নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য—ভারতবর্ষের এই চিরন্তন রীতিকে আরও শক্তিশালী করেছে নানা ভাষা। অসংখ্য ভাষার ব্যবহার হয় এই দেশে। এই ভাষাই ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এক করে রেখেছে গোটা দেশকে, দেশমাতৃকাকে। সেই মা’কে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখা যায় না।’ শুক্রবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রাজ্য সরকার আয়োজিত দেশপ্রিয় পার্কের অনুষ্ঠানে এই ভাষাতেই নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, বাংলা আমার মাতৃভাষা। তবে সব ভাষাকেই সম্মান দিতে জানি, ভালোবাসি সব ভাষাকেই। এই ভাষাই আমাদের একসূত্রে বেঁধে রেখেছে। প্রত্যয়ী মমতার বার্তা, ভাষা শহিদ দিবসে আমাদের শপথ, ঐক্যবদ্ধ ভারত চাই, ঐক্যবদ্ধ চাই বাংলা। ঐক্যবদ্ধ হয়েই লড়াই করব। তা সে লড়াই যতই কঠিন হোক না কেন। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তায় সায় দেয় গোটা সভাস্থল। ঐক্যবদ্ধ ভারত জিন্দাবাদ, বঙ্গভূমি জিন্দাবাদ, জয় বাংলা—মুখ্যমন্ত্রীর স্লোগানে গলা মেলান দর্শক-শ্রোতারা।
দেশপ্রিয় পার্কের সভাস্থল এদিন প্রকৃত অর্থেই ছিল বাংলা ভাষা চর্চার অস্থায়ী এক কেন্দ্র। প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে ‘আমি বাংলায় গান গাই’ দিয়ে শুরু হয়েছিল অনুষ্ঠান। এরপর এক এক করে কবিতা পাঠ করেন জয় গোস্বামী, শ্রীজাত, সুবোধ সরকার, বাংলা ভাষার নানা দিক তুলে ধরেন আবুল বাশার, শুভাপ্রসন্ন, গান শোনান নচিকেতা, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, মনোময় ও শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল রাজ্যের তথ্য-সংস্কৃতি ও স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব বিবেককুমারের কন্ঠে অনবদ্য পরিবেশনা ‘টাক ডুম, টাক ডুম বাজে, বাংলাদেশের ঢোল’ গানটি। গানের তালে তাল মেলাচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সহ উপস্থিত অভ্যাগতরা।
ভোট বিশেষজ্ঞ যোগেন্দ্র যাদব ছিলেন এদিনের অনুষ্ঠানের অন্যতম সংযোজন। রাজনৈতিক কিছু কাজ নিয়ে এদিন কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়েছিলেন যোগেন্দ্র। সেখান থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সোজা চলে আসেন দেশপ্রিয় পার্কে। মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যদের সঙ্গেই ভাষা শহিদ স্মারকে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করেন তিনিও। বাংলায় কিছুক্ষণ বক্তৃতাও দেন। পরে নিজের মাতৃভাষা হিন্দিতে বলেন, অসংখ্য ভাষা নিয়ে আমাদের এই দেশ। তামিল, কন্নড়, মৈথিলী, বাংলা সব আমাদের রাষ্ট্রভাষা। আগেও বলেছি, এখন আবার বলছি, হিন্দি আমাদের রাষ্ট্রভাষা নয়। যোগেন্দ্রর কটাক্ষ, শুধু হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্থান করলে দেশ ভেঙে টুকরো হয়ে যাবে। সব ভাষাকে শক্তিশালী হতে হবে। তবেই শক্তিশালী হবে ভারতবর্ষ।