চলছে মহিলাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরির চেষ্টা।
সাধারণ নির্বাচনের বড় বড় ব্যবধানও উপনির্বাচনে কর্পূরের মতো উবে যায়। রায়গঞ্জের ৪৬ হাজারের, রানাঘাট দক্ষিণের প্রায় ৩৭ হাজার ভোটের মার্জিনও হাওয়া হয়ে গিয়েছে। সেই তুলনায় মাদারিহাটের ১১ হাজার কিছুই নয়। তাই মাদারিহাট নিয়ে স্বস্তিতে নেই বিজেপি।