সায়ন্ত ভট্টাচার্য, কলকাতা: বিশ্বের অন্যতম শতাব্দীপ্রাচীন টালা জলাধারের প্রথম প্রকোষ্ঠের (ব্লক বা কম্পার্টমেন্ট) সংস্কারের কাজ শেষের ছ’মাসের মধ্যেই দ্বিতীয় প্রকোষ্ঠের সংস্কারের কাজও শেষ করে ফেলল কলকাতা পুরসভা। রাজ্যে লকডাউন শুরুর মুখেই কলকাতা পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের কর্তাদের নজরদারিতে কাজ দ্রুত শেষ হয়েছে। দু’টি প্রকোষ্ঠতেই জল ভরে তা দিয়ে সরবরাহ করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে পুর প্রশাসন সূত্রে খবর। কিন্তু লকডাউনের জেরে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রকোষ্ঠের সংস্কারের কাজ পিছিয়ে গেল বলেই দাবি করেছেন ওই বিভাগের কর্তারা। তাঁদের কথায়, অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে দ্বিতীয় প্রকোষ্ঠের কাজ শেষ করা হয়েছে। যা নজিরবিহীন। নিখুঁতভাবেই কাজ করা হয়েছে। চলতি বছরের শেষে বাকি দু’টি প্রকোষ্ঠ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লকডাউনের জন্য এই কাজ অনেকটাই পিছিয়ে গেল। যার জেরে কাজ শেষ করতে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় লেগে যাবে বলেই তাঁরা জানিয়েছেন। কলকাতা পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের জুন মাসে প্রথম প্রকোষ্ঠের সংস্কারের কাজ শেষের পর দ্বিতীয় প্রকোষ্ঠের সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হয়। টালা জলাধারের ২০ ফুট উচ্চতার এক একটি প্রকোষ্ঠের জলধারণ ক্ষমতা প্রায় সাড়ে ২২ লক্ষ গ্যালন। আর পুরো জলাধারের জলধারণ ক্ষমতা প্রায় ৯০ লক্ষ গ্যালন। ব্রিটিশরা টালা জলাধার তৈরির সময়ে তার মধ্যে প্রায় ৫০ মিটার বাই ৫০ মিটার আয়তনের চারটি প্রকোষ্ঠ করেছিল, যাতে প্রয়োজনে মেরামতির জন্য একটি বন্ধ রাখলেও বাকি তিনটি চালু রাখা যায়। মেয়র ফিরহাদ হাকিম বললেন, করোনার সমস্যা না হলে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রকোষ্ঠের কাজ দ্রুত শেষ হয়ে যেত। তবে চেষ্টা করব, যাতে বাকি দু’টি প্রকোষ্ঠের কাজ দ্রুত শেষ করে দেওয়া যায়।
পুরসভা সূত্রে খবর, ১৯০৭ সালের আগস্ট মাসে এই জলাধার তৈরির কাজ শুরু হয় এবং শেষ হয় ১৯০৯ সালের ১৮ নভেম্বর। সাত হাজার মেট্রিক টন ইস্পাত দিয়ে এই জলাধার তৈরি করে ব্রিটিশরা। বিশ্বের বৃহত্তম জাহাজ টাইটানিক যে ইস্পাতে তৈরি হয়েছিল, তা দিয়েই গড়া হয়েছিল টালা জলাধার। জলাধারে ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৫৮৫ বর্গফুট এলাকাজুড়ে ইস্পাতের পাত বসানো রয়েছে। প্রায় চার লক্ষ বোল্টের মাধ্যমে জলাধারের একটি অংশের সঙ্গে অপরটি জোড়া। ২১৫টি লোহার স্তম্ভের উপরে ৮৫০০ টন লোহার ওই কাঠামোর প্রয়োজনীয় মেরামতির পাশাপাশি তাকে মজবুত করার কাজও চলছে। জল সরবরাহের প্রকোষ্ঠগুলির ভিতরে মরচে নিরোধক ফুড গ্রেড রঙের প্রলেপের পাশাপাশি পরের দফায় জলাধারের বাইরের দেওয়ালে অতিবেগুনি রশ্মি নিরোধক রঙের প্রলেপ দেওয়া শুরু হয়েছে। এই জলাধার সংস্কারের জন্য ব্যয় হবে মোট ৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ৩৩ শতাংশ, রাজ্য সরকার ৫৭ শতাংশ এবং কলকাতা পুরসভা ১০ শতাংশ টাকা দেবে। জল সরবরাহ বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্র থেকে দু’কিস্তির পর তৃতীয় কিস্তির টাকাও অনুমোদিত হয়েছে। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৪২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। তামিলনাড়ুর ‘সেন্ট্রাল ইলেক্ট্রো কেমিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ এর পরামর্শ নিয়েই যাবতীয় রঙের কাজ করছে পুরসভা।