কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ। যোগাযোগ রক্ষা করে চললে কর্মলাভের সম্ভাবনা। ব্যবসা শুরু করলে ভালোই হবে। উচ্চতর ... বিশদ
কেমন আছেন? নতুন বছরের শুভেচ্ছা
কাকলী: আপনাকে আর আপনাদের পত্রিকাকে আমাদের তরফ থেকে উষ্ণ অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা।
এবছরের পালার বিষয়বস্তু কী?
অনল: এটাতে মূলত সমাজের দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে। প্রেক্ষাপটটা যদিও পরিবারিক ধাচায় বাঁধা হয়েছে, কিন্তু মূল বিষয়টি হল কিছু রাজনৈতিক অসৎ মানুষ আমাদের চারপাশে ঘুরছে প্রতিদিন, তারা নিজেদের স্বার্থের জন্য কোনও কিছু খারাপ কাজ করতেও পিছপা হন না। মানুষ ক্রমশ অর্থলোভী হয়ে উঠছে, পরিবারগুলোর ওপর এবং পারিবারিক দৈনন্দিন জীবনে তার প্রভাব পড়ছে সাংঘাতিকভাবে। মূলত এই বিষয়বস্তুর ওপরেই তৈরি ‘চাপাডাঙ্গার বউ’।
আপনাদের পালায় একটা ইতিবাচক বার্তা সবসময়ই থাকে। এত বছরে তার কি কোনও প্রভাব গ্রামবাংলার মানুষের উপর পড়েছে?
অনল: হ্যাঁ, পড়েছে। শো শেষ হলে গ্রিনরুমে এসে বলে, যা দেখালেন একটুও কাটবেন না, এমনকি কোনও রাজনৈতিক চাপেও না। সরকার তার মতো করে উন্নয়নের কাজ করছে। কিন্তু যাদের দিয়ে করাবে তারা যখন দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পরে তখনই হয় সমস্যা, আর সেগুলো যখন মঞ্চে দেখাই তখন সংঘাতিক প্রভাব পড়ে দর্শকদের মধ্যে।
কাকলী: আমরা সরাসরি রাজনীতি না করলেও আমাদের জীবনের প্রতি মুহূর্তে রাজনীতি জড়িয়ে থাকে। সেগুলো সামনে থেকে মঞ্চে দেখতে পাই। সাংঘাতিক প্রভাব পড়ে।
দীর্ঘ বাইশ বছর একসঙ্গে কাজ করছেন এই জার্নিটার অভিজ্ঞতা কী?
কাকলী: টলিউড-বলিউড, থিয়েটার, সিনেমা, যাত্রা কোথাও টানা বাইশ বছর একসঙ্গে কাজ করা এই ইতিহাস বোধহয় আর কোথাও নেই। আসলে আমাদের এই জুটির গ্রহণযোগ্যতা মানুষের মধ্যে এমনভাবে মিশে আছে সেটা ভাবা যায় না। মানুষ এসে বলে আমাদের এই জুটি আমরা ভাঙতে দেব না। মানে আমাকে অন্য কোনও নায়কের সঙ্গে আর অনলকে অন্য কোনও নায়িকার সঙ্গে মানুষ আর মেনে নেবে না। শুরুতে আমরা ১০ বছর যে যার মতো আলাদাভাবে কাজ করছিলাম। ১৯৯৭ সালে সত্যনারায়ণ অপেরার শীর্ষ শিল্পী হিসেবে আমি নির্বাচিত হলাম। আমাকে নায়কের লিস্ট দেখানো হয়েছিল। আমি অনলের কথা বলেছিলাম। কারণ ওর ডেডিকেশন, ভদ্র ব্যবহার, শান্ত স্বভাব দেখে আমার মনে হয়েছিল এটা একটা লম্বা জুটি হয়ে উঠতে পারে ভবিষ্যতে। ওর একটি সংঘাতিক ইমেজ ছিল। ‘মেনকা মাথায় দিলো ঘোমটা’ থেকেই জার্নি শুরু হল। দারুণ জনপ্রিয়তা পেলাম। সেই থেকে এখনও অবধি আমরা মানুষের মনের মণিকোঠায়।
এখন যদি জুটিটা ভেঙে যায় তাহলে কি আর কাজ করবেন না?
কাকলী: দেখুন কাজ তো করতেই হবে। কিন্তু আলাদা হওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। কারণ আলাদা হলে আমাদেরই ক্ষতি। ক্ষতিটা মানসিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং যাত্রা শিল্পের ক্ষতি। আমি অনলের নিঃশ্বাস হলে অনল আমার প্রশ্বাস, যদি মরে যাই তখন তো আলাদা হতেই হবে। সেই পর্যন্ত একসঙ্গেই আছি।
আপনিও কি এরকমটাই ভাবেন অনলবাবু?
অনল: দেখুন শুরু করেছিলাম নায়ক-নায়িকা হিসেবে। এখন আমরা চরিত্র অভিনেতা। আমাদের ইচ্ছে দাদু-দিদার চরিত্রে অভিনয় করে এই জুটি শেষ করা। প্রথমে খুব নার্ভাস ছিলাম। আমার নায়িকা কাকলী চৌধুরী। মনে আছে—পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড় যাচ্ছি একই গাড়িতে, হঠাৎ ট্রাক থেকে কিছু লোক নেমে গাড়িটাকে ঘিরে ধরল আর স্লোগান দিতে থাকলো কাকলী! কাকলী! কাকলী! কাকলী!... ভাবুন আমার কী চাপ তখন। আমার তো কোনও ইমেজই নেই। ইন্দাসের মাঠে শোয়ের পর কাকলী গান গাইছে, আমি পাশে দাড়িয়ে, হঠাৎ করে আমাকে লক্ষ্য করে দর্শকরা বলতে শুরু করলো আমরা আপনার অভিনয় দেখতে আসিনি, আমরা কাকলীদিকে দেখতে এসেছি। ভাবছিলাম কী করা যায়! একটা কনট্রাস্ট তৈরি করলাম। ওর বিপরীত স্টাইলে অ্যাকটিং শুরু করলাম। আর সেখানেই সাফল্য পেলাম। এখন মানুষ এই কনট্রাস্টটাই দেখতে চায়।
তার মানে কাকলী চৌধুরী এখানটায় জুটি তৈরি করলেন।
অনল: না, এখানেই শেষ নয়। আমাকে নাট্যকার বা পালাকার হিসেবে একটা বিরাট সুযোগ দিয়েছিলেন উনি। ওর অনুপ্রেরণাতেই প্রত্যেক বছর যাত্রা লিখেছি। একের পর এক হিট দিয়েছি।
রাজকাপুর-নার্গিস, উত্তম-সুচিত্রা আর যাত্রায় অনল-কাকলী রসায়নটা কী?
(দু’জনের সমবেত হাসি...)
কাকলী: রসায়নটা কী সেটা বলতে পারব না। তবে এটা বলতে পারি যে মানুষ মেনে নিয়েছে, মানুষ আমাদের পাশাপাশি দেখতে পছন্দ করে।
আপনাদের ঝগড়া হয় না? বা মতবিরোধ?
কাকলী: মতবিরোধ হয় নাটক নিয়ে। সিরিয়াস ঝগড়া কখনও হয়নি। যা মনমালিন্য হয় তা নাটকের দৃশ্য নিয়ে আর সেই মনমালিন্য থেকে আরও ভালো কিছু সৃষ্টি হয়। ওকে খোঁচা দেওয়ার একটা লোক দরকার। আমি সেই লোক। ওকে খোঁচালেই ও দুরন্ত সৃষ্টি করে। ওর লেখাটা ভালো হলে পৃথিবীতে আমার থেকে বেশি খুশি আর কেউ হবে না। আমাদের মধ্যে কোনও ইগো নেই। যার জন্য বাইশ বছর। বাইশ বছর আজকাল অনেক সংসারও টেঁকে না।
গ্রুপ থিয়েটারের সঙ্গে সংঘাতটা কোথায়? ডাক আসেনি কখনও?
কাকলী: না ডাকে না। আমাদের দেখলে ওঁরা একটু নাক সিঁটকোন। সেটা কোন জানি না। তবে হ্যাঁ আমাদের সময়ও নেই। অনেকেই ভেবেছিল, আমাদের নিয়ে চন্দন সেন আবার ভেবেছিলেন।
অনল: কেন থিয়েটার করব? যাত্রা অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। নাটক তো কিছু শহুরে মানুষের জন্য।
এটা কি ক্ষোভের কথা?
অনল: না, আমার ক্ষোভ মিডিয়ার বিরুদ্ধে। মিডিয়া আমাদের বিষয়ে কোনও দিনও ভাবেইনি। কিন্তু গ্রুপ থিয়েটারকে নিয়ে নিয়মিত ভাবেন তাঁরা। আপনাকে আর আপনাদের বর্তমান পত্রিকাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, বাইশ বছরে এই নিয়ে চারবার কেউ আমাদের কথা বলছে। মানুষ আমাদের শেষ কথা।
আপনি তো একটা সময় বামপন্থীদের নিয়ে অনেক সমালোচনা করেছেন।
অনল: (চুপ অনেকক্ষণ) হ্যাঁ করেছি! যাত্রার মধ্যে দিয়ে। তখন মাওবাদী সমস্যা পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর, কিন্তু বামপন্থী নেতারা তার জন্য আমাকে কোনও বাধা দেননি।
এই সরকার কী ভাবছে যাত্রা নিয়ে?
অনল: পেনশন চালু করেছে এককালীন, অবসরপ্রাপ্ত শিল্পীদের সম্মান দিয়েছেন। যাত্রা উৎসবকে আগের থেকে প্রাণচঞ্চল করা, আগে পারমিশনের খুব ঝামেলা ছিল। এখন সেটা নেই।
যাত্রাশিল্পের ভবিষ্যত কী?
কাকলী: ভবিষ্যত বলতে কী বলতে চাইছেন?
বলতে চাইছি থিয়েটার অনেক এগিয়ে গিয়েছে। মঞ্চে বৃষ্টি পড়ছে দেখানো হয়, যাত্রা এখনও ওই রস্ট্রাম আর মাইকে পড়ে আছে?
অনল: বিজ্ঞান যেভাবে এগিয়ে চলেছে যাত্রা যদি তার সঙ্গে সঙ্গত করতে না পারে তাহলে যাত্রা আরও ব্যাকফুটে চলে যাবে। আমরা শুধু অভিনয়টাকে আধুনিক করতে পেরেছি। আপনি যেটা বলছেন সেটা প্রযোজকদের ভাবনা।
এত ব্যস্ততায় ব্যক্তিগত জীবনগুলো কেমন?
অনল: আমরা পারিবারিক বন্ধু। ওর মেয়েকে আঠারো মাস বয়স থেকে দেখছি। এখন সে চাকরি করে। আসলে ক’ দিনের জন্য বাড়ি ফিরি। প্রচুর কাজ জমে থাকে। বাইরে থাকলেই ভালো থাকি। খাওয়া, ঘুম আর অভিনয়।
কাকলী: যাত্রা ছাড়া আমার আর কোনও কাজ নেই। ওটাই আমার ফুড।