পঠন-পাঠনে আগ্রহ বাড়লেও মন চঞ্চল থাকবে। কোনও হিতৈষী দ্বারা উপকৃত হবার সম্ভাবনা। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
— John Keats
কবি জন কিটস তার কবিতায় সেই সমস্ত মানুষের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন, যাঁরা দীর্ঘদিন এই শহরের খাঁচায় আবদ্ধ, শহরের কোলাহলপূর্ণ ব্যস্ত সময় আর বিষবাষ্পে নিমজ্জিত হয়ে যাঁদের জর্জরিত প্রাণ, ক্লান্ত হৃদয় এক মুহূর্তের জন্য খুঁজে নিতে চায় এক সুনীল আকাশ, কলুষতাহীন নির্মল বাতাস, সবুজ পৃথিবী— তাঁদের কাছেই কবির আবেদন, একবার যাওয়ার জন্য শহরের শেষ প্রান্তে, কোনও সবুজের গালিচায় মোড়া গ্রামে। যেখানে নেই শহরের ধূলিমাখা বিষাক্ত কার্বন মনোঅক্সাইডের বিষবাষ্পপূর্ণ বাতাস, শব্দদূষণের মতো দানবের আস্ফালন। বরং সেখানে আছে নীল আকাশ, নির্মল বাতাস, সবুজ ঘাসে মোড়া এক অনাবিল প্রকৃতি।
আর এমনই এক সবুজের গালিচায় মোড়া পৃথিবীতে যদি থাকে উত্তাল বঙ্গোপসাগরের ঊর্মিল হাতছানি, যদি থাকে সোনালি বালুকাবেলার দুরন্ত আকর্ষণ, তবে তো সোনায় সোহাগা, বিশেষ করে ঘন বর্ষার মরশুমে যখন সুনীল সাগরের জলে নেমে আসে বারিধারা, তখন সে যেন হয়ে ওঠে শিল্পীর ক্যানভাসে আঁকা এক ছবি, সেই ছবি দেখতে দেখতে মন যেন নিজ থেকেই গেয়ে ওঠে ‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা’। হ্যাঁ। এমনই এক জায়গার নাম মন্দারমণি, কলকাতার খুব কাছে, দিঘার সামান্য আগে এক সুন্দর সমুদ্র সৈকত।
বছর পনেরো-কুড়ি আগেও এই মন্দারমণি ছিল পূর্ব মেদিনীপুরের এক অখ্যাত গ্রাম। কিন্তু আজ আপন রূপের কারণেই সে মন জয় করে নিয়েছে আপামর প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকের।
আদি-অন্ত বিস্তৃত বঙ্গোপাসাগরের ফেনিল ঊর্মিমালা এখানে আঁছড়ে পড়ে সোনালি বালুকাবেলায়, মাঝ সমুদ্রে দেখা মেলে পাল তোলা নৌকার, কখনও কখনও বা মাছ ধরতে গভীর সমুদ্রে যাওয়া ট্রলারের। বিস্তীর্ণ তটভূমির সোনালি বালুকার বুকে যখন সূর্যের আলো ঠিকরে পড়ে তখন কেমন যেন কল্পরাজ্য বলে ভ্রম হয়। আবার কখনও বা দুরন্ত হাওয়া আলপনা এঁকে দিয়ে যায় সেই বালুকা রাশির বুকে। আর চাঁদনি রাত হলে তো কথাই নেই। সমগ্র বেলাভূমিই তখন পৃথিবীর বুকে একটুকরো স্বর্গ হয়ে দেখা দেয়।
ইচ্ছে হলে মন্দারমণি থেকে ঘুরে আসা যায় আরও এক নির্জন সুন্দর সমুদ্র সৈকত তাজপুর থেকেও। কলকাতা থেকে দিঘাগামী যে কোনও বাসে এসে নামতে হবে চাউলখোলা (কাঁথির পরে)। চাউলখোলা থেকে প্রায় ১৩-১৪ কিমি পথ মন্দারমণি। যাচ্ছে টোটো, ট্রেকার প্রভৃতি। ট্রেনে এলে নামতে হবে কাঁথি বা কন্টাই। সেখান থেকে গাড়িতে মন্দারমণি।
এবার ফেরার পালা। ফিরতে তো হবেই। কিন্তু সঙ্গে যদি নিয়ে আসা যায় দুটো দিনের সমুদ্রের লোনা হাওয়ায় ভেজা সবুজ একটা শরীর-মন, ক্ষতি কী?
তথ্য— কলকাতা থেকে দিঘাগামী পথে চাউলখোলার দূরত্ব সড়কপথে ১৬২ কিমি। বাসে সময় লাগে প্রায় ৪ ঘণ্টা। মন্দারমণিতে থাকার জন্য আছে অজস্র বেসরকারি হোটেল। এখানকার প্রায় সব হোটেলেই খাওয়ার ব্যবস্থা আছে।
বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী