কর্মক্ষেত্রে অশান্তির সম্ভাবনা। মাতৃস্থানীয় কার শরীর-স্বাস্থ্যের অবনতি। প্রেমে সফলতা। বাহন ক্রয়-বিক্রয়ের যোগ। সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় উন্নতি।প্রতিকার: ... বিশদ
(পেড্রো, রোমারিও) (লালডানমাওইয়া)
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আই লিগের খেতাব নির্ধারণে অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ৪৮ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থেকেও হেরে গেল ইস্ট বেঙ্গল। সেই সঙ্গে আলেজান্দ্রোর দলকে হারিয়ে আই লিগ খেতাব জয়ের দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে গেল চেন্নাই সিটি এফসি। পিছিয়ে পড়ে দুরন্ত প্রত্যাঘাতে তিন পয়েন্ট তুলে নেওয়ায় নওয়াজ আকবরের দলের পয়েন্ট গিয়ে দাঁড়াল ১২ ম্যাচে ২৭। জাতীয় লিগ কিংবা আই লিগের অতীত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যতগুলি ম্যাচ হয় তার দ্বিগুণ পয়েন্ট সংগ্রহ করলেই খেতাব জয় নিশ্চিত। তাই বাকি আট ম্যাচে ১৩-১৪ পয়েন্ট পেলে চেন্নাই সিটি এফসি অন্য দলগুলির ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে বলে ফুটবল মহল মনে করছে। এদিনের হারে ইস্ট বেঙ্গলের পয়েন্ট হল ১১ ম্যাচে ১৯। পয়েন্ট নষ্টকে ভিত্তি ধরলে এক নম্বরে থাকা চেন্নাইয়ের থেকে পাঁচ পয়েন্ট‘পিছিয়ে’ গেল ইস্ট বেঙ্গল। ম্যাচের সূচনায় গোল পেয়ে যাওয়ায় কোয়েম্বাটোর থেকে এক পয়েন্ট নিয়ে ফেরা উচিত ছিল ইস্ট বেঙ্গলের। অ্যাওয়ে ম্যাচে আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া একটা বড় ফ্যাক্টর। কিন্তু মাত্র ২৩ ঘণ্টা আগে পৌঁছে ম্যাচ খেলতে নামার মধ্যে আলেজান্দ্রোর পরিকল্পনাহীনতাই চোখে পড়েছে। তাঁর বোঝা উচিত ছিল ভুবনেশ্বর ও কোয়াম্বাটোরের দূরত্বর মধ্যে বিশাল ফারাক আছে। আই লিগে ছটি ম্যাচ পর হারল ইস্ট বেঙ্গল। আপাতত তারা ছয় নম্বরে। তবে শুক্রবার ইন্ডিয়ান অ্যারোজকে যুবভারতীতে হারাতে পারলে লিগ টেবলে অনেকটাই উপরে উঠে আসবে লাল-হলুদ।
সোমবার ম্যাচের প্রথমার্ধের প্রথম ২০ মিনিট ইস্ট বেঙ্গলের আধিপত্য ছিল। তারপর মাঠ জুড়ে শুধুই চেন্নাই। সার্বিক বল পজেশন ৫৯ শতাংশ। মাঠে চেন্নাইয়ের খুব বেশি সমর্থক ছিল না। গ্যালারিতে দেখা গেল কলকাতা থেকে যাওয়া বেশ কিছু সমর্থকদের। ম্যাচে ৯ মিনিটেই তাঁদের মুখে দেখা গেল চওড়া হাসি। ইদানীং প্রতি ম্যাচেই সেটপিস থেকে গোল পাচ্ছে ইস্ট বেঙ্গল। এদিনও দেখা গেল সেই ছবি। ডানপ্রান্ত থেকে লালরিনডিকার সেন্টারে পিছন থেকে ছুটে এসে চেন্নাইয়ের স্প্যানিশ স্টপার রবার্তোকে টপকে কোনাকুনি হেড নেন বোরহা। সেই হেডটিকে ফলো-আপ করে চমৎকার পুশে ইস্ট বেঙ্গলকে এগিয়ে দেন লালডানমাওইয়া রালতে (১-০)। আই লিগে এটি তাঁর চতুর্থ গোল। মরশুমে দু’টি ম্যাচে মোহন বাগানের বিরুদ্ধে গোল আছে তাঁর। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গোল করার সুঅভ্যাস রপ্ত করেছেন এই পাহাড়ি ফুটবলারটি। অপর প্রান্তিক হাফ কোলাডো খেলতে না পারলেও তাঁকে কেন দ্বিতীয়ার্ধে আলেজান্দ্রো বসিয়ে দিলেন বোঝা গেল না। তাও বালি গগনদীপ? সে কোনও স্ট্রাইকারের পর্যায়ে পড়ে?
