কর্মপ্রার্থীদের কোনও চুক্তিবদ্ধ কাজে যুক্ত হবার যোগ আছে। ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। বিবাহের যোগাযোগ ... বিশদ
ফ্রেজারগঞ্জের শিবপুর জংশনে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের গা ঘেঁষে ভানুমতী বিশ্বাসের ঘর। রবিবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া ঘরের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আঁতিপাঁতি কী যেন খুঁজে বেড়াচ্ছেন তিনি। বাঁদিকে টালি ও দরমার বেড়া দেওয়া রান্নার ঘর জলের মধ্যে তলিয়ে গিয়েছে। চাপা পড়ে গিয়েছে রান্নার যাবতীয় জিনিস। বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো বাটি, থালা, মুড়ির কৌটো। সেদিকে তাকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলেন। বললেন, আমাদের সব ধ্বংস করে দিয়ে গিয়েছে বুলবুল। এর আগে আয়লা ও গতবছর ফনি এতটা ক্ষতি করতে পারেনি। এবার ঘর নিয়েছে। কষ্ট করে পরের জমিতে ধান ও সব্জি চাষ তাও শেষ করে দিয়েছে। ছেলে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তার খাতা, বই কিছুই আর নেই। ভানুমতীর এই হাহাকারের মধ্যে দেখা গেল, স্বামী সুখরঞ্জন এগিয়ে এসে টেনে নিয়ে গেলেন স্ত্রীকে। বললেন, কাঁদলে হবে না। ফের মাথা গোঁজার ছাউনি করতে হবে। না হলে রাতে খোলা আকাশের তলায় থাকতে হবে। একপ্রকার টানতে টানতে নতুনভাবে বাঁশ পোঁতা ও দড়ি দিয়ে ঘর তৈরির কাজে স্ত্রীকে নিয়ে গেলেন সুখরঞ্জন। সামনের দিকে কিছুটা এগতেই রাস্তার ধারে কাতারে কাতারে মহিলা, বাচ্চা ও পুরুষের জটলা দেখা গেল। দক্ষিণ শিবপুর মৌজার এই অংশে চারপাশে জল আর জল। তার মাঝে টালি আর টিনে ছাওয়া ঘরগুলি ডুবে গিয়েছে। কোথাও ভেঙে পড়েছে। কত গাছ যে পড়ে গিয়েছে তা বলা যাবে না। পাটকাটি ঘেরা পানের বরোজ ভেঙে তলিয়ে গিয়েছে। কোমর ভেঙে মুখ থুবড়ে পড়েছে কলাগাছের সারি। ভয়ঙ্কর দূশ্য হল, বিঘের পর বিঘে পাকা প্রায় পুষ্ট হয়ে ওঠা ধানের গাছ কোথাও দাঁড়িয়ে নেই। নুয়ে পড়েছে কোমর সমান জলে। সেদিকে আঙুল তুলে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা অসহায় মধুসূদন দাস, সঙ্গীতা দাস, মাধবী দাস, শঙ্কর প্রসাদ, নবকুমার গুমটা, উত্তম দাস, মৃত্যুঞ্জয় প্রামানিক, গৌতম দাস, সরবমতি, বিধান দাস, লক্ষী দাস থেকে শুরু করে কচিকাচাদের সকলে একসুরে বললেন, ওই সব ধান আর ক’দিন বাদেই ঘরে তোলা হতো। কিন্তু সব শেষ। এখানে একশোর বেশি ঘর জলে ভাসছে। কোনও জিনস বার করা যায়নি। ত্রাণ শিবিরে যাওয়ার আগেই ঝড়ের দাপটে সব এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলেছে এই তাণ্ডব। ফলে এখন কোথায় থাকব কেউ জানি না। তাই রাস্তার ধারে এসে দাঁড়িয়েছি। সেই সকাল থেকে এখানেই বসে আছি। কি হবে জানি না। এদিন সাগর, কাকদ্বীপ থেকে নামখানা, বকখালি সব জায়গাতেই এই হাহাকার শোনা গিয়েছে।