কর্মপ্রার্থীদের কোনও চুক্তিবদ্ধ কাজে যুক্ত হবার যোগ আছে। ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। বিবাহের যোগাযোগ ... বিশদ
ঝড়ের হাত থেকে বাঁচাতে শুক্রবার প্রায় ৪০টি ট্রলারকে নামখানার পাতিবুনিয়া ও মৌসুনি ফেরিঘাটের কাছে খাঁড়ির মধ্যে নোঙর করা হয়েছিল। সেই সব ট্রলারে বাইরে থেকে মাছ ধরতে যাওয়া অনেক মৎস্যজীবী ছিলেন। কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা বিজন মাইতি সোমবার পাতিবুনিয়া খেয়াঘাট থেকে টেলিফোনে জানান, শনিবার রাতে সাগর থেকে সরে গিয়ে বুলবুল যখন নামখানায় আছড়ে পড়ে সেই সময় হাওয়ার ধাক্কা ও জলোচ্ছ্বাসে ৪০টি ট্রলারের মধ্যে দু’টি ট্রলার উল্টে ডুবে যায়। একটি ট্রলারের থাকা ২১ জন সাঁতরে ডাঙায় চলে আসেন। চন্দ্রানী নামে আরও একটি ট্রলারে থাকা ১২ জনের মধ্যে ৩ জন উঠে আসতে পারলেও ৯ জনের কোনও হদিশ ছিল না। রবিবার তল্লাশি চালানোর সময় নিখোঁজদের মধ্যে কাকদ্বীপের সঞ্জয় দাসের দেহ মেলে। সোমবার সকাল থেকে বাকি ৮ জনের খোঁজে উপকূলরক্ষী বাহিনী ও কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা টিমের সদস্যরা তল্লাশি শুরু করে। দুপুরের পর চরাতে দু’জনকে পাওয়া গেলে বাকি আরও ৬ জনের খোঁজ মেলেনি।
প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ডুবে যাওয়া ট্রলারের মধ্যে বাকিরা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তা তোলা যাচ্ছে না। কারণ, ট্রলারটি যেখানে ডুবে গিয়েছে, সেখানে ৯০ ফুট গভীর। উপকূলরক্ষী বাহিনীর ডুবুরি এলেও অত গভীরে যাওয়ার পরিকাঠামো ছিল না। সেই কারণে ট্রলার তোলা যায়নি। আজ, মঙ্গলবার ফের তল্লাশি হবে।
এদিকে, জলোচ্ছ্বাসে সাগর, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, গোসাবা, কুলতলি এলাকায় নদীবাঁধ ভেঙে গিয়েছে। কোথাও কোথাও মাটি ভেঙে সরাসরি নদীর জল বসত এলাকার মধ্যে ঢুকে গিয়েছে। ফলে আতঙ্কিত সেই সব এলাকার মানুষ। সোমবার পর্যন্ত ওই সব এলাকায় সেচ দপ্তরের কোনও আধিকারিকদের দেখা যায়নি বলে ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবনের ব্লকগুলির অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। বহু গ্রামীণ এলাকাতে এদিন পর্যন্ত গাছ কাটা ও বিদ্যুতের পড়ে থাকা খুঁটি সরানোর জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের লোকজনকে দেখা যায়নি। সব জায়গাতে সন্ধ্যার পর অন্ধকারে জনজীবন ছিল স্তদ্ধ। বিদ্যুৎ না থাকায়, মোবাইল চার্জ থেকে শুরু করে অনেক জায়গাতে পানীয় জলের হাহাকার দেখা দিয়েছে।
গোসাবা দ্বীপের দুলকি চণ্ডির মোড়ে পানীয় জল না পাওয়াতে রাস্তার ধারে মহিলাদের লম্বা লাইন দিতে দেখা গিয়েছে। ওই এলাকায় বিদ্যুতের মাধ্যমে জল সরবরাহ হয়ে থাকে। গত দু’দিন ধরে গোসাবা এলাকায় বিদ্যুৎহীন থাকায় জল আসছে না। অনেক জায়গাতে পুকুরের জল দিয়ে কাজ সারতে হচ্ছে। একই অবস্থা সাগরে। কাকদ্বীপ মহকুমা এলাকায়ও বিদ্যুৎ না থাকায় গ্রাম থেকে দলে দলে রেল স্টেশনে গিয়ে মোবাইল চার্জ দিচ্ছেন। সেখানেও লম্বা লাইন। কয়েক মাস বাদে মাধ্যমিক পরীক্ষা। বুলবুলের তাণ্ডবে কয়েকশো মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের এখন নাভিশ্বাস। এরমধ্যে অনেকের বাড়ি ভেঙে গিয়ে বইপত্র সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে সাগর থেকে কাকদ্বীপ, নামখানা থেকে বকখালি, পাথরপ্রতিমা থেকে গোসাবা, কুলতলি সব জায়গাতে বইপত্র ও মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীদের পড়াশুনা এখন লাটে। আদৌ তাদের অনেকে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিতে পারবে কি না তা নিয়ে উদ্বেগে কোথাও খোলা আকাশের তলায় কোথাও ত্রাণ শিবিরে দিন কাটছে।