গত মরশুমে আই লিগের শেষ দিকে দায়িত্ব নেন সিঙ্গাপুরে কোচিং করানো আকবর। তাঁর পুরানো ক্লাবের স্প্যানিশ সহকারীর সঙ্গে গত এপ্রিলে স্পেনে গিয়ে ৪০ দিন ধরে খেলা দেখে স্যান্ড্রো-নেস্টর-পেড্রো-রবার্তোকে নিয়ে আসেন। সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব নিয়ে আলেজান্দ্রোও চার স্প্যানিশ নিয়ে এসেছেন। তবে চেন্নাইয়ের স্প্যানিশ গ্রুপটি গত আট মাস একসঙ্গে প্র্যাকটিস করায় আই লিগের দুটি ম্যাচেই আলেজান্দ্রোর স্প্যানিশ গ্রুপকে টেক্কা দিল। যুবভারতীতে তো দাঁড়াতেই দেয়নি। এদিন প্রথম ২০ মিনিট টনি ডোভালে- কোলাডোদের মেপে নিয়ে বাকি সময়ে পাসিং ফুটবলে তাঁরা ‘ফুল’ ফোটালেন ঘরের মাঠে। ইস্ট বেঙ্গল রক্ষণের সঙ্গে মাঝমাঠের ‘গ্যাপ’ কমিয়ে দিতে কাসিম আইদারা বড় ভূমিকা নেন। কিন্তু মাঝমাঠে তাঁর স্প্যানিশ সঙ্গী কোলাডো ও টনি ডোভালেকে তো দ্বিতীয়ার্ধে খুঁজেই পাওয়া গেল না।
৬০ মিনিটে লালরিনডিকা রালতে মাথা গরম করে হলুদ কার্ড দেখেন। সেই সঙ্গে তিনি ছন্দ হারান। মাঝমাঠে বল দখলের লড়াইয়ে কোলাডোর মুখে অনিচ্ছাকৃত আঘাত করেন শ্রীরাম। ডিকা তাঁকে চড় মারেন। রেফারি তো দেখতেই পাননি। সহকারী রেফারির পরামর্শে হলুদ কার্ড দেখান। ডিকা লাল কার্ডও দেখতে পারতেন। রেফারিং খুব ভালো হয়নি।
৪৮ মিনিটে ইস্ট বেঙ্গল কিছুটা দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রথম গোলটি খায়। স্যান্ড্রোর ব্যাক সেন্টার ধবে ২৫ গজের জোরালো শট নেন পেড্রো মানজি। বোরহার বাড়ানো পায়ে লেগে গতি পরিবর্তন করে বল জালে জড়িয়ে যায় (১-১)। গোলরক্ষক রক্ষিত ডাগারের কিছুই করার ছিল না। এই গোলটিই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। ৭৮ মিনিটে চেন্নাইয়ের জয়সূচক গোলটির জন্য মনোজ মহম্মদ অনেকটাই দায়ী। বাঁ-প্রান্তে তিনি চেন্নাইয়ের প্রান্তিক হাফ প্রমিত রাজুর সঙ্গে এঁটে উঠতে পারছিলেন না। প্রথমার্ধে দু’বার মনোজকে কাটিয়ে প্রমিত মাইনাস করেন যা সহখেলোয়াড়রা ধরতে পারেননি। এবার মনোজকে কাটিয়ে তাঁর বাড়ানো বলে জনি ও বোরহার মাঝখান দিয়ে শট নিয়ে ২-১ করেন চেন্নাইয়ের রোমারিও। শেষ দিকে, আইদারার শট ও ব্র্যান্ডনের হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